মাহমুদ তখনো ছিলেন, আছেন এবারও

বাংলাদেশের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক খালেদ মাহমুদ। ফাইল ছবি
>

১৯৮৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বয়সভিত্তিক দলের অধিনায়ক ছিলেন খালেদ মাহমুদ। জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক এবার সঙ্গী অনূর্ধ্ব-১৯ দলের বিশ্বকাপ জয়েরই।

‘হ্যাঁ, সুজনই (খালেদ মাহমুদ) বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের প্রথম অধিনায়ক। আমি দ্বিতীয়,’ হাসতে হাসতেই কথাটা বললেন সেলিম শাহেদ। সাবেক এই জাতীয় ক্রিকেটার খালেদ মাহমুদের সঙ্গে বাংলাদেশের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ ক্রিকেট দলে খেলেছেন। একসঙ্গে ইংল্যান্ড সফর করেছেন। খেলেছেন দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত এশীয় যুব ক্রিকেটে। ১৯৮৯ সালের ডিসেম্বরে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর আর বাংলাদেশকে নিয়ে আয়োজিত সেই জমজমাট টুর্নামেন্টের স্মৃতি মনে থাকার কথা অনেক ক্রিকেটপ্রেমীরই।

দক্ষিণ আফ্রিকায় প্রথমবারের মতো যুব বিশ্বকাপ জিতেছে বাংলাদেশ। আকবর আলী-পারভেজ হোসেন-রকিবুল হাসান, শরিফুল ইসলামদের এ কৃতিত্বে মিশে আছে খালেদ মাহমুদের নামও। ৩১ বছর আগে বাংলাদেশের প্রথম বয়সভিত্তিক দলের অধিনায়ক সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটে দাপটের সঙ্গে খেলে এখন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) গেম ডেভেলপমেন্ট কমিটির প্রধান। বোর্ডের এ কমিটিই তৃণমূল থেকে প্রতিভা তুলে আনার কাজটা করে। দেশের প্রতিটি বয়সভিত্তিক দলই পরিচালিত হয় ডেভেলপমেন্ট কমিটির অধীনে। এর প্রধান হিসেবে যুব বিশ্বকাপ জয়ের কৃতিত্বের অংশীদার জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক এ অধিনায়কও।

বিশ্বজয়ের এমন উপলক্ষে খালেদ মাহমুদেরও মনে পড়ছে পুরোনো দিনের কথা। যুবাদের বিশ্বজয়ের সঙ্গে তাঁর নাম আসছে, সেটি অবশ্যই তৃপ্তির। কিন্তু দেশের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কত্ব করাটা তাঁর জন্য একই সঙ্গে গর্ব আর স্মৃতিকাতরতার, ‘এটা আমার জন্য অনেক বড় গৌরবের ব্যাপার। আমি দেশের প্রথম বয়সভিত্তিক দলের অধিনায়ক ছিলাম। তবে এটা ঠিক, ৩১ বছর আগের সেই দল আর বিশ্বজয়ী যুবদলের মধ্যে অনেক পার্থক্য। আমরা খুব সীমিত সুযোগ-সুবিধার মধ্যে খেলেছি। এখন সুযোগ-সুবিধা অনেক বেড়েছে। একটা সুন্দর পরিকল্পনার ফল আজকের সাফল্য।’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘১৯৮৯ সালে প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ দলটি আমাদের ক্রিকেটকে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়েছিল। সেবার আমি আর সেলিম শাহেদ অধিনায়কত্ব করেছি ভাগাভাগি করে। তবে আমি ভাগ্যবান যে প্রথম ম্যাচে আমিই অধিনায়ক ছিলাম।’

সেলিম শাহেদও মাহমুদের মতোই স্মৃতিকাতর, ‘১৯৮৮ সালে অস্ট্রেলিয়াতে প্রথম যুব বিশ্বকাপ হয়েছিল। এর পরপরই ক্রিকেট বোর্ড বাংলাদেশের একটি বয়সভিত্তিক দল গড়ার উদ্যোগ নেয়। গর্ব হয় এটা ভেবে যে আমি সে দলের একজন সদস্য ছিলাম। আমরা ১৯৮৯ সালের জুনে ইংল্যান্ড সফর করি। সেখানে সুজন (মাহমুদ) প্রথম ম্যাচে আমাদের নেতৃত্ব দিয়েছিল। সে হিসাবে সেই আমাদের বয়সভিত্তিক দলের প্রথম অধিনায়ক। পরে আমি আর সুজন ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে অধিনায়কত্ব করেছি। এশীয় যুব ক্রিকেটেও সুজন আর আমিই ভাগাভাগি করে অধিনায়কত্ব করি।’

১৯৮৯ সালে এশীয় যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এটিই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বয়সভিত্তিক দল। ছবি: সংগৃহীত
১৯৮৯ সালে এশীয় যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল। এটিই বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম বয়সভিত্তিক দল। ছবি: সংগৃহীত

১৯৮৯ সালের এশীয় যুব ক্রিকেটে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলে খালেদ মাহমুদ, সেলিম শাহেদ ছাড়াও ছিলেন আমিনুল ইসলাম, হাবিবুল বাশার, সাইফুল ইসলাম, আনিসুর রহমান, জাভেদ ওমর, নাঈমুর রহমান, হালিম শাহ ও শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ। এ দলটিই পরে বাংলাদেশ দলকে উপহার দিয়েছে চারজন অধিনায়ক ও পাঁচজন টেস্ট ক্রিকেটার। চার অধিনায়ক হলেন আমিনুল ইসলাম, নাঈমুর রহমান, খালেদ মাহমুদ ও হাবিবুল বাশার। তাঁদের সঙ্গে পরে টেস্ট খেলেছেন ওই দলের জাভেদ ওমরও। টেস্টে দেশের হয়ে প্রথম সেঞ্চুরিটিও এসেছিল বাংলাদেশের প্রথম অনূর্ধ্ব-১৯ দলের খেলোয়াড় আমিনুলের ব্যাট থেকে। এশীয় যুব ক্রিকেটে খালেদ, শাহেদ, আমিনুল, আনিস, সাইফুলদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের নামগুলো শুনলেও চমকে উঠতে হয়। টুর্নামেন্টে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার হয়ে খেলতে এসেছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী, অজয় জাদেজা, বিনোদ কাম্বলী, আশিস কাপুর, মঈন খান, মারভান আতাপাত্তু, কুমার ধর্মসেনা ও প্রমোদ্য বিক্রমাসিংহের মতো তারকারা।

১৯৮৯ সালের সে টুর্নামেন্ট দেশের ক্রিকেটে দারুণ ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল। নতুন প্রজন্মের একঝাঁক ক্রিকেটার গড়েছিলেন বড় স্বপ্নের ভিত। তখন স্বপ্নটা ছিল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করার। সেই ধারাবাহিকতাতেই যুব ক্রিকেটাররা এবার দেশকে উপহার দিলেন বিশ্বজয়ের সাফল্য। স্বপ্নটা এখন আকাশ ছোঁয়ার।