'উপহার' দিয়ে বিপদে বাংলাদেশ

সেঞ্চুরি তুলে নেন বাবর আজম। পাশে আসাদ শফিকের অভিনন্দন। ছবি: এএফপি
সেঞ্চুরি তুলে নেন বাবর আজম। পাশে আসাদ শফিকের অভিনন্দন। ছবি: এএফপি
রাওয়ালপিন্ডি টেস্টে দ্বিতীয় দিন শেষে ৩ উইকেটে ৩৪২ রান তুলেছে পাকিস্তান। সেঞ্চুরি করেছেন বাবর আজম ও শান মাসুদ। ২ উইকেট নিয়েছেন বাংলাদেশের পেসার আবু জায়েদ


প্রথম সেশনে ২৭ ওভারে পাকিস্তান রান তুলেছে ৯৫। বাংলাদেশ নেয় ২ উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে ২৮ ওভারে ১১১ রান তুলেছে পাকিস্তান। বিনিময়ে ১ উইকেট নিতে পেরেছে বাংলাদেশ। তবে শেষ সেশনটা উইকেট নেওয়ার দিক থেকে ‘বন্ধ্যা’। ৩২.৫ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে এই সেশনে ১৩৬ রান তুলেছে স্বাগতিকেরা। রাওয়ালপিন্ডি টেস্টের দ্বিতীয় দিনের চিত্রটা অবশ্য টেস্টে বাংলাদেশের কাছে অপরিচিত নয়।

আবু জায়েদের সুশৃঙ্খল বোলিংয়ে প্রথম সেশনের ভালো শুরুটা দ্বিতীয় সেশনে ধরে রাখা যায়নি। আর শেষ সেশনে তো পাকিস্তান পুরোই চালকের আসনে! সারা দিনে মোট ৮৭.৫ ওভার ব্যাট করে ৩ উইকেটে ৩৪২ রানে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছে পাকিস্তান। তবে দিনের চিত্রটা অন্য রকমও হতে পারত, যদি মুমিনুল হকের দল কিছু ভুল না করত।

দুটি ‘জীবন’ পাল্টে দিয়েছে দ্বিতীয় দিনের খেলার চিত্র। শান মাসুদ ও বাবর আজমকে ফেরানোর সুযোগ হাতছাড়া করার মাশুলই গুনেছে বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ২ রানের সময় বাবরের ক্যাচ নিতে পারেননি ইবাদত হোসেন। সে ‘উপহার’ কাজে লাগিয়ে সেঞ্চুরি তুলে নিয়ে দিন শেষে অপরাজিত সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। ওপেনার শান মাসুদ ৮৬ রানে উইকেটরক্ষক লিটন দাসকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান। লিটন ক্যাচটা গ্লাভসে পুরেছিলেন। অথচ বোলার তো নে–ই, তিনিও বুঝতে পারেনি ওটা ক্যাচ ছিল। উইকেটকিপাররা যেখানে অনেক সময় অকারণেও আপিল করেন, সেখানে লিটন ব্যাট ছুঁয়ে আসা বল গ্লাভসে নিয়েও থাকলেন নিশ্চুপ! এ রকম দুটি ‘জীবন’ উপহার দেওয়ার মাশুল কী হতে পারে? সেঞ্চুরি ছাড়া আর কি!

হ্যাঁ, শান মাসুদও সেঞ্চুরি তুলে নিয়েছেন। চা-বিরতির এক ওভার আগে তাঁকে বোল্ড করেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। গোটা দিনে মাত্র তিনবার উদযাপনের উপলক্ষ পেয়েছেন বাংলাদেশের বোলাররা। বাকি সময়টা খাটতে হয়েছে গাধার খাটুনি। পাকিস্তান যে ভিত পেয়েছে, সেখান থেকে ইনিংসটা ভালোভাবে শেষ করতে পারলে তারা দ্বিতীয়বার ব্যাটিংয়ের কথা ভাববে কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন। রাওয়ালপিন্ডির উইকেটে আজ শুধু জায়েদ ও তাইজুলই যা একটু ভালো করতে পেরেছেন। প্রায় সারা দিনই ওয়ানডে মেজাজে ব্যাট করেছে পাকিস্তান।

প্রথম সেশনে ওভারপ্রতি গড়ে সাড়ে তিনের (৩.৫২) বেশি রান তুলেছে পাকিস্তান। দ্বিতীয় সেশনে বাবর আজম-শান মাসুদ মিলে বাড়িয়েছেন গতি। এ সময় ওভারপ্রতি গড়ে প্রায় চার (৩.৯৬) করে রান তুলেছে স্বাগতিকেরা। শেষ সেশনে ওভারপ্রতি রানরেট ৪.১৮। বাবর অপরাজিত আছেন ১৪৩ রানে। অন্য প্রান্তে ৬০ রানে অপরাজিত আসাদ শফিক। কাল তৃতীয় দিনে পাকিস্তান যে রানের পাহাড় গড়তে যাচ্ছে, তা বলা বাহুল্য। হাতে ৭ উইকেট রেখে বাংলাদেশের প্রথম ইনিংস থেকে এখনই ১০৯ রানে এগিয়ে স্বাগতিকেরা।

সারা দিনে একাই ৩৪ ওভার বল করেছেন বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল। উইকেট শুধু শানেরটা পেলেও ব্যাটসম্যানদের বেঁধে রাখার চেষ্টা করে গেছেন তাইজুল। দু-একটি ডেলিভারি মাঝেমধ্যেই তীক্ষ্ণ বাঁক নিয়েছে কিংবা বাউন্স পেয়েছে। কাল উইকেট আরও ভাঙবে, তাইজুল তাই আশাবাদী হয়ে উঠতেই পারেন। কিন্তু পেসারদের মধ্যে এক জায়েদ ছাড়া আর কেউ সেভাবে ব্যাটসম্যানদের মাথাব্যথার কারণ হতে পারেননি। ২০ ওভারে ৬৬ রানে ২ উইকেট নেন জায়েদ।

ইবাদত গতি তোলার চেষ্টা করলেও ভালো জায়গায় বল ফেলতে পারেননি। রানও দিয়েছেন অনেক। ওভারপ্রতি গড়ে পাঁচের বেশি। রুবেল হোসেনও পারেননি টেস্টের মেজাজে বল করতে। ১৭ ওভারে গড়ে সাড়ে চারের বেশি (৭৭) রান দিয়েছেন। নিয়মিত বোলাররা উইকেট না পাওয়ায় মাহমুদউল্লাহকে দিয়েও হাত ঘুরিয়েছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।

অথচ দিনের শুরুতেই ধাক্কা খেয়েছিল পাকিস্তান। দ্বিতীয় ওভারে উইকেটের বাইরের একটি বল তাড়া করতে গিয়ে ফিরেছেন ওপেনার আবিদ আলী। এরপর শান মাসুদ ও আজহার আলী রীতিমতো ওয়ানডে মেজাজে খেলেছেন প্রথম সেশনে। এ সময় জায়েদ বেশ কয়েকবার বিপদেও ফেলেন শান মাসুদকে। কিন্তু পাকিস্তানের রান তোলার গতি কমেনি। আজহার আলী-শান মাসুদের ১২৬ বলে ৯১ ও শান মাসুদ-বাবরের ১৮৭ বলে ১১২ রানের জুটি তারই প্রমাণ। তবে পাকিস্তানের হয়ে আজ সবচেয়ে বড় জুটিটা (২০৭ বলে ১৩৭) গড়েছেন বাবর-শফিক।