বাংলাদেশের প্রশংসা করায় বিশপকে খোঁচা ভারতীয়দের

বাংলাদেশের প্রশংসা করে ভারতীয়দের রোষের মুখে বিশপ। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের প্রশংসা করে ভারতীয়দের রোষের মুখে বিশপ। ফাইল ছবি

ইয়ান বিশপের ধারাভাষ্য মানেই অন্য রকম কিছু। ম্যাচের অন্তিম মুহূর্তে ইয়ান বিশপের মতো উত্তেজনা ছড়ানোর ক্ষমতা আর একজন ইয়ানেরই আছে। সেই ইয়ান স্মিথ আপাতত নিউজিল্যান্ডে আছেন। ভারতের সঙ্গে কিউইদের সিরিজের দায়িত্ব পালন করছেন। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপের ফাইনালে তাই স্নায়ুচাপের সঙ্গে তাল মেলানো আবেগে ভাসার কাজটা ইয়ান বিশপ একাই নিয়েছিলেন। তাঁর অসাধারণ বাগ্মিতা আর ভরাট কণ্ঠ গতকালের ম্যাচের শেষ মুহূর্তগুলোতে এনে দিয়েছিল বাড়তি সৌন্দর্য।

ম্যাচজুড়ে বাংলাদেশের ভূয়সী প্রশংসাই করেছেন বিশপ। কিন্তু সেটি মোটেও ভালো চোখে দেখেনি ভারতীয়রা। তাঁর টুইটারে রীতিমতো হামলে পড়েছিল অনেক ভারতীয় সমর্থক। বিশপ অবশ্য এমন মন্তব্য মেনে নেননি। সঙ্গে সঙ্গে কড়া জবাব দিয়েছেন এমন বাজে মন্তব্যের।

বাংলাদেশের জয়ের মুহূর্তে শুধু মাঠের অবস্থাই বর্ণনা করেননি বিশপ। সাবেক এই ফাস্ট বোলার ঠিক মুহূর্তে বাংলাদেশের নানা শহরের নানা প্রান্তে কী হতে পারে, সেটাও কল্পনা করে নিয়েছেন। ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামে ক্রিকেটপ্রেমী বাংলাদেশিরা কীভাবে আনন্দে ভাসতে পারেন, সে বর্ণনা দিয়েছেন। ম্যাচজুড়েই বাংলাদেশের যুব ক্রিকেটারদের প্রশংসা করেছেন বিশপ। বাংলাদেশের পেসারদের আগ্রাসন ও নিয়ন্ত্রণ দেখে মুগ্ধ হয়েছেন। এমনকি মূল জাতীয় দলের বোলারদের জন্যও শরিফুল, তানজিমদের বোলিং শিক্ষণীয় বলে মনে হয়েছে তাঁর। ম্যাচ শেষে আকবরদের ট্রফি উল্লাসের ভিডিও তাই টুইটারে দেওয়ার আগে দুবার ভাবেননি। মন কেড়ে নেওয়া এই বাংলাদেশ দলকে নিয়ে লিখেছেন, ‘এই তরুণদের জন্য খুব খুশি লাগছে। আমি আশা করি এদের মাঝ থেকে অনেক ভবিষ্যৎ তারকা বের হবে।’

কিন্তু বিশপের মুখে বাংলাদেশের প্রশংসা ভালোভাবে নেননি ভারতীয় অনেক দর্শক। একজন ভারতীয় দর্শক লিখেছিলেন, ‘একজন নিরপেক্ষ সমর্থক হিসেবে বলছি, কোনো এক অদ্ভুত কারণে আপনি বেশির ভাগ সময় বাংলাদেশের প্রশংসা করে পার করেছেন। খুবই বাজে লেগেছে শুনতে।’ তাতে বিশপের জবাব ছিল একদম ফাস্ট বোলার–সুলভ, পাল্টা খোঁচা মেরে বলেছেন, ‘হ্যাঁ, ধারাভাষ্যকার হিসেবে আমার উচিত ছিল পুরো ম্যাচে উচ্চ মানের ক্রিকেট খেলা একটা দল সম্পর্কে আরও “নেতিবাচক” কথা বলা।’

আরেক ভারতীয় সমর্থক বিশপের এমন প্রশংসার পেছনে অন্য কারণ খুঁজে নিয়েছেন, ‘ইয়ান, তুমি কি বাংলাদেশে কোচিংয়ের চাকরি খুঁজছ নাকি?’ বিশপ এবারও কড়া জবাব দিয়েছেন শ্লেষ মিশিয়ে, ‘না, আমি কোচ না এবং যে কাজ করছি, সেটার জন্যই আমি ঈশ্বরের কাছে কৃতজ্ঞ। ভাবছি, শুধু তোমাদের খুশি করার জন্য এরপর থেকে ভালো ক্রিকেট সম্পর্কেও বাজে কথা বলতে হবে আমাকে।’

ম্যাচ শেষে দুই দলের মধ্যে যে কথা-কাটাকাটি হয়েছে এবং ঝামেলা হয়েছে, তাতে বাংলাদেশের দোষ দেখছেন ভারতীয় সমর্থকেরা। সে প্রসঙ্গও টানার চেষ্টা করেছেন এক সমর্থক, ‘এই খেলোয়াড়রাই (বাংলাদেশের) যখন মাঠে ও মাঠের বাইরে বেয়াদবের মতো আচরণ করছিল, তখন তো অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন আপনি...।’ এমন মন্তব্যে খেপে যান বিশপ, তবে উত্তরটা দিয়েছেন বেশ শান্তভাবে, ‘আমি তোমার মন্তব্য দেখেছি। কিন্তু আমি আগামীকাল তোমার জবাব দেব, যখন আমার মাথা ঠান্ডা হবে। রাগান্বিত বা ক্ষুব্ধ অবস্থায় আমি টুইট করতে চাই না।’

ভারতীয় সব সমর্থক অবশ্য বিশপের দোষ খুঁজে বের করার চেষ্টা করেননি। বিশপের দোষ না খুঁজে নিজেদের সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন একজন, ‘এরা ১৯ বছর বয়সী ছেলেপেলে। তোমরা কি আশা করো শচীন টেন্ডুলকার, গাঙ্গুলী এসে ওদের বকাঝকা দিক? ওরা এখনো কিশোর। দেশের হয়ে খেলছে ঠিক আছে, কিন্তু ওরা এখনো বাচ্চা। কান্নাকাটি থামাও, এরা এখনো কিশোর। ওদের প্রতিভার প্রশংসা করো। হার মানতে শেখো।’