৪৪ বছর বয়সে এই জিমন্যাস্ট লড়তে চান অলিম্পিকে

তাসখন্দে নিজেকে প্রস্তুত করছেন চুসোভিতিনা। ছবি: এএফপি
তাসখন্দে নিজেকে প্রস্তুত করছেন চুসোভিতিনা। ছবি: এএফপি
>উজবেকিস্তানের ৪৪ বছর বয়সী জিমন্যাস্ট ওকসানা চুসোভিতিনা টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন

জিমন্যাস্ট—কথাটা শুনলেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে কিছু কচি মুখ। একটু বয়সী ক্রীড়াপ্রেমীদের চোখে ভেসে ওঠেন নাদিয়া কোমানিচির কম বয়সী মুখ। এখন সিমোন বাইলস কিংবা আলিয়া মুস্তাফিনারা। সব মিলিয়ে জিমন্যাস্ট বলতে কিশোর-কিশোরীদের মুখই ভেসে ওঠে। সেখানে ৪৪ বছর বয়সী ওকসানা চুসোভিতিনা ঠিক কতটা মানানসই?

প্রতিদ্বন্দ্বিতা বিচারে প্রশ্ন উঠতে পারে। তবে খেলাটির প্রতি ভালোবাসার জায়গা থেকে? একেবারে লাগসই। উজবেকিস্তানে জন্ম নেওয়া এ জিমন্যাস্টের মুখেই শুনুন, ‘জিমন্যাস্টিকস ভালোবাসি। নিজেকে বলি, যতক্ষণ পারছ অনুশীলন ও পারফর্ম করা উচিত। থেমে গেলে ভীষণ অনুশোচনা হবে।’

জিমন্যাস্টিকসের প্রতি এমন অদম্য ভালোবাসা থেকেই টোকিও অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি শুরু করেছেন চুসোভিতিনা। জিমন্যাস্টরা যে বয়সে কোচ কিংবা বিশ্লেষক হন কিংবা অন্য পেশায় মন দেন, চুসোভিতিনা সে বয়সে শরীরী কসরতের নাচন তুলবেন জিমন্যাস্টিকস অ্যারেনায়। এমন প্রেরণা তিনি যেখান থেকে পেয়েছেন সেই পরিবারকে কথা দিয়েছেন চুসোভিতিনা, টোকিও-ই হবে তাঁর ‘শেষ অলিম্পিক।’

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের হয়ে ক্যারিয়ার শুরু চুসোভিতিনার। সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে গেলে ১৯৯২ বার্সেলোনা অলিম্পিক দিয়ে ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’-এ অভিষেক ঘটেছিল তাঁর। সেবার সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের ১২টি রাষ্ট্র নিয়ে গঠিত দলের হয়ে অলিম্পিকে অংশ নিয়েছিল তিনি। সেখানে দলগত সোনা জিতলেও ব্যক্তিগত পদকের জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে—চারটি অলিম্পিক পর—১৬ বছর। ২০০৮ বেইজিং অলিম্পিকে ভল্ট ইভেন্টে রুপা জেতেন চুসোভিতিনা। সেবার জার্মানির হয়ে পদক জেতেন তিনি। ২০০২ সালে সন্তানের (আলিশার) ব্লাড ক্যানসারের চিকিৎসার জন্য দেশটিতে পাড়ি জমিয়েছেন অলিম্পিকে তিনটি দেশের প্রতিনিধিত্ব করা চুসোভিতিনা।

জন্মভূমি উজবেকিস্তানের প্রতিনিধি হয়ে এবার পঞ্চমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নিতে চান তিনি। সব মিলিয়ে এ পর্যন্ত অংশ নিয়েছেন টানা সাতটি অলিম্পিকে। একমাত্র জিমন্যাস্ট হিসেবে টানা সাতটি অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার রেকর্ডটি তিনি গড়েছেন ২০১৬ রিও-তে। চুসোভিতিনার সম্ভবত টোকিওতেই থেমে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল না। সিদ্ধান্তটি নিয়েছেন তিনি ছেলে আলিশার জন্য, ‘সে আমাকে নিয়ে অনেক দুশ্চিন্তা করে। হয়তো পড়ে গিয়ে মারাত্মক আঘাত পেতে পারি।’

উজবেকিস্তানে চুসোভিতিনা তরুণ জিমন্যাস্টদের প্রেরণা। দেশটির ডাক বিভাগের স্টাম্পে তাঁর ছবি আছে। বেইজিং অলিম্পিকে ভল্ট পারফরম্যান্সে পদক জিতেছিলেন চীন ও উত্তর কোরিয়ার জিমন্যাস্টদের সঙ্গে—যাঁরা তাঁর চেয়েছে প্রায় এক দশকের ছোট ছিলেন। সেবার অলিম্পিক শেষে দেশে ফিরে চিকিৎসকের কাছে খবর পান ছেলেটা সুস্থ হয়ে উঠেছে। সে অনুভূতিটা চুসোভিতিনার কাছে এমন, ‘একজন মায়ের জন্য এ খবরটা কোনো পদকের সঙ্গে তুলনীয় হতে পারে না।’

চুসোভিতিনার স্বামী বাখোদির কুরবানভ উজবেকিস্তানের হয়ে গ্রেকো-রোমান কুস্তি লড়েছেন ১৯৯৬ ও ২০০০ অলিম্পিকে। কিন্তু স্ত্রীর জন্য ক্যারিয়ার বিসর্জন দিয়েছেন তিনি। ছেলে অসুস্থ হলে তাঁর দেখাশোনার দায়িত্ব নেন কুরবানভ, ‘অষ্টমবারের মতো অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার বিষয়টি বাদ দিন। সে (চুসোভিতিনা) এমনিতেই আমাদের গর্বিত করেছে। আমি ও আমাদের ছেলে তাঁকে সাহায্য করার চেষ্টা করি।’

চুসোভিতিনা আপাতত টোকিও অলিম্পিকে তাকিয়ে। অবসর নেওয়ার পরের পরিকল্পনাও ঠিক করে রেখেছেন তিনি। তাসখন্দে একটি জিমন্যাস্টিকস একাডেমি গড়বেন উজবেক জিমন্যাস্টের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য, ‘আমি চাই দেশের মানুষ জিমন্যাস্টিকস ভালোবাসুক। এটা কত সুন্দর খেলা সেটি সবাই বুঝলে এমনিতেই বাচ্চাদের নিয়ে আসবে।’