রমিজ ভুল বলেছেন, তামিম-সাইফ ভুল করেছেন

তামিম ফিরে গেছেন ৩ রানে। ছবি: এএফপি
তামিম ফিরে গেছেন ৩ রানে। ছবি: এএফপি

রমিজ রাজা এটা কী বললেন! প্রেসবক্সের বারান্দায় দাঁড়ানো সম্প্রচারকারী প্রতিষ্ঠানের শ্রীলঙ্কান ক্যামেরামান অবিশ্বাস্য চোখে তাকিয়ে! খানিক আগে তিনিই নিশ্চিত করেছিলেন, পাকিস্তান অধিনায়ক আজহার আলী টস জিতে বোলিং নিয়েছেন। অথচ টস শেষে রমিজ যে সমাপ্তি টানলেন এই বলে, ‘ব্যাটিং নিয়েছে পাকিস্তান!’

প্রেসবক্সে স্থানীয় সাংবাদিকেরা রমিজের হয়ে ‘দুঃখিত’ বলে দিলেন। পাকিস্তানের জনপ্রিয় ধারাভাষ্যকরের না হয় ‘স্লিপ অব টাং’ হয়েছে, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কী হয়েছে? হালকা ঘাস আছে। কন্ডিশনের সহায়তায় শুরুতে পেসাররা সহায়তা পাবে ঠিকই, বাউন্সি কিংবা ভীষণ গতিময় হবে—তা নয়। কোনোভাবে একটা সেশন কাটিয়ে দিতে পারলে পরে উইকেটে ব্যাটিং করা সহজ হবে—কাল বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্টের দুজন সদস্য যা বলেছিলেন, সেটিই দেখা যাচ্ছে। বাংলাদেশের টপ অর্ডার এই একটু সময় টিকে থাকার ধৈর্য দেখাতে পারল না।

প্রথম সেশনেই রমিজের সঙ্গে দেখা হয়ে গেল ধারাভাষ্যকক্ষের বারান্দায়। রেলিংয়ে পা ঠেকিয়ে খেলা দেখছেন নিবিষ্ট মনে। রমিজের কাছে অবশ্য যেতে হলো এক সেনা কর্মকর্তার বাধা পেরিয়ে। ‘আজহার আলী উইকেটে ঘাস দেখে শুরুতে বোলিং নিয়েছে। তাই বলে এই উইকেটকে ভীষণ পেসবান্ধব বলার উপায় নেই। এখন পাকিস্তানের সব সবুজ উইকেট ব্যাটিং স্বর্গে পরিণত হয়! বাংলাদেশের দুই ওপেনার তো উইকেট দিয়ে এসেছে…।’ হঠাৎ নাজমুল হোসেনের চোখে প্রশান্তি এনে দেওয়া এক ড্রাইভ দেখে থেমে গেলেন রমিজ। ‘দেখুন এই উইকেটে টিকে গেলে কেমন রান আসে’, তৃতীয় উইকেটে নাজমুল আর মুমিনুল হকের ৫৯ রানের জুটির প্রশংসা করলেন রমিজ।

বাংলাদেশ লাঞ্চ বিরতিতে গেছে ৩ উইকেটে ৯৫ রান তুলে। অথচ সেশনটা নিজেদের করে নেওয়ার সুযোগ ছিল। সাইফ হাসান শাহিন আফ্রিদির বলটা পায়ের কোনো নড়াচড়া ছাড়াই খোঁচা মেরেছেন। অভিষেকেই ‘ ডাক’ মেরে তরুণ ওপেনার বুঝেছেন, এ পথ বড় কণ্টকময়। তামিম ইকবাল মোহাম্মদ আব্বাসের লাইন পড়তে ভুল করেছেন। রিভিউ নিয়ে বাংলাদেশ ওপেনারকে ফিরিয়েছে পাকিস্তান।

রাওয়াপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রমিজ রাজা। ছবি: প্রথম আলো
রাওয়াপিন্ডি ক্রিকেট স্টেডিয়ামে রমিজ রাজা। ছবি: প্রথম আলো

‘ওপেনাররা হচ্ছে টোন সেটার। যেকোনো কন্ডিশনে, যেকোনো উইকেটে টেস্টের প্রথম দিনের সকালে সব দলই তাকিয়ে থাকে তাদের ওপেনারদের দিকে। উইকেটের আচরণ নিয়ে ওপেনাররাই সঠিক বার্তা দিতে পারে, যেটি পরে অনুসরণ করে সতীর্থ ব্যাটসম্যানরা। বাংলাদেশের ওপেনাররা সেটি পারেনি। তামিম তো কদিন আগেই ঘরোয়া ক্রিকেটে ৩০০ (৩৩৪) করেছে, তাই না?’—রমিজের আশা, ভালো শুরু এনে দেওয়ার মর্মার্থ নিশ্চয়ই দ্বিতীয় ইনিংসে বুঝবেন বাংলাদেশের ওপেনাররা।

রমিজকে বেশি হতাশ মনে হলো এই সফরে না আসা মুশফিকুর রহিমকে নিয়ে। বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার পাকিস্তান সফরকে ‘না’ বলেছেন। মুশফিকের সিদ্ধান্ত নিয়ে অনেক কথাই হয়েছে। এখনো হচ্ছে। এটি নিয়ে রমিজের মন্তব্য হচ্ছে, ‘যখন দল পাকিস্তানে আসছে, অথচ শুধু একজন আসছে না শুধু নিরাপত্তার কারণে, এটা ভালো দেখায় না। ভালো শোনায় না। তার সতীর্থরা এখানে, সবাই পাকিস্তানির নিরাপত্তার ওপর আস্থা রাখছে। শুধু একজন অন্য পথে হাঁটছে। এদিক দিয়ে হতাশার। আবার এটাও বুঝতে হবে এটি একজনের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। কিন্তু দলের কথা চিন্তা করুন। তাদের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যানকে ছাড়া খেলতে এসেছে। সাকিব আল হাসান তো আগেই নেই।’

বাঁহাতি অলরাউন্ডারে প্রসঙ্গ আসতেই রমিজ নিজেই বলে উঠলেন, ‘সাকিব ইজ অ্য শক! এত বুদ্ধিমান, প্রতিভাবান, অভিজ্ঞ ক্রিকেটার এমন ভুল করল! দলের দুজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারকে ছাড়া খেলতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। কাজটা মোটেও সহজ নয়।’

হঠাৎ ডাগআউটে মিসবাহ-উল-হককে দেখে প্রসঙ্গ বদলে গেল। পাকিস্তান দলের প্রধান কোচ ও নির্বাচকের ভূমিকায় থাকা মিসবাহর পারফরম্যান্স রমিজ বিশ্লেষণ করলেন এভাবে, ‘সারা জীবন যে রক্ষণাত্মক অধিনায়কত্ব করেছে। কোচ হিসেবে তাকে নিয়ে এখন কিছু বলতে চাইছি না। তবে ওর কিছু সিদ্ধান্তের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করি। সবশেষ বাংলাদেশের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজে সে কেন হাফিজ-শোয়েবকে ফেরাল, জানি না! দুজনই ভালো খেলেছে, ঠিক আছে। কিন্তু এদের নিয়ে লম্বা মেয়াদে পরিকল্পনা করতে পারবে না পাকিস্তান। এই সংস্করণে বরং তরুণদের বেশি সুযোগ দেওয়া উচিত। আপনার সামনে যখন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ।’

টেস্টের মধ্যে অবশ্য টি-টোয়েন্টি আলোচনা অপ্রাসঙ্গিক মনে হতে পারে বলে আবারও রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে ফিরলেন রমিজ। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ এক টেস্টের অপেক্ষায় তিনিও।