'জোকোভিচকে হারাব', বিশ্বাস ফেদেরারের

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিতে মুখোমুখি হচ্ছেন ফেদেরার ও জোকোভিচ। ছবি : এএফপি
অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিতে মুখোমুখি হচ্ছেন ফেদেরার ও জোকোভিচ। ছবি : এএফপি
>

গত উইম্বলডনের মহাকাব্যিক ফাইনালে নোভাক জোকোভিচের কাছে হেরেছিলেন রজার ফেদেরার। এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিতেও মুখোমুখি হচ্ছেন দুজন। উইম্বলডন হারের বদলা এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে নিতে পারবেন, এমনটাই বিশ্বাস সুইস কিংবদন্তি ফেদেরারের

কী দুর্দান্তই না ছিল সেই ম্যাচটা!

উইম্বলডন ফাইনালের ইতিহাসে দীর্ঘতম ম্যাচটাই খেলেছিলেন সুইস কিংবদন্তি। শুধু শিরোপাটা জেতা হয়নি। ওটা উঠেছিল নোভাক জোকোভিচের হাতে। ফেদেরার প্রায় চার থেকে পাঁচবার জয়ের সুবাস পেয়েও পারেননি জোকোভিচের দুর্দান্ত প্রতিরোধের জন্য। উইম্বলডন ফাইনালের ইতিহাসে শেষ সেটে টাইব্রেকের মধ্য দিয়ে শিরোপার নিষ্পত্তি হওয়ার নজির দেখা গেল সেবারই প্রথম। ৭-৬ (৭/৫), ১-৬, ৭-৬ (৭/৪), ৪-৬, ১৩-১২ (৭/৩) গেমে জয়ী হয়েছিলেন জোকোভিচ। সে ম্যাচ শেষে ড্রেসিং রুমে গিয়ে ফেদেরার কেঁদেও ছিলেন।

সেই যন্ত্রণাকে এবার শক্তিতে রূপান্তরিত করতে চান ফেদেরার। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের সেমিতে আবারও মুখোমুখি হচ্ছেন ‘বিগ থ্রি’ এর দুজন। ম্যাচের আগে আত্মবিশ্বাসী ফেদেরার জানিয়েছেন, এবার জোকোভিচকে হারাতে পারবেন তিনি, ‘আমার বিশ্বাস আমি নোভাক জোকোভিচকে হারাতে পারব।’

এবার অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে পাঁচটি ম্যাচ খেলেছেন, প্রথম দুটি ম্যাচ দিলে বাকি তিন ম্যাচেই ভক্তদের রক্তচাপ বাড়িয়ে দিয়েছিলেন ‘ফেড এক্সপ্রেস’। হারতে হারতে জিতেছেন সেই তিন ম্যাচ। তৃতীয় রাউন্ডে জন মিলম্যানের বিপক্ষে ম্যাচটার কথাই ধরুন। প্রথম সেটে শুরু করেছিলেন ৪-৬ গেমে হেরে। দ্বিতীয় সেটেও হারতে বসেছিলেন, শেষ মুহূর্তে ঘুরে দাঁড়িয়ে টাইব্রেকে জিতলেন ৭-৬ (৭-২) ব্যবধানে। তৃতীয় সেটটা জিততে তুলনামূলক কম কষ্ট হয়েছে ফেদেরারের, ৬-৪ গেমে জিতেছেন। চতুর্থ সেটটা ৬-৪ গেমে জিতে ঘুরে দাঁড়ান মিলম্যান। ম্যাচ গড়ায় পঞ্চম সেটে। শ্বাসরুদ্ধকর টাইব্রেকারে জয় হয় ফেদেরারের অভিজ্ঞতার। টাইব্রেকারেও হারতে বসেছিলেন, ৮-৪ ব্যবধানে পিছিয়ে ছিলেন। আর দুই পয়েন্ট পেলেই জিতে জেতেন মিলম্যান। কিন্তু সেটা হতে দেননি ফেদেরার। টানা ছয় পয়েন্ট জিতে চলে যান চতুর্থ রাউন্ডে।

চতুর্থ রাউন্ডও শুরু করেছিলেন হাঙ্গেরির খেলোয়াড় মার্টন ফুকসোভিকসের বিপক্ষে প্রথম সেট হেরে। যদিও এবার পঞ্চম সেটের টাইব্রেক পর্যন্ত যাওয়া লাগেনি। তার আগেই ম্যাচ জিতেছেন ফেদেরার। ফুকসোভিকসকে হারিয়েছেন ৪-৬, ৬-১, ৬-২, ৬-২ সেটে। কোয়ার্টারে যুক্তরাষ্ট্রের টেনিস স্যান্ডগ্রেনকে ৬-৩, ২-৬, ২-৬, ৭-৬, ৬-৩ সেটে হারিয়েছেন, সাত-সাতটা ম্যাচ পয়েন্ট বাঁচিয়েছেন।

এমন কঠিন ম্যাচ খেলতে খেলতেই সাহস বেড়ে গেছে ‘বুড়ো’ ফেদেরারের। সেটাই উল্লেখ করেছেন তিনি, ‘আমি যদি এমন ম্যাচগুলো জিতে বের হয়ে আসতে পারি, বিশেষ করে মিলম্যানের ম্যাচটা যেভাবে জিতলাম, এমনভাবে ম্যাচ জিতলে মনের মধ্যে বিশ্বাস আসে। আর আমি হারের আগে হেরে বসি না। আমি সব সময় বিশ্বাস করি ম্যাচ হারার আগে হারব না।’

ফেদেরার ও জোকোভিচ দুজনই এখনও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে অপরাজিত। ফেদেরারের মতে কোর্টের কাছ থেকে সুবিধাই পাচ্ছেন তাঁরা, ‘এখানকার কন্ডিশনের সঙ্গে আমরা মানিয়ে নিতে পেরেছি। কোর্টের স্পিড এখানে বেশ ভালো বলেই মনে হচ্ছে, আমাদের খেলতে সাহায্য করছে।’

গত ১৬ বছরের মধ্যে ১৩ বারই অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন হয় নোভাক জোকোভিচ, নয় ফেদেরার। বাকি তিনবার জিতেছেন মারাত সাফিন (২০০৫), রাফায়েল নাদাল (২০০৯) ও স্ট্যান ভাভরিঙ্কা (২০১৪)। ফেদেরারের মতে, বছরের শুরুতেই একটা বড় শিরোপা জিতলে বাকি বছরটা ফর্মে থাকা সহজ হয়ে যায়। যে কাজটা জোকোভিচও পারেন, ‘নোভাক এখন যা করছে আমি দশ বছর ধরে সেগুলো করেছি। বছরের শুরুতে ট্রফি জিতলে বছরটা দুর্দান্ত ভাবে শুরু করা যায়। আমরা দুজনই এই কাজটা বেশ কয়েকবার করতে পেরেছি ক্যারিয়ারে।’

অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের আরেক সেমিতে আলেক্সান্দার জভেরভের মুখোমুখি হবেন রাফায়েল নাদাল অথবা ডমিনিক থিম। ওদিকে নারী এককের প্রথম সেমিতে মুখোমুখি হবেন শীর্ষ বাছাই অ্যাশলি বার্টি ও সোফিয়া কেনিন। দ্বিতীয় সেমিতে লড়বেন গার্বিন মুগুরুজা ও সিমোনা হালেপ।