'আমি কালো, ক্রিকেট খেলি ভালোবাসি বলেই'

বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেকে চেনালেন বাভুমা। ছবি: এএফপি
বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে নিজেকে চেনালেন বাভুমা। ছবি: এএফপি
দক্ষিণ আফ্রিকা দলে নিজের প্রতিভাবলেই সুযোগ পেয়েছেন, তিনি কোনো কোটার খেলোয়াড় নন—এমনটাই মনে করেন প্রোটিয়া ক্রিকেটার টেম্বা বাভুমা।


২০১৬ সালে ওয়ানডে অভিষেকে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন টেম্বা বাভুমা। নামের পাশে টেস্ট ব্যাটসম্যান তকমা জুটিয়ে নেওয়া দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানকে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে অপেক্ষা করতে হয়েছিল প্রায় ১৩ মাস। ২০১৭ সালে ইস্ট লন্ডনে বাংলাদেশের বিপক্ষে ফিরে করেছিলেন ৪৭ বলে ৪৮ রান। ‘ব্যর্থ’ বাভুমাকে এরপর ভুলেই গিয়েছিল ওয়ানডের দক্ষিণ আফ্রিকা। অবশেষে প্রায় সোয়া দুই বছর পর পরশু বাভুমা সুযোগ পেলেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় ওয়ানডে খেলার। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের বিপক্ষে এবার ৯৮ রান ২৯ বছর বয়সী ব্যাটসম্যানের। বাভুমার এই ইনিংস ও অধিনায়ক কুইন্টন ডি ককের সেঞ্চুরি প্রথম ওয়ানডেতে জিতিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকাকে।

কিন্তু ১০৫ বলে ৫ চার ও ২ ছক্কায় সাজানো দারুণ সে ইনিংসটা খেলার পর কিনা অপ্রীতিকর কিছু বিষয় নিয়েই কথা বলতে হলো বাভুমাকে! কোটা–পদ্ধতির কারণেই দক্ষিণ আফ্রিকা দলে সুযোগ মেলে—কৃষ্ণাঙ্গ বাভুমাকে এই অপবাদ শুনতে হচ্ছে সেই শুরুর দিন থেকে। ৪০টি টেস্ট খেলা বাভুমা পরশু ম্যাচের পর একরকম ধুয়ে দিয়েছেন সমালোচকদের। এ–ও বলেছেন, এবার যদি তাঁর দলে জায়গা পাওয়া নিয়ে বিতর্ক থামে।

অ্যাপার্টহেইট বা বর্ণবৈষম্যের যুগে দক্ষিণ আফ্রিকায় কালো বা অন্যান্য জাতিসত্তার মানুষের অধিকার বলতে কিছু ছিল না। সমাজের সব ক্ষেত্রেই সাদাদের তুলনায় পিছিয়ে ছিলেন তাঁরা। সেই যুগ গত হওয়ার পর আর্থসামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে অনগ্রসর জাতিকে এগিয়ে নিতে ট্রান্সফরমেশন বা ‘রূপান্তর’ নীতি নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার। সেটিরই অংশ হিসেবে সমাজের প্রায় সব ক্ষেত্রে কোটা–পদ্ধতি চালু করা হয়। ক্রিকেটও ব্যতিক্রম নয়। দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশে এখন দুজন কৃষ্ণাঙ্গ এবং চারজন মিশ্র বা ভারতীয় জাতিসত্তার খেলোয়াড়ের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

সমালোচনা এটি নিয়েই। সমালোচকদের যুক্তি, এই সুযোগে অনেক অযোগ্য খেলোয়াড়ও সুযোগ পেয়ে যাচ্ছেন। পরশু বাভুমা সমালোচনা করেছেন সমালোচকদের দ্বিজাচারিতার। বারবার দক্ষিণ আফ্রিকা দলে আসা–যাওয়া করা বাভুমার কাছে ব্যাপারটা বেশ কষ্টদায়ক, ‘খুব বেদনাদায়ক বলতে হয়। বাদ পড়াটা অবশ্য খুব বেশি কষ্টের নয়। সব খেলোয়াড়ই বাদ পড়ে। প্রায় সবারই ফর্ম পড়ে যায়, রানের ধারা শুকিয়ে যায়। ব্যাপারটা তখনই অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে যখন সবাই ট্রান্সফরমেশন ও আপনার সম্পর্ক নিয়ে কথা বলে।’

এরপর বললেন নিজের গায়ের রং নিয়ে, ‘হ্যাঁ, আমি কালো। আমার গায়ের রং অমনই। তবে আমি ক্রিকেট খেলি ভালোবাসি বলেই।’

আর শুধু গায়ের রঙের কারণেই যে তিনি দলে সুযোগ পান না, সেটিও মনে করিয়ে দিলেন, ‘আমি মনে করি ফ্র্যাঞ্চাইজি দলে পারফরম্যান্সের কারণেই আমি জাতীয় দলে। আর যখনই আমি জাতীয় দলে সুযোগ পেয়েছি, ভালোই করেছি।’

ট্রান্সফরমেশন বা কোটা–পদ্ধতি দিয়ে কাউকে বিচার করার বিপক্ষে বাভুমার অবস্থান, ‘সবচেয়ে অস্বস্তিকর হলো যখন ট্রান্সফরমেশনের চোখ দিয়ে কেউ আপনাকে বিচার করে। আপনি যখন ভালো করেন, এ নিয়ে কেউ কথা বলে না। যখনই আপনি খারাপ করেন, অমনি সবাই এটির সমালোচনা ও অপকারিতা নিয়ে কথা বলতে শুরু করে। পুরো ব্যাপারটা নিয়েই আমার অস্বস্তি।’
আগামীকাল ডারবানে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচ খেলবে বাভুমার দক্ষিণ আফ্রিকা।