ট্যাক্সি চালক থেকে গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী কোচ

মেলবোর্নের ইয়ারা নদীর পাশে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি হাতে বাবা অ্যালেক্স কেনিন ও মেয়ে সোফিয়া কেনিন। ছবি: এএফপি
মেলবোর্নের ইয়ারা নদীর পাশে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি হাতে বাবা অ্যালেক্স কেনিন ও মেয়ে সোফিয়া কেনিন। ছবি: এএফপি
>

এক সময় ট্যাক্সি চালাতেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ী সোফিয়া কেনিনের বাবা অ্যালেক্স কেনিন। সেই অ্যালেক্সের কোচিংয়েই গ্র্যান্ড স্লাম জিতলেন মেয়ে সোফিয়া

ভাগ্য কত দ্রুত বদলায়! অ্যালেক্স কেনিনের চেয়ে ভালো এটা আর কে জানেন। বছর দশেক আগেও তিনি ছিলেন শুধুই একজন ট্যাক্সি চালক। নিউইয়র্কের পথে পথে ট্যাক্সি চালিয়ে কাটত তাঁর জীবন। সেই অ্যালেক্স কেনিনই কি না হয়ে গেলেন গ্র্যান্ড স্লাম জয়ী কোচ!

বলা হচ্ছে এবারে অস্ট্রেলিয়া ওপেনের নারী এককে চ্যাম্পিয়ন সোফিয়া কেনিনের বাবার কথা। ১৯৮৭ সালে রাশিয়া থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমিয়েছিলেন। আমেরিকান স্বপ্ন খুঁজতে নিউইয়র্কে যাওয়া অ্যালেক্সের পকেটে তখন শ কয়েক ডলার। সারা রাত ট্যাক্সি চালাতেন আর দিনের বেলা যেতেন ইংরেজি শেখার স্কুলে। এভাবে জীবনযুদ্ধ করতে করতেই ১৯৯৮ সালে অ্যালেক্সের ঘর আলো করে পৃথিবীতে আসে ফুটফুটে এক রাজকন্যা। অ্যালেক্স তার নাম রাখেন সোফিয়া।

ট্যাক্সি চালক বাবার মনে হঠাৎ কী খেলে গেল কে জানে, পণ করলেন মেয়েকে টেনিস খেলোয়াড় বানাবেন। সোফিয়া বড় হয়ে উঠতে না উঠতেই তাকে নিয়ে যেতে শুরু করলেন টেনিস সার্কিটে। কিন্তু উচ্চতা একটু কম ছিল বলে কোনো টেনিস কোচই সোফিয়াকে নিতে চাইছিলেন না। সেই সময়টা কত কঠিন ছিল অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জয়ের পর বললেন সোফিয়া, ‘কোচরা তো আমাকে পাত্তাই দিচ্ছিল না। ছোটবেলায় আমার উচ্চতা খুব বেশি ছিল না। কোচরা বাবাকে বলত, “সে অনেক ছোট, ওকে টেনিস খেলোয়াড় বানাতে চাওয়াটা তো একটা কৌতুক!”

কিন্তু হাল ছাড়েননি অ্যালেক্স। মেয়েকে টেনিস সার্কিটে ঢুকিয়েই তবে ক্ষান্ত হয়েছেন। মেয়ে যখন আরেকটু বড় হয়ে উঠল, নিজেই দায়িত্ব নিয়েছেন কোচিংয়ের। যদিও টেনিস নিয়ে খুব বেশি জানাশোনা ছিল না তাঁর। সোফিয়া নিজের বাবা ও কোচকে নিয়ে বলে চলেন, ‘বাবা খুব মনোযোগ দিয়ে দেখতেন অন্য টেনিস কোচেরা তাদের খেলোয়াড়দের কীভাবে শেখায়। আমাকে কী বলতে হবে সেটা তিনি জানতেন। আর তাঁর পরিকল্পনাগুলোও সঠিক ছিল।’

আসলেই যে অ্যালেক্সের পরিকল্পনা সঠিক ছিল সেটা সোফিয়া না বললেও চলে। ২০১৪ যুব অলিম্পিকে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে খেলা সোফিয়া যে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছেন অ্যাশলেই বার্টি ও গারবিনিয়ে মুগুরুজাদের মতো খেলোয়াড়দের পেছনে ফেলে। এমন একটি অর্জনের সব কৃতিত্ব সোফিয়া তাঁর বাবাকেই দিয়েছেন, ‘তাঁকে তো ধন্যবাদ দিতেই হবে। আমরা এমন একটি দিনের স্বপ্ন দেখছিলাম। আমাদের দুজনেরই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে।’