চতুর্থবারের চেষ্টায় মেসিকে পাবে ম্যানচেস্টার সিটি?

সিটির জার্সিতে দেখা যাবে মেসিকে? ছবি : এএফপি
সিটির জার্সিতে দেখা যাবে মেসিকে? ছবি : এএফপি
>

দশ বছর ধরে মেসিকে দলে আনার চেষ্টা করছে ম্যানচেস্টার সিটি। এর আগে তিনবার বেশ ভালোভাবে চেষ্টা করেও মেসিকে পাওয়া হয়নি তাদের। মেসি-বার্সা টানাপোড়েনের এই সময়ে সিটি চতুর্থবারের চেষ্টায় সফল হবে তো?

সময়টা ২০১২ সাল।

৪৪ বছর পর তখন সদ্যই ম্যানচেস্টার সিটিকে লিগ জিতিয়েছেন ইতালিয়ান ম্যানেজার রবার্তো মানচিনি। কিন্তু লিগ জিতিয়েছেন তো কী হয়েছে? চাকরি যে থাকবে, সে নিশ্চয়তা ছিল না। সিটির চোখে যে তখন পেপ গার্দিওলার স্বপ্ন আঁকা! গার্দিওলা তখন বার্সেলোনা ছাড়ছেন, যে সুযোগের অপেক্ষায় ছিল সিটি। বার্সেলোনা ছেড়ে গার্দিওলা যদি তখনই সিটিতে আসার জন্য সম্মতি দিতেন, মানচিনির চাকরি থাকত না আর।

সেটা হয়নি। গার্দিওলা চলে যান এক বছরের ছুটিতে, তারপর যোগ দেন বায়ার্ন মিউনিখে। এদিকে মানচিনির পর সিটির মসনদে বসার জন্য আসেন সাবেক রিয়াল মাদ্রিদ কোচ ম্যানুয়েল পেলেগ্রিনি। গার্দিওলাকে দলে আনার সুপ্ত বাসনা তখনো কমেনি সিটির। যার ফলাফল, পেলেগ্রিনি যাওয়ার পর ২০১৬-১৭ মৌসুম থেকে সিটির কোচ হিসেবে যোগ দেন পেপ গার্দিওলা।

বিজ্ঞ পাঠক হয়তো এতক্ষণে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছেন, শিরোনামে মেসির নাম উল্লেখ করে ভেতরে গার্দিওলার সাতকাহন গাইছি কেন। কারণ, একটাই। বছরের পর বছর নিজেদের সবচেয়ে পছন্দের খেলোয়াড় বা কোচটিকে পাওয়ার জন্য সিটির একাগ্রচিত্তে লেগে থাকার যে মানসিকতা, সেটা খানিক বোঝা যায় এই গার্দিওলার ঘটনা থেকেই।

কোচ হিসেবে গার্দিওলাকে পেতে যেভাবে সিটি বছরের পর বছর চেষ্টা করে গেছে, দশ বছর ধরে তেমনই এক খেলোয়াড়কে দলে টানার জন্য চাতক পাখির মতো বসে আছে ম্যানচেস্টারের নীল দলটি। তিনি আর কেউ নন, ছয়বারের বর্ষসেরা খেলোয়াড়, বার্সেলোনা ও আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় তারকা—লিওনেল মেসি।

২০০৯ সালের দিকে প্রথমবার। সেবার মেসিকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড় হিসেবে দলে আনতে চেয়েছিল সিটি। ৭০ মিলিয়ন পাউন্ডের একটা প্রস্তাবও পাঠিয়েছিল। সে সময়ে ইংলিশ ফুটবলের সবচেয়ে দামি দলবদল ছিল ইংলিশ ডিফেন্ডার রিও ফার্ডিনান্ডের লিডস ইউনাইটেড থেকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে আসা, ৩০ মিলিয়ন পাউন্ডের বিনিময়ে। এখন ৭০ থেকে ৭৫ পাউন্ড দিয়ে রোমেলু লুকাকুরা নিয়মিত বিক্রি হলেও আজ থেকে দশ-এগারো বছর আগে এই ৭০ মিলিয়ন পাউন্ড অঙ্কটা ছিল চোখ কপালে তুলে দেওয়ার মতো। প্রস্তাবটা দেখে খোদ প্রিমিয়ার লিগের তৎকালীন প্রধান ডেভ রিচার্ডস ফোন দিয়েছিলেন সিটির প্রধান নির্বাহী গ্যারি কুককে, ‘গ্যারি, তুমি ফাজলামো করছ না তো? ৭০ মিলিয়ন পাউন্ড? তোমরা কি পাগল?’

এমনকি খোদ বার্সেলোনাও সিটির সেই প্রস্তাব বিশ্বাস করতে পারেনি। প্রিমিয়ার লিগকে ফোন দিয়েছিল ঘটনার সত্যতা যাচাই করার জন্য। যা–ই হোক, পরে মেসির আনুগত্যর জয় হয়। ক্লাব ছাড়েননি এই আর্জেন্টাইন তারকা।

দুই বছর পর আবারও মেসিকে পাওয়ার আশায় উদ্বেল হয় ম্যানচেস্টারের সদ্য ধনী হওয়া ক্লাবটি। বার্সেলোনা তখন সান্তোস থেকে নেইমারকে আনার চেষ্টায় রত। শোনা গেল, ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় তারকার আগমনের খবরে মেসি একটু নারাজ। সিটি এই সুবিধাটাই নিতে চাইল। প্রস্তাব পাঠাল মেসির জন্য। শুধু তা–ই নয়, নেইমারের জন্যও একটা প্রস্তাব পাঠাল তারা, যাতে বার্সেলোনা সিটির আগ্রহ দেখে তড়িঘড়ি নেইমারকে কিনে ফেলে, আর তা দেখে মেসি যেন ক্লাবের মধ্যে নিজের অবস্থান নিয়ে আরও সন্দিহান হয়ে যান। মেসির এজেন্ট ও বাবা হোর্হে মেসির সঙ্গে সাও পাওলোতে বেশ কয়বার সাক্ষাৎ করেন সিটির কর্তাব্যক্তিরা। পরে সিটির চেষ্টায় পানি ঢেলে দিয়ে আবারও বার্সেলোনাতেই থেকে যান আর্জেন্টাইন তারকা। মেসি না এলেও বার্সেলোনা থেকে ফেরান সোরিয়ানো ও জিকি বেগিরিস্তেইনকে ক্লাবের পরিচালকমণ্ডলীর সদস্য বানিয়ে নিয়ে আসে সিটি। লক্ষ্য একটাই, সোরিয়ানো আর বেগিরিস্তেইনকে দেখেও যদি সিটিতে আসেন মেসি-গার্দিওলা!

২০১৬ সালে তৎকালীন কোচ লুইস এনরিকের সঙ্গে মতবিরোধের জের ধরে বার্সা ছাড়তে চান মেসি। এমনকি তখন সদ্য বার্সায় যোগ দেওয়া কোচ পেপ গার্দিওলাকে ফোনও করেন তিনি। উদ্দেশ্য, সিটি সম্পর্কে আরেকটু গভীরভাবে জানা। ক্লাব ছাড়ার জন্য মনস্থির করেই ফেলেছিলেন, তখনই প্রিয় বন্ধুকে বার্সায় থেকে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করা শুরু করেন লুইস সুয়ারেজ। সুয়ারেজ নিজে ইংলিশ লিগ খেলে এসেছেন লিভারপুলের হয়ে। লিভারপুলের শত্রু সিটিতে বন্ধু যাবেন, সেটা তাঁর সহ্য হওয়ার কথা না। তা ছাড়া, বার্সেলোনার রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়ায় বড় হওয়া মেসির ইংল্যান্ডের গুমোট আবহাওয়া পছন্দ হবে না। সব মিলিয়ে আরও একবার বার্সেলোনায় থাকার জন্য রাজি হয়ে যান মেসি। বার্সাও তড়িঘড়ি করে মেসির সঙ্গে নতুন চুক্তি করে বেতন বাড়িয়ে দেয়।

এবার আবারও মেসিকে দলে আনার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে সিটির সামনে। বার্সেলোনার ক্রীড়া পরিচালক এরিক আবিদালের সঙ্গে বেশ একচোট হয়ে গেছে মেসির। তাঁর সাবেক এ ক্লাব সতীর্থ কিছুদিন আগে এক সাক্ষাৎকারে খেলোয়াড়দের পারফরম্যান্সের সমালোচনা করেন। খেলোয়াড়দের কারণেই কোচের পদ হারিয়েছেন আর্নেস্তো ভালভার্দে, এমন দাবিও করেন আবিদাল। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আবিদালকে ধুয়ে দেন মেসি। যাঁদের বিপক্ষে অভিযোগ সেসব খেলোয়াড়ের নাম জানতে চান।

সব মিলিয়ে সঙিন অবস্থায় আছে বার্সেলোনা। এদিকে মেসির চুক্তিপত্রে শর্ত হিসেবে উল্লেখ আছে, বার্সেলোনা ছাড়তে চাইলে এই মৌসুম শেষে ফ্রিতে ছাড়তে পারবেন মেসি, যদি মে মাসের আগে নিজের সিদ্ধান্তের কথা বার্সাকে জানিয়ে দেন তিনি।

২০০৮ থেকে ২০১২—বার্সেলোনায় গার্দিওলার আমলেই লিওনেল মেসিকে দেখা গেছে তাঁর সেরা রূপে। এই সময়ে টানা চারবার ব্যালন ডি’অর জিতেছেন সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবলার। আবারও মেসি-গার্দিওলা জুটি দেখার আশা তাই করতেই পারে সিটির সমর্থকেরা, এবার তাদের ক্লাবের জার্সিতে।