বেসবল ছেড়ে আইপিএলের স্বপ্ন

>
ব্যাট হাতে অ্যাকশনে কিমুরা। ছবি: জাপান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন
ব্যাট হাতে অ্যাকশনে কিমুরা। ছবি: জাপান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন

জাপানের বেসবল কিংবদন্তি শোমো কিমুরা এখন ক্রিকেটার। স্বপ্ন দেখেন আইপিএলে খেলার

অনেক ক্রিকেটার বয়স ৩৮ হওয়ার আগেই অবসর নেন। তবে শোমো কিমুরার মতো কেউ কেউ আবার এ বয়সে ক্যারিয়ার শুরুও করেন! শুরু বলতে অন্য খেলায় ক্যারিয়ার শেষ করে ক্রিকেটের হাতেখড়ি নেওয়া আরকি। শোমো কিমুরা তো এই শুরুর পর আইপিএলে খেলার স্বপ্নও দেখছেন এখন!

অবিশ্বাস্য লাগাই স্বাভাবিক, তবে এটা কাল্পনিক কিছু নয়। বেসবলের খোঁজখবর যাঁরা রাখেন, তাঁরা জাপানের শোমো কিমুরার নাম শুনলেও শুনতে পারেন। জাপানের বেসবল কিংবদন্তি তিনি। ৩০ বছর বেসবল খেলেছেন জাপানে। দেশটিতে পেশাদার বেসবল লিগ খেলেছেন ২০০৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। ইয়োকোহামা বেস্টারস, হিরোশিমা কার্পস ও সেইবু লায়ন্স ছিল তাঁর দল। শেষ দলটি জাপানের পেশাদার বেসবল লিগে দ্বিতীয় সর্বোচ্চবার চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু জাপানের বেসবল আঙিনায় কিংবদন্তিতুল্য এই কিমুরাই এখন মজেছেন ক্রিকেটে।

শোমো কিমুরা। বেসবল ছেড়ে এখন ক্রিকেটে। ছবি: জাপান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন।
শোমো কিমুরা। বেসবল ছেড়ে এখন ক্রিকেটে। ছবি: জাপান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন।

২০১৭ সালে তাঁর সঙ্গে আর চুক্তি নবায়ন করেনি সেইবু লায়ন্স। কিমুরার বয়স এখন ৩৯ বছর। ইচ্ছা করলেই কোচিংয়ে নামতে পারতেন তিনি। কিন্তু বেসবল ছাড়তে চাইলেও খেলা ছাড়তে চাননি। কিমুরার ভাষায়, ‘বেসবল কোচ হওয়ার প্রস্তাব পেয়েছিলাম। কিন্তু নিজেকে তখনো অ্যাথলেট মনে হয়েছে। ক্রিকেট খেলাটা মনে ধরেছিল। তখন খেলাটি নিয়ে তেমন কিছু জানতাম না তাই ভিডিও দেখতে শুরু (এর মধ্যে শচীন টেন্ডুলকারের ব্যাটিংয়ের ভিডিও ছিল) করি। বিশ্বাস ছিল, বেসবলের দক্ষতা ক্রিকেটে রূপান্তর করা সম্ভব।’

তবে ক্রিকেট শিখতে গিয়ে কিমুরাকে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। একবার ইয়র্কার ডেলিভারি সামলাতে গিয়ে তাঁর পায়ের আঙুলের মাথা ভেঙে গিয়েছিল। তবে চেষ্টা মানুষকে অনেক দূর নিতে পারে। ২০১৮ সালের মে মাসের দিকে জাপানের অন্যতম সেরা ২০ ক্রিকেটারের তালিকায় উঠে এলেন কিমুরা। বলে রাখা ভালো, আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি র‌্যাঙ্কিংয়ে ৫৬তম দল জাপান এ সংস্করণে ম্যাচের আন্তর্জাতিক মর্যাদা পায় গত বছরের ১ জানুয়ারির পর থেকে। ২০১৮ সালের মে মাসে জাপান জাতীয় দলের ২০ জনের স্কোয়াডে ডাক পান কিমুরা। ক্রিকেটার হিসেবে তাঁকে পছন্দ করেছিলেন জাপান দলের সঙ্গে কাজ করা ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার (সিএ) ট্রেনার ক্যামেরন ট্রাডেল।

গত সেপ্টেম্বরে জাপান জাতীয় দলের হয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে অভিষেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান কিমুরার। এর মধ্যে আইপিএল দেখতে ভারতেও গেছেন। স্টেডিয়ামে বসে দেখেছেন কিছু ম্যাচ। কিমুরা তখনই মনের ভেতর একটা ডাক শুনতে পান, ‘আইপিএলের ম্যাচগুলো দেখার সময় বুঝতে পারলাম, গ্যালারিতে বসে থাকার চেয়ে আমার মাঠে খেলতে বেশি ইচ্ছা করছে। আমার আরও অভিজ্ঞতার প্রয়োজন। ব্যাটিংয়ে আরও বেশি সময় দিতে হবে। ব্যাটিং করার জন্য টি-টোয়েন্টি অনেক কঠিন খেলা। তাই অভিজ্ঞতাটা এখানে গুরুত্বপূর্ণ।’

আইপিএলে বিরাট কোহলির খেলা দেখে মুগ্ধ কিমুরা। দিল্লি ও মুম্বাইয়ে গিয়েছেন মাঠ দেখতে। ভারতে ক্রিকেটের জনপ্রিয়তা তাঁকে ভীষণ টানে। আইপিএলে খেলার স্বপ্ন দেখলেও তা কতটা বাস্তবসম্মত, সেটি না হয় সময়ের হাতেই তোলা রইল। কিন্তু মানুষ যে তাঁর চেষ্টা ও স্বপ্নের সমান বড়, কিমুরা তা জলজ্যান্ত উদাহরণ।