রোনালদোর কথা রোনালদিনহোকে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে তরুণ

আর্সেনালের হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন মার্তিনেল্লি। ছবি : এএফপি
আর্সেনালের হয়ে আলো ছড়াচ্ছেন মার্তিনেল্লি। ছবি : এএফপি
এই মৌসুমে আর্সেনালে নতুন এসেছেন ব্রাজিলের স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লি। এ পর্যন্ত ২১ ম্যাচ খেলে সব মিলিয়ে করেছেন ১০ গোল। তরুণ এই স্ট্রাইকারের মধ্যে ব্রাজিলের কিংবদন্তি স্ট্রাইকার রোনালদোর ছাপ দেখতে পাচ্ছেন আরেক কিংবদন্তি রোনালদিনহো 

এই মৌসুমের আগে কয়জনই-বা চিনত গ্যাব্রিয়েল মার্তিনেল্লিকে?

খেলতেন ব্রাজিলের এক অখ্যাত ক্লাব ইতুয়ানোর হয়ে। সেখান থেকে বছর দু-এক আগে এসেছিলেন ম্যানচেস্টারে। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে ট্রায়াল দিতে এসেছিলেন, ইউনাইটেডের পছন্দ হয়নি তাঁকে। তাদের ছুড়ে ফেলা রত্নটাই এখন মহার্ঘ হয়ে ধরা দিয়েছে আরেক ইংলিশ ক্লাব আর্সেনালের কাছে। আঠারো বছর বয়সী এই তারকাই এখন আর্সেনালের আক্রমণভাগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ। নিয়মিত গোল করছেন, করাচ্ছেন। আর্সেনালের কোচ মিকেল আরতেতা এখনো মূল একাদশে তাঁকে নিয়মিত না খেলালেও নিজের জাত চেনাতে কখনোই ভোলেন না মার্তিনেল্লি।

আঠারো বছর বয়সেই প্রতিভা আর আত্মবিশ্বাসের এই বিচ্ছুরণ দেখে মুগ্ধ হয়ে গেছেন সাবেক ব্রাজিল কিংবদন্তি রোনালদিনহো। মার্তিনেল্লির সঙ্গে তুলনা দিয়েছেন আরেক কিংবদন্তি রোনালদোর, আমরা ব্রাজিলিয়ানরা ওর ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেক রোমাঞ্চিত। আঠারো বছর বয়সে শুধু প্রতিভা থাকাটা এক জিনিস, আর সেই প্রতিভাকে নিয়মিত পারফরম্যান্সে অনূদিত করা ভিন্ন জিনিস। ওর মধ্যে সে আত্মবিশ্বাসটা দেখতে পাচ্ছি আমরা। ওর মধ্যে আমি রোনালদোর ছায়া দেখতে পাচ্ছি। রোনালদো যখন ইউরোপে এল, প্রথম মৌসুমেই ৩০ গোলের মতো করেছিল। সবাই তখন বলাবলি করা শুরু করল, আঠারো বছর বয়সী ব্রাজিলের এই তরুণটা কে?

রোনালদোও ইউরোপে এসে এমন ভয়ডরহীন খেলা খেলতেন। ক্রুজেইরোর হয়ে আলো ছড়িয়ে ১৯৯৪ সালে যোগ দেন ডাচ ক্লাব পিএসভি আইন্দহফেনে। সেখানে ৪৬ ম্যাচে ৪২ গোল করে দুই বছর পর বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হয়ে যোগ দেন বার্সেলোনায়। সেখানে এক মৌসুমে ৩৭ ম্যাচ খেলে করেন ৩৪ গোল। বলতে গেলে গোলমেশিনই ছিলেন রোনালদো। এই মার্তিনেল্লির মধ্যেও রোনালদোর সেই অদম্য গোলক্ষুধা দেখতে পাচ্ছেন রোনালদিনহো, রোনালদো মাঠের মধ্যে সব সময় নিজের কাছে বল চাইত। প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের তটস্থ করে রাখত। কার বিপক্ষে খেলছে, কোন দলের বিপক্ষে খেলছে, এসব নিয়ে কোনো চিন্তা করত না সে। ওর মধ্যে সেই ভয়ডর ছিল না। একই মনোভাব আমি মার্তিনেল্লির খেলার মধ্যেও দেখতে পাই। মার্তিনেল্লিও সব সময় বল চায়, চায় গোল দিতে। পরবর্তীতে রোনালদো বিশ্বের সেরা খেলোয়াড় হয়েছিল, আশা করব মার্তিনেল্লিও তাই-ই হবে।

মার্তিনেল্লিকে এখনই জাতীয় দলে দেখতে চাইছেন বার্সেলোনা ও এসি মিলানের সাবেক এই কিংবদন্তি, আশা করব ওর খুব তাড়াতাড়ি যেন জাতীয় দলের হয়ে অভিষেক হয়ে যায়। ও এখনই প্রস্তুত। ঐতিহ্যগতভাবে আমাদের জাতীয় দল কখনোই বয়স নিয়ে চিন্তা করেনি। যে খুব কম বয়সী কারওর অভিষেক হয়ে গেল কি না। রোনালদোর বয়স যখন সতেরো, তখনই সে ব্রাজিলের হয়ে খেলেছে। টিনএজার থাকতে থাকতেই ব্রাজিল দলের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে গিয়েছিল নেইমার ও গ্যাব্রিয়েল জেসুস। কারওর যদি প্রতিভা ও সামর্থ্য থাকে ভালো করার, সে অবশ্যই সুযোগ পাবে জাতীয় দলে।ব্রাজিলের আক্রমণভাগে এমনিতেই প্রতিভার অভাব নেই। নেইমার, গ্যাব্রিয়েল জেসুস ছাড়াও আছেন রবার্তো ফিরমিনো, এভারটন সোয়ারেস, ফিলিপ কুতিনহো, রিচার্লিসন, রদ্রিগো গোয়েস, ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, ডেভিড নেরেস, গ্যাব্রিয়েল বারবোসা প্রমুখ। এই লম্বা লাইন পেরিয়ে মার্তিনেল্লি কীভাবে নিজের জায়গা জাতীয় দলে পাকা করতে পারেন, এখন সেটাই দেখার বিষয়।