যুবা ক্রিকেটে অধিনায়ক অথচ খেলেননি টেস্ট-ওয়ানডে

যুব দলকে নেতৃত্ব দিয়েও সাব্বির, আসিফ, মাহমুদুল, আশিকুররা খেলতে পারেননি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ফাইল ছবি
যুব দলকে নেতৃত্ব দিয়েও সাব্বির, আসিফ, মাহমুদুল, আশিকুররা খেলতে পারেননি আন্তর্জাতিক ম্যাচ। ফাইল ছবি
>

অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে কমপক্ষে ৫ ম্যাচে নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু কখনোই আন্তর্জাতিক ম্যাচ  খেলা হয়নি এমন চার ক্রিকেটারের গল্প শুনুন

অনূর্ধ্ব-১৯ দলটা তৈরিই করা হয় ভবিষ্যতের কথা ভেবে। বাংলাদেশের ক্রিকেটে সেই ১৯৮৯ সাল থেকেই এই উনিশের যুবারা জাতীয় ক্রিকেট দলের ‘পাইপলাইন’ হিসেবে কাজ করছে। এ দলটি থেকে বাংলাদেশ এমন অনেক ক্রিকেটারকে পেয়েছে, যারা পরবর্তী সময়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। পরিণত হয়েছেন বড় তারকায়। বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে গড়ে তোলা এই বয়সভিত্তিক দলে ২৭২ জন ক্রিকেটার খেলেছেন। এদের মধ্যে এ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে দেশকে প্রতিনিধিত্ব করেছেন ৮৫ জন।

জাতীয় ক্রিকেট দলকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নেতৃত্ব দিয়েছেন এমন ১৭ জনের ১৩ জনই অনূর্ধ্ব-১৯ দল থেকে উঠে আসা। কিন্তু অনূর্ধ্ব-১৯ দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন কিন্তু কখনোই জাতীয় দলে খেলতে পারেননি এমন ক্রিকেটারও আছেন বেশ কয়েকজন।

অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক ছিলেন, কমপক্ষে পাঁচটি ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন, কিন্তু কখনোই স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ম্যাচে খেলার সুযোগ পাননি, এমন ক্রিকেটারের সংখ্যা ৪ জন। সংগত কারণেই এই তালিকায় দক্ষিণ আফ্রিকায় যুব বিশ্বকাপ জয়ী বাংলাদেশ দলের কোনো খেলোয়াড়কে ধরা হয়নি। এই দলের অধিনায়ক আকবর আলী হলেও বিভিন্ন সময় আকবর আলীর অনুপস্থিতিতে ৮টি ম্যাচে যুব দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তৌহিদ হৃদয়।

যে চার ক্রিকেটার যুব দলকে নেতৃত্ব দিয়েও জাতীয় দল খেলতে পারেননি কিংবা খেললেও স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তারা হলেন—সাব্বির খান, মাহমুদুল হাসান, আসিফ আহমেদ ও আশিকুর রহমান। এঁদের মধ্যে সাব্বির খান জাতীয় দলে খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। খেলেছেন কমনওয়েলথ গেমসের ক্রিকেটেও। জাতীয় দলের হয়ে কয়েকটি সফরেও গিয়েছিলেন। কিন্তু কখনোই স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে পারেননি তিনি। সাব্বির ছিলেন ১৯৯৮ সালে দক্ষিণ আফ্রিকাতে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে বাংলাদেশের অধিনায়ক। সেবার প্রথমবারের মতো এ টুর্নামেন্টে অংশ নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে প্লেটপর্বে চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। ৭টি ম্যাচে তিনি অধিনায়ক।

 সাব্বির জাতীয় দলে খেললেও মাহমুদুল হাসান, আশিকুর রহমান ও আসিফ আহমেদ কখনো জাতীয় দলে খেলারই সুযোগ পাননি।  মাহমুদুল খেলেছেন দুটি যুব বিশ্বকাপ। ২০০৮ সালে মালয়েশিয়াতে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে তিনি দলের সাধারণ সদস্য হলেও ২০১০ সালে নিউজিল্যান্ডের টুর্নামেন্টে তিনি ছিলেন দলের অধিনায়ক। ৩৫টি ম্যাচে তিনি দলের অধিনায়ক ছিলেন। ৮ ম্যাচে দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া আশিকুর রহমান ২০০৪ সালে দেশের মাটিতে অনুষ্ঠিত যুব বিশ্বকাপে ছিলেন অধিনায়ক। সেবারও প্লেট চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল বাংলাদেশ। এই তিনজনের সঙ্গে আসিফ আহমেদ যুব বিশ্বকাপে না হলেও বিভিন্ন সময় ৬টি যুব আন্তর্জাতিক ম্যাচে দেশের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন।

তাদের ক্যারিয়ার
সাব্বির খান ছিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান ও অফব্রেক বোলার। ১৯৯৮ সালে যুব বিশ্বকাপের পর ১৯৯৯ সালে তাঁর প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে অভিষেক হয়। ২০০৭-০৮ পর্যন্ত খেলেছেন ৫৭টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচ। দুটি সেঞ্চুরি আছে তাঁর। বল হাতে ২১৩টি উইকেট যথেষ্ট ভালো রেকর্ড। ৫১টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচও খেলেছেন। সেখানেও ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি আছে। উইকেট পেয়েছেন ৬৫টি। এক সময় জাতীয় দলের জন্য যথেষ্ট সম্ভাবনাময় হিসেবে বিবেচিত ছিলেন। সে কারণেই জাতীয় দলে স্থান পেয়েছিলেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য তাঁর ২০০০ সালে টেস্ট মর্যাদা পাওয়ার পর স্বীকৃত আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাননি তিনি। খেলোয়াড় হিসেবে খেলতে না পারলেও সাব্বির আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের তিন ফরম্যাটেই এখন ম্যানেজার হিসেবে জাতীয় দলের অংশ।

মাহমুদুল হাসান ছিলেন যথেষ্ট সম্ভাবনাময় ক্রিকেটার। ৭২টি প্রথম শ্রেণি ম্যাচ খেলেছেন। লিস্ট ‘এ’ খেলেছেন ১০৪টি। দুই ধরনের ক্রিকেটেই ২ হাজারের বেশি রান তাঁর। সেঞ্চুরি আছে দুই ধরনের ক্রিকেটেই। অফব্রেক বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তাঁর উইকেটসংখ্যা ১০৪টি। সর্বশেষ জাতীয় লিগেও তিনি খেলেছেন রংপুর বিভাগের হয়ে।

আশিকুর রহমানকে ২০০৪ সাল দেশের মাটিতে যুব বিশ্বকাপে হঠাৎ করেই অধিনায়ক বানিয়ে দেওয়া হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়েছিল তাঁর ক্ষুরধার ক্রিকেট মস্তিষ্ক। সে সময়ের অস্ট্রেলীয় কোচ রিচার্ড ম্যাককিন্স তেমনটাই মনে করতেন। তবে তিনি তাঁর ক্যারিয়ার বেশি দূর নিতে পারেননি। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেননি।তবে রেকর্ডপত্র ঘাঁটলে দেখা যায় সিটি ক্লাব ও র‌্যাপিড ফাউন্ডেশন নামের একটি দলের হয়ে তিনি খেলেছেন। ঘরের মাঠে ২০০৪ সালে প্লেট বিজয়ী যুবদলকে নেতৃত্ব দিয়ে পর্দার আড়ালেই চলে যান তিনি। বর্তমানে তিনি তথ্যপ্রযুক্তিবিদ হিসেবে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত।

আসিফ আহমেদের প্রথম শ্রেণির ক্যারিয়ার সে তুলনায় অনেক ভালো। তিনি ৫৮টি প্রথম শ্রেণির ম্যাচে ৩৬.২৭ গড়ে করেছেন ৩ হাজার ৫১৯ রান। ডান হাতি এই ব্যাটসম্যানের প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ডাবল সেঞ্চুরিও আছে। মোট সেঞ্চুরির সংখ্যা ৮টি। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ৮৩ ম্যাচ খেলে ১ হাজার ৯৯৬ রান করেছেন। অফব্রেক বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনি উইকেট পেয়েছেন ৩৪টি। চট্টগ্রাম বিভাগের হয়ে সর্বশেষ প্রথম শ্রেণির ম্যাচ খেলেছেন ২০১৮ সালে। ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লিগে তিনি শেষবার খেলেছেন গত বছর, লিজেন্ড অব রূপগঞ্জের হয়ে।