সুপার ওভারে খেলাকে 'শিল্প' বানাচ্ছে নিউজিল্যান্ড

সুপার ওভারে পোড়া কপাল সাউদির। ছবি: ব্লাকক্যাপস টুইটার পেজ
সুপার ওভারে পোড়া কপাল সাউদির। ছবি: ব্লাকক্যাপস টুইটার পেজ
>ওয়েলিংটনে আজ ভারতের বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচেও সুপার ওভারের পরীক্ষা দিয়েছে নিউজিল্যান্ড। খুব অল্প সময়ের মধ্যে নিউজিল্যান্ডকে প্রায়ই দেখা যাচ্ছে সুপার ওভারে

‘১৮ বলে দরকার ১৮। হাতে ৭ উইকেট। এখান থেকে ম্যাচ সুপার ওভারে! হর্শা ভোগলের টুইট, ‘ম্যাচ সুপার ওভারে নেওয়াকে শিল্পে পরিণত করছে নিউজিল্যান্ড।’ভোগলে আরেকটু পেছনে তাকালে টের পেতেন ওর চেয়েও সহজ জায়গা থেকে ম্যাচটা সুপার ওভারে টেনে এনেছে নিউজিল্যান্ড। যখন ২০ বলে দরকার ছিল ১৯। এখান থেকে খেলা সুপার ওভারে গড়ালে এবং খুব অল্প সময়ের ব্যবধানে একই দল বারবার তার পুনরাবৃত্তি ঘটালে কী বলা যায়! শিল্প!

তা নয় তো আর কী? আজ ক্রিকেটের সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্নটা হতে পারে, নিউজিল্যান্ড কেন এতবার সুপার ওভারে? তিরটা আরেকটু গভীরেও গাঁথা যায়। বারবার সুপার ওভারে উঠে প্রতিবারই কেন হৃদয়-ভঙ্গ ; ক্রিকেট এতটাই নাটকীয়!

গত সাত মাসে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতো সুপার ওভারে খেলল নিউজিল্যান্ড। ১৪ জুলাই লর্ডসে বিশ্বকাপ ফাইনালে কী ঘটেছিল তা ভুলে যাওয়া কঠিন। ট্রেন্ট বোল্টের করা শেষ ওভারে ১৩ রান তুলে ম্যাচটিকে সুপার ওভারে নিয়ে গিয়েছিলেন ইংল্যান্ডের বেন স্টোকস।

গত নভেম্বরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টির পর চলতি সিরিজে টানা দুই ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের ম্যাচ গড়াল সুপার ওভারে। ওয়েলিংটনে ভারতের বিপক্ষে আজও ‘ট্র্যাজেডি’র শিকার নিউজিল্যান্ড—সুপার ওভারে ১৩ রান ঠেকাতে গিয়ে অভিজ্ঞ টিম সাউদি দিয়েছেন ১৬, সেটিও মাত্র ৫ বলে। সাউদি স্নায়ুচাপ যেমন ধরে রাখতে পারেননি নিউজিল্যান্ড সমর্থকদের জন্যও স্নায়ু ধরে রাখা কঠিন হয়ে উঠছে। সিরিজে আগের ম্যাচ মিলিয়ে এ যে টানা দুটি সুপার ওভার! এর মধ্যে ‘স্বাভাবিক’ বলতে শুধু নিউজিল্যান্ডের হার।

টাই না হলে তো ম্যাচ সুপার ওভারে যায় না। আর নিউজিল্যান্ডের এই টাই করে খেলা সুপার ওভারে নেওয়ার ‘অভ্যাস’ বলুন কিংবা ‘বদঅভ্যাস’ শুরু হয়েছে প্রায় এক যুগ আগে। ২০০৮ সালে অকল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে কিউইরা শুধু প্রথম সুপার ওভার নয়, সেখানে প্রথম হারও দেখেছে।

সব মিলিয়ে গত এক যুগে নিউজিল্যান্ডের সৌজন্যে সুপার ওভার টি-টোয়েন্টিতে দেখা গেছে ৮ ম্যাচে। এর মধ্যে জয় একটি—২০১০ সালে ক্রাইস্টচার্চে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে। সালের ক্রম হিসেব অনুযায়ী—২০০৮, ২০১০, ২০১২ (দুইবার), ২০১৯ (দুইবার), ২০২০ (দুইবার)। যদিও এ বছরে নিউজিল্যান্ড দুইবার সুপার ওভারে উঠেই থামবে কি না সে প্রশ্ন থেকেই যায়।

গত জুলাইয়ের হিসেবে ফেরা যাক। বিশ্বকাপ ফাইনালের পর চার মাসের ব্যবধানে অকল্যান্ডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে আবারও টাই করে নিউজিল্যান্ড। এরপর এই সিরিজেই হ্যামিল্টনে তৃতীয় ম্যাচ এবং আজ—সুপার ওভার ও নিউজিল্যান্ডের হার। ভারতের ক্রীড়া সাংবাদিক গৌরব কালরা তাই এ সিরিজের শেষ ও বাকি ম্যাচটি নিয়ে মজার টুইট করেছেন, ‘ব্রেকিং নিউজ: সিরিজের শেষ ম্যাচের মূল খেলা মাঠে গড়ানোর আগে সুপার ওভার হবে।’

সুপার ওভারে নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে সাউদির কপালেরও কী অদ্ভুত মিল! ২০১০ থেকে এ পর্যন্ত ছয়বার সুপার ওভারে বল করে হেরেছেন পাঁচবারই। এ পাঁচ ম্যাচে ১৩ থেকে ২০ রানের মধ্যে কোনো সংগ্রহই বাঁচাতে পারেননি। পাকিস্তানের সংবাদকর্মী মাজহার আরশাদ তাই টুইটারে প্রশ্ন রেখেছেন, ‘সুপার ওভারে সাউদিকে দিয়ে বল করানোর কোনো ব্যাখ্যা, যুক্তি, বিশ্লেষণ কেউ দিতে পারবেন? তর্ক নয়, নিখাদ প্রশ্ন।’