টি-টোয়েন্টি শিখবে কবে বাংলাদেশ?

পাকিস্তানে ভালো করতে পারছে না বাংলাদেশ দল। ছবি: বিসিবি
পাকিস্তানে ভালো করতে পারছে না বাংলাদেশ দল। ছবি: বিসিবি

সাত ওপেনার নিয়ে পাকিস্তানে গেছে বাংলাদেশ, সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ মিলে খেলেছেন পাঁচ ওপেনার। তবে দুই ম্যাচেই ওপেন করেছেন তামিম ইকবাল ও মোহাম্মদ নাঈম। সর্বশেষ বিপিএলে স্ট্রাইক রেট বিচারে শীর্ষ ওপেনারের মধ্যে নাঈম ছয়ে (১১৫.৪৩) তামিম সাতে (১০৯.৩৯)। বাকি তিনজনের মধ্যে কাল দ্বিতীয় ম্যাচে দলের ব্যাটিং অর্ডারে লিটন নেমেছেন চারে, আফিফ পাঁচে ও সৌম্য সরকার সাতে। অথচ বিপিএলে স্ট্রাইক রেটে শীর্ষ ওপেনারদের মধ্যে সৌম্য দুইয়ে (১৪০.২৫), লিটন তিনে (১৩৮.২৬) ও আফিফ পাঁচে (১৩১.৩৮)। বিপিএলে স্ট্রাইক রেটের বিচারে ওপেনারদের মধ্যে যিনি শীর্ষে সেই নাজমুল হোসেন (১৪৫.২৮) দুই ম্যাচের একটিতেও জায়গা পাননি একাদশে।

প্রথম ম্যাচের মতো দ্বিতীয় ম্যাচেও একই ধরনে ব্যাট করেছেন ব্যাটসম্যানরা। বিপিএল মানে ‘আখড়া’য় ডন-বৈঠক মেরে মূল মঞ্চে গিয়ে সবাই যেন কুস্তির প্যাঁচ-ভোলা পালোয়ান! টি-টোয়েন্টি ব্যাটিংয়ের মৌলিক সুরটাই ছিল না। প্রথম ম্যাচে ব্যাটিংয়ে ‘ডট’ বল ছিল ৪৫, দ্বিতীয় ম্যাচে ৪৭। ৬ ওভারের পাওয়ার প্লে-তে প্রথম ম্যাচে ডটসংখ্যা ২২, দ্বিতীয় ম্যাচে ২০। এদিকে দুই ম্যাচের ইনিংস মিলিয়ে উইকেট হাতে থাকে ৯টি (১৪১/৫ এবং ১৩৬/৬)।

কালকের ইনিংস টেনেছেন তামিম। ৫৩ বলে ৬৫। স্ট্রাইক রেট ১২২.৬৪। ফিফটি পেয়েছেন ১৬তম ওভারে। টি-টোয়েন্টিতে দলীয় ইনিংসের ওভার বিচারে তামিমের ক্যারিয়ারে দ্বিতীয় মন্থরতম ফিফটি। আগের ম্যাচে ১৩টি ডট বল খেললেও কাল ১৬টি। এর মধ্যে পাওয়ার প্লেতে ছিল ৮টি ডট—সেট হতে সময় নেওয়ার প্রমাণ, অথচ পাওয়ার প্লে-তেই রান তোলার সুযোগ থাকে সবচেয়ে বেশি। নাঈম প্রথম বলে আউট হওয়ার পর তিন ও চার নম্বর ব্যাটসম্যানের বলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তুলে ইনিংস গড়ার কথা। সেখানে তিনে নামা মেহেদী ১২ বলে করেছেন ৯ রান, যেখানে ডট বলই ৮টি। এর চেয়েও দৃষ্টিকটু হলো তিনে নামা ব্যাটসম্যানের কাছ থেকে অমন বিদ্‌ঘুটে পুল—যা লেজের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে দেখা যায়। চারে নামা লিটন ১৪ বলে করেছেন ৯ রান, ডটসংখ্যাও ৯। এরপর দলের ইনিংসের আর কী থাকে?

কাল ১৫ ওভার পর্যন্ত (৮৮/৪) রানরেট ছিল ৫.৮৬। শেষ ৩০ বলে উঠেছে ৪৮। শেষের ব্যাটসম্যানদের দায় তাই অতটা নেই, যতটা টপ অর্ডারের। এমনকি মোস্তাফিজুর রহমান ছাড়া বোলারদের দায়ও সেভাবে চোখে বিঁধছে না। প্রথম ম্যাচে ১৪১ তুলে পাকিস্তানি ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে ডট আদায় হয়েছে ৩৩টি (৩ বল বাকি ছিল)। কাল ২০ বল হাতে রেখে ৯ উইকেটে জিতেছে পাকিস্তান। এ ম্যাচে বোলারদের ঝুলিতে ডটসংখ্যা ৩১। উইকেট ফেলতে না পারলেও চেষ্টা যে ছিল, তা পরিষ্কার। শুধু মোস্তাফিজকে নিয়ে পুরোনো প্রশ্নটা থেকেই যাচ্ছে।

কাল তাঁর বোলিং বিশ্লেষণ ৩-০-২৯-০। ডট মাত্র ৪টি। আগের ম্যাচে ৪-০-৪০-১। ডট মাত্র ৭টি। অথচ কয়েক বছর ধরে এই মোস্তাফিজকেই বলা হচ্ছে ‘ডেথ ওভারে’ দেশসেরা বোলার। বিপিএলে মুশফিক তো বলেছেনই, শেষ ওভারে লক্ষ্য যা-ই থাক মোস্তাফিজের হাতেই বল তুলে দেবেন। মাশরাফির ভাষায়, মোস্তাফিজের (সামর্থ্যের) অর্ধেক কেউ নেই এ দেশে। এটা সত্যি, বিপিএলে এই মোস্তাফিজই সেরা বোলার—১২ ম্যাচে ২০ উইকেট। ইকোনমি রেট ৭.০১। কিন্তু পাকিস্তানের মাটিতে দুই ম্যাচ মিলিয়ে ১ উইকেট আর ইকোনমি রেট ১০.০০ ও ৯.৬৬।

আখড়া ও মূল মঞ্চের পার্থক্যটা এখানেই।