এমন 'ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার' হয়েই দেখাক না সবাই

গতকালও জোড়া গোল করেছেন সালাহ। ছবি : ইএসপিএনের টুইটার অ্যাকাউন্ট
গতকালও জোড়া গোল করেছেন সালাহ। ছবি : ইএসপিএনের টুইটার অ্যাকাউন্ট
>

গতকাল মোহাম্মদ সালাহর জোড়া গোলে সাউদাম্পটনকে ৪-০ গোলে হারিয়েছে লিভারপুল। লিগ মৌসুমে এই নিয়ে সালাহর ১৪ গোল হয়ে গেল। আবারও লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হওয়ার দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই আছেন তিনি। তবে ‘ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার’ বা ‘এক মৌসুমের ঝলক’ বলে সালাহকে প্রায়ই খোঁচা শুনতে হয়

২০১৭ সালে এএস রোমা থেকে যখন লিভারপুলে এলেন, দলবদলটা নিয়ে তেমন আলোচনা হয়নি। ইংলিশ লিগের সাবেক এক ফ্লপ ইতালিতে নিজের ঝলক দেখিয়ে আবারও ইংল্যান্ডে আসছেন, তাঁকে নিয়ে তেমন বাড়তি আলোচনা হবে কেন? আর দশটা উইঙ্গারের মতো সালাহকেও মিলিয়ে ফেলেছিলেন সবাই।

অবশ্য সবার এ ধারণার পেছনে সালাহর নিজেরও ভূমিকা আছে। এফসি বাসেলে থাকতে সব মিলিয়ে ৭৯ ম্যাচ খেলে ২০ গোল করেছিলেন, চেলসিতে আসার পর গোল করার হারটা কমল আরও। ১৯ ম্যাচে ২ গোল করা সে উইঙ্গার এরপর পাড়ি জমালেন ইতালিতে। সেখানে নিজেকে ফিরে পেলেন। তবে লিভারপুলে আসার আগে কখনই লিগে যে উইঙ্গার ১৫টির বেশি গোল যেখানে করেননি, সবাই ভেবে নিয়েছিলেন ইংলিশ লিগে সে আর কত কী-ই-বা করতে পারবে!

কিন্তু সালাহর মনে যে নিজেকে প্রমাণ করার বাসনা ছিল! আগেরবার ইংল্যান্ডে এসে ‘ফ্লপ’ তকমা জুটেছিল কপালে। সে স্টিকারটা নিজের কপালের ওপর থেকে সরাতে চেয়েছিলেন। ওয়াটফোর্ডের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচেই গোল করে সে মিশনে পথচলা শুরু হলো তাঁর।

এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। প্রথম মৌসুমে গোল আর অ্যাসিস্ট মিলিয়ে দলের ৪২ গোলে অবদান রাখলেন, দলকে তুললেন চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে। আগেরবার যে খেলোয়াড় ‘ফ্লপ’ করল, সে খেলোয়াড় হুট করে এত ভালো হয়ে গেল কীভাবে? ইংলিশ লিগের নিয়মিত দর্শকেরা কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছিলেন না।

এবার ‘ফ্লপ’ তকমার জায়গায় নতুন একটা গালভরা ডাকনাম জুটল কপালে, ‘ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার’— অর্থাৎ ইঙ্গিতটা স্পষ্ট, সালাহ প্রথম মৌসুমে ঝড়ে বক মেরেছেন। ইংলিশ লিগে এসে নিজেদের প্রথম মৌসুমে অমনটা অনেকেই করেছেন আগে। ওই যে, সোয়ানসি সিটির মিচু, প্রথম মৌসুমেই ১৮ গোল করে চোখ কপালে তুলেছিলেন। এরপর আর তাঁকে হ্যারিকেন দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায়নি। রকি সান্তাক্রুজ বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সে এসে প্রথম মৌসুমেই ১৯ গোল করেছিলেন। তারপর? হারিয়েই গেলেন!

একই কথা প্রযোজ্য আমের জাকির বেলায়। সালাহর স্বদেশি এই সাবেক তারকা প্রথম মৌসুমে উইগান অ্যাথেলেটিকের হয়ে লিগে দশ গোল করে কোথায় যেন হারিয়ে গেলেন। ২০০৬-০৭ মৌসুমে ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের হয়ে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নামের এক খেলোয়াড়ের চেয়েও বেশি গোল করলেন বেনি ম্যাকার্থি। তারপর উধাও।

সালাহ ওই মিচু, সান্তাক্রুজ, জাকি কিংবা ম্যাকার্থিদের লাইনে গিয়ে দাঁড়াবেন, এটাই বলা হলো তখন। পরের দুই মৌসুমে যথাক্রমে ৩০ গোল ও ২০ গোল (এখন পর্যন্ত) অবদান রাখার পরেও কান পাতলেই শোনা যায় ‘ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার’ ধ্বনি। অথচ এই একমৌসুমী ঝলক হওয়ার মধ্যেই আট বছর ধরে ট্রফি খরায় থাকা লিভারপুলকে চ্যাম্পিয়নস লিগ, সুপার কাপ ও ক্লাব বিশ্বকাপ জিতিয়েছেন সালাহ। কোনো অবিশ্বাস্য দুর্ঘটনা না ঘটলে ৩০ বছরের লিগ খরাও লিভারপুল কাটাচ্ছে এ বছরেই।

তিন বছরে লিভারপুলের হয়ে সালাহ ম্যাচপ্রতি গোল করেছেন ০.৬৫ টি। ক্লাবের ইতিহাসে এত বেশি গড় আর কারওর নেই। ইয়ান রাশ, কেনি ডালগ্লিশ, স্টিভেন জেরার্ড, কেভিন কিগান, মাইকেল ওয়েন, রবি ফাওলার, ফার্নান্দো তোরেস, লুইস সুয়ারেজ, সাদিও মানে, রবার্তো ফিরমিনো— কারওরই না!

সালাহ লিভারপুলে আসার পর থেকে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১২৮ গোলে অবদান রেখেছেন। ম্যানচেস্টার সিটির রহিম স্টার্লিংয়ের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা যেখানে ৯৫। ফিরমিনো, হ্যারি কেইন ও সার্জিও আগুয়েরোর ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ৮৮।

এমন ‘ওয়ান সিজন ওয়ান্ডার’ হয়েই দেখাক না সবাই!