'অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি'

২৫ বলে ৯ রান করেছেন। বলার মতো কিছুই নয়। কিন্তু এই রানটাই সোনার চেয়ে দামি হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের জন্য। ২৯ রানে ১ উইকেট নেওয়া রকিবুল হাসানের ব্যাট হাতে পারফরম্যান্সই মানুষ মনে রাখবে যুগের পর যুগ। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জেতানোর পথে অধিনায়ক আকবরকে একদম সঠিক মুহূর্তে সঙ্গ দিয়েছেন রকিব
বল হাতে পারফরম্যান্সে ভারতকে চেপে রেখেছিলেন, ব্যাট হাতে শিরোপা জেতানো শট এনে দিয়েছেন রকিব। ছবি: আইসিসি টুইটার
বল হাতে পারফরম্যান্সে ভারতকে চেপে রেখেছিলেন, ব্যাট হাতে শিরোপা জেতানো শট এনে দিয়েছেন রকিব। ছবি: আইসিসি টুইটার

একবার মনে হয় বৃষ্টিই বাংলাদেশের সবচেয়ে ভালো বন্ধু। আবার মনে হচ্ছিল, এর চেয়ে বড় শত্রু আর হয় না। পারভেজ হোসেন আউট হওয়ার পর বাংলাদেশের স্কোর ও ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় স্কোর বড় কাছাকাছি হয়ে গিয়েছিল একপর্যায়ে। একটু এদিক-ওদিক হলেই রান রেটে পিছিয়ে পড়ত বাংলাদেশ। আর বৃষ্টি আইন বাংলাদেশকে বিশ্বকাপ জয়ের স্বপ্ন থেকে দূরে সরিয়ে দিত।

টানা ২৫ বল ব্যাট থেকে কোনো রান পাচ্ছিল না বাংলাদেশ। ওয়াইডের সুবাদে যখন এগিয়ে গিয়েছিল, তখন আবার বৃষ্টির প্রার্থনা। কারণ একদিকে আকবর আলী থাকলেও অন্য দিকে রকিবুল হাসান ভরসা দিতে পারছিলেন না। একটু থিতু হওয়ার পর ভয় কাটল। আকবরকে যোগ্য সঙ্গী দিলেন। ৩৫ রানের লক্ষ্যকে ৫৪ বলে ১৫তে নামিয়ে আনলেন এ দুজন। বৃষ্টি যখন নামল সেটা বাংলাদেশের পক্ষেই এল। সেটা নেমে এল ৩০ বলে ৭ রানে।

এমন অবস্থাতেও ৩ উইকেট হারানোর ভয় ছিল। প্রথম বলেই রান নিলেন আকবর। পরের দুই বলে একটু আগ্রাসী হতে গিয়ে অধিনায়কের ধমক খেলেন। কিন্তু পরের বলেই চমৎকার এক চার মেরে স্নায়ুচাপটা কমিয়ে দিলেন নিমেষে। পরের ওভারে ম্যাচ জেতানো শটটাও এল রকিবের ব্যাট থেকেই। একজন বোলার হয়েও ওই মুহূর্তে এমন চাপ সামলে বাংলাদেশকে জয় এনে দিলেন রকিব। যে চাপ মিডল অর্ডারের অনেকেই নিতে পারেননি।

ম্যাচ শেষে রকিব অবশ্য ওসব নিয়ে মাথা ঘামাননি। বরং দেশকে প্রথম বিশ্বকাপ জেতানোর স্বাদ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন এই বাঁহাতি স্পিনার, ‘এটা অবিশ্বাস্য এক অনুভূতি। আমরা এখন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। আমরা একটা পরিকল্পনা নিয়ে এখানে এসেছিলাম এবং সে পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করেছি। যে দল যেদিন তাদের পরিকল্পনা সঠিকভাবে কাজে লাগাবে তারাই সেদিন জেতে। আজ এটাই হয়েছে। আমরা জিতেছি।’

বাংলাদেশের জয়ের পেছনে দলের স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ রিচার্ড স্টোনিয়ের অবদান দেখছেন অনেকেই। পুরো টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের ফিল্ডিং ও ফিটনেস প্রশংসা কুড়িয়েছে। বিশ্বকাপ জিতে দল প্রমাণ করেছে স্টোনিয়ের সফল। স্ট্রেংথ অ্যান্ড কন্ডিশনিং কোচ অবশ্য ক্রিকেটারদের জয়ের কৃতিত্বে কোনো ভাগ নেননি, ‘এরা সবাই আমাকে পরিবারের অংশ বানিয়ে নিয়েছে। আজকের দিনটা এ ছেলেদের। তাদের কঠোর পরিশ্রমের ফল এটা। গত ১২ মাসে ওরা যে আত্মত্যাগ করেছে তার ফল। ওদের এটা প্রাপ্য। আমরা শুধু দুটি বিষয় নিয়ে কাজ করেছি। আমি হচ্ছে প্রাণচাঞ্চল্য এনেছি এবং ছেলেদের দেখিয়েছি ওরা ওদের সেরাটা কীভাবে দেখাতে পারে। ওরা যদি ৫০ ভাগও অর্জন করতে পারে, সেটাই যথেষ্ট।’