ইন্তিখাবের হৃদয়ে এখনও বাংলাদেশ

ইন্তিখাব আলম। এএফপি ফাইল ছবি
ইন্তিখাব আলম। এএফপি ফাইল ছবি

১৭টি টেস্টে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, ছিলেন ওয়ানডেতে পাকিস্তানের প্রথম অধিনায়কও। ইন্তিখাব আলম নামটা পাকিস্তান ক্রিকেটের সঙ্গে খুব ভালোভাবেই জড়িয়ে আছে। ১৯৯২ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান দলের কোচ ছিলেন, আবার ২০০৯ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপজয়ী দলে ছিলেন ম্যানেজারের ভূমিকায়। সাবেক এই পাকিস্তানি ক্রিকেটার কথা বলেছেন তাঁর এই বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারের বিভিন্ন দিক নিয়ে। বাংলাদেশ আর ঢাকা প্রসঙ্গেও হয়ে উঠলেন স্মৃতিকাতর—

প্রশ্ন: ঢাকা শহরে তো নিশ্চয়ই অনেক স্মৃতি আপনার…
ইন্তিখাব আলম: স্মৃতি মানে! ঢাকা আর বাংলাদেশ তো আমার জীবনেরই অংশ হয়ে আছে। ঢাকায় বহুবার খেলেছি। পরে পাকিস্তান দলের কোচ-ম্যানেজার হিসেবেও গিয়েছি। তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান থেকে ঢাকায় গিয়ে আমি প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি। পাকিস্তানের হয়ে টেস্ট খেলেছি। অনেক বন্ধুবান্ধব আছে আমার সেখানে। ঢাকা স্টেডিয়ামেও আমার বেশ কিছু স্মরণীয় পারফরম্যান্স আছে।

প্রশ্ন: কোচ হিসেবে আপনি তো স্মরণীয় হয়ে থাকবেন পাকিস্তান ক্রিকেটে। ১৯৯২ বিশ্বকাপ জিতেছেন…
ইন্তিখাব: বিশ্বকাপের বেশ কিছুদিন আগে আমি পাকিস্তান দলের ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব পাই। তখন ওই দায়িত্বটা ছিল এখনকার দিনের কোচের মতোই। সে সময় পাকিস্তান দলে আমি আর অস্ট্রেলিয়া দলে ববি সিম্পসন ছাড়া আর কোনো দলেরই কোচ ছিল বলে মনে পড়ছে না। তখন ক্রিকেট ম্যানেজারকে সব দায়িত্ব পালন করতে হতো। এখন তো ক্রিকেট দলে কত কোচ—ব্যাটিং কোচ, বোলিং কোচ, উপদেষ্টা কোচ, ফিল্ডিং কোচ—কত কী! ম্যানেজার হিসেবে ১৯৯২ বিশ্বকাপ জয় তো অবশ্যই মধুর স্মৃতি। তবে আমাদের সেই দলে কিন্তু ইমরান খানের মতো একজন অধিনায়ক ছিল। সার্বিকভাবে পাকিস্তান দলটা ছিল প্রতিভাবান খেলোয়াড়ে ঠাসা। জাভেদ মিয়াঁদাদ, ওয়াসিম আকরাম, ইনজামাম-উল-হক, মঈন খান, আকিব জাভেদ—এরা। ভাগ্যও আমাদের সঙ্গে ছিল।

প্রশ্ন: ইমরান খানের সঙ্গে কোচ হিসেবে আপনার রসায়নটা কেমন ছিল?
ইন্তিখাব: যথেষ্ট ভালো ছিল। ইমরান আমাকে খুবই শ্রদ্ধা করত। আসলে ইমরানকে অধিনায়ক বানিয়েছিলাম আমিই। সে সময় পিসিবির প্রধান ছিলেন এয়ার মার্শাল নূর খান। খুবই পেশাদার একজন মানুষ। আমার পরামর্শেই আশির দশকের শুরুতে নূর সাহেব ইমরানকে অধিনায়ক বানিয়েছিলেন। কাজটা সহজ ছিল না। দলের ভেতর থেকে বিদ্রোহ হয়। কারণ, দলের পাঁচ-ছয়জন সিনিয়র ক্রিকেটার তরুণ ইমরানকে অধিনায়ক হিসেবে মেনে নিতে রাজি ছিল না। কিন্তু আমরা অনড় ছিলাম আমাদের সিদ্ধান্তে। ১৯৮২ সালে ইংল্যান্ড সফরে সিরিজ জিততে পারিনি, কিন্তু লর্ডসে আমরা ইংল্যান্ডকে হারাই। ইমরানকে আমি সেই ১৯৭১ সালের ইংল্যান্ড সফর থেকেই চিনি। তখনই জানতাম, তাঁর মধ্যে দুর্দান্ত এক ক্রিকেটার হওয়ার সব গুণ আছে।

প্রশ্ন: প্রথম অধিনায়ক হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আপনি, টেস্ট অধিনায়কও ছিলেন...
ইন্তিখাব: দেশকে নেতৃত্ব দেওয়াটা বিশাল গর্বের ব্যাপার। তবে পাকিস্তানের টেস্ট অধিনায়ক হিসেবে আমার কিছু অপ্রাপ্তি, কিছু আক্ষেপও আছে। ১৯৭১ সালে আমরা লিডসে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেরে যাই ২৫ রানে। ম্যাচটা জিতলে দারুণ হতো। ১৯৭৪ সালেও ইংল্যান্ডে টেস্ট সিরিজ আমরা জিততে পারিনি। অথচ, সেবার একটি ম্যাচও আমরা হারিনি। ১৯৪৮ সালে স্যার ডন ব্র্যাডম্যানের অস্ট্রেলীয় দলের পর আমরাই ছিলাম প্রথম কোনো দল, যারা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজ হারিনি। বৃষ্টি আমাদের একটি টেস্ট জয় কেড়ে নিয়েছিল। ১৯৭২-৭৩ সালে অস্ট্রেলিয়া সফরে মেলবোর্ন আর সিডনিতে দুটি টেস্ট আমরা হারি বাজে ব্যাটিংয়ের কারণে। মেলবোর্নে ৯২ রানে আর সিডনিতে ৫২ রানে। এই দুটি হার এখনো আমাকে কষ্ট দেয়। ওয়ানডে অধিনায়কত্ব উপভোগ করেছি। সেটাও ১৯৭১ সালে। কোনো অভিজ্ঞতা ছাড়াই আমরা ম্যাচ জিতেছিলাম। পাকিস্তানে তখন কোনো ওয়ানডে ম্যাচ হতো না।

প্রশ্ন: আপনার টেস্ট অভিষেকের গল্পটা তো বেশ মজার...
ইন্তিখাব: হ্যাঁ, এত মজার যে মাঝেমধ্যে আমারই বিশ্বাস হয় না। সময়টা ১৯৫৭-৫৮। পাকিস্তান দলের খেলা করাচির সম্মিলিত স্কুল দলের বিপক্ষে। স্কুল দলের ট্রায়ালে গিয়ে দেখি, আমার নাম নেই। আমার বড় ভাই আফতাব আলম তখন প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট দল পিডব্লুডির খেলোয়াড়। তাদের বোলার নেই বলে সে ম্যাচের আগের দিন আমাকে তাদের নেট অনুশীলনে যেতে বলে। সেখানে আমি নেট বোলার হিসেবে পাকিস্তানের টেস্ট ক্রিকেটার ওয়াজির মোহাম্মদ, ওয়াকার হাসান ও আবদুল হাফিজ কারদারের বিপক্ষে বোলিং করি। নেটের পর কারদার সাহেব জিজ্ঞেস করলেন, ‘তুমি কি কাল স্কুল দলে খেলছ?’ আমি বললাম, সুযোগ পাইনি। তখন উনি বললেন, ‘দরকার নেই। তুমি পাকিস্তান দলেই খেলবে।’

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ক্রিকেট তো বহুদিন ধরে দেখছেন আপনি…
ইন্তিখাব: বাংলাদেশের ক্রিকেট অনেক এগিয়েছে। সময়ের সঙ্গে আরও এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশের প্রতি সব সময়ই শুভকামনা আমার। এই সফরের দুটি ম্যাচ খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতে পারিনি। তবে আমি মনে করি, বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের নিয়মিত খেলা উচিত। পাকিস্তানেরও বাংলাদেশে যাওয়া উচিত। দুই দেশই দুই দেশকে ক্রিকেট দিয়ে লাভবান করতে পারে।