টাকার খেলায় বার্সা-রিয়ালকে যেভাবে হারাচ্ছে পিএসজি

নেইমার-এমবাপ্পের ক্লাবই অর্থনৈতিকভাবে এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাব। ছবি: রয়টার্স
নেইমার-এমবাপ্পের ক্লাবই অর্থনৈতিকভাবে এখন বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাব। ছবি: রয়টার্স

একটি শিক্ষিত জাতির জন্য শিক্ষিত মা চাওয়া হয়েছিল। বিশ্ব ফুটবলে আর্থিকভাবে সবচেয়ে শক্তিশালী দল হতে চাইলেও মধ্যপ্রাচ্যের মালিক চেয়ে বসার সময়ও হয়তো হয়েছে!

সকারেক্স ফুটবল ফাইন্যান্স ১০০-এর ২০২০ সালের প্রতিবেদন তাই বলছে। তেলের অর্থে বলীয়ান প্যারিস সেন্ট জার্মেই এখন অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাব। যাদের হটিয়ে শীর্ষস্থান পেয়েছে পিএসজি, সেই ম্যানচেস্টার সিটির শক্তির জায়গাও অবশ্য মালিকের পকেট।

সকারেক্স ফুটবল ফাইন্যান্স একটি ক্লাবের বর্তমান খেলোয়াড়দের মূল্য, স্থাবর সম্পত্তি ব্যাংকে থাকা অর্থ ও মালিকের বিনিয়োগ ও দেনার পরিমাণের ওপর ভিত্তি করে একটি আর্থিক সূচক বানিয়েছে। তাতে ৫.৩১৮ পয়েন্ট পেয়ে তৃতীয় বছরে এসে ম্যানচেস্টার সিটিকে টপকে গেছে পিএসজি। ৫.১৯৭ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে আছে গার্দিওলার দল। এ দুই দল থেকে বেশ পিছিয়ে তিনে থাকা বায়ার্ন মিউনিখ (৩.৮৮৮)। চারে টটেনহাম হটস্পার (৩.৪৪১)। পাঁচে এসে জায়গা করে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ (৩.৩৩৬)। অর্থনৈতিকভাবে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ক্লাবের শীর্ষ দশে রিয়ালের পরেই আছে আর্সেনাল, চেলসি, লিভারপুল, জুভেন্টাস, বরুসিয়া ডর্টমুন্ড।

রিয়ালের চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনা শীর্ষ দশ থেকে ছিটকে গেছে এবার, আছে ১২ নম্বরে (২.০৩৬)। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে ২২ পয়েন্টে এগিয়ে শীর্ষে থাকা লিভারপুল আছে আটে (২.৬১৬)। মাঠের পারফরম্যান্স ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আর্থিক দিকেও প্রভাব ফেলেছে। ১৬ নম্বরে নেমে গেছে সবচেয়ে বেশি বার ইংলিশ লিগ জেতা ক্লাবটি।

সকারেক্স ফুটবল ফাইন্যান্সের এই প্রতিবেদন বেশ মজার কিছু দিক তুলে ধরেছে। যেমন নেইমার-এমবাপ্পের জন্য পিএসজি ৪০০ মিলিয়ন ইউরো খরচ করা দল হলেও তাদের কোনো দেনা নেই এখন। ওদিকে নতুন স্টেডিয়াম বানানো টটেনহামের দেনার পরিমাণ ৮৯ কোটি ৮০ লাখ ইউরো। দেনার দিক থেকে তাদের পরেই আছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ৭৯ কোটি ৯৮ লাখ ইউরো দেনা করে রেখেছে রেড ডেভিলরা। আর ৬৫ কোটি ২১ লাখ ইউরো দেনা নিয়ে তিনে আছে বার্সেলোনা।

পিএসজিকে এত ভালো অবস্থানে এনে দিয়েছে তাদের কাতারের মালিক। মালিকদের কাছ থেকে এ ক্লাবের সম্ভাব্য বিনিয়োগ হিসেবে ১০০ কোটি ৩০ লাখ ইউরো দেখানো হয়েছে। অনুমিতভাবেই মালিকের কাছ থেকে অর্থ পাওয়ায় ওপরের দিকেই আছে সিটি (৬৪ কোটি ৭০ লাখ ইউরো)। মজার ব্যাপার সিটিকে এ ক্ষেত্রে টপকে গেছে এমএলএসের দল লস অ্যাঞ্জেলস এফসি। মালিকের কাছ থেকে ৬৬ কোটি ১০ লাখ ইউরো সম্ভাব্য বিনিয়োগ এ ক্লাবের। এ দিকটাই বার্সেলোনা ও রিয়ালকে পিছিয়ে দিয়েছে। সদস্যদের নিয়ে গঠিত এ দুই ক্লাবে কোনো মালিক না থাকায় বিনিয়োগের সুযোগও নেই।

দেনায় এগিয়ে থাকায় স্থাবর সম্পত্তিতেও এগিয়ে টটেনহাম। নতুন স্টেডিয়াম স্থাপন করা এ দলের স্থাবর সম্পত্তির পরিমাণ ১১৯ কোটি ইউরো। অনেক পিছিয়ে দুইয়ে আছে আর্সেনাল (৪৮ কোটি)। তিনে আরেক ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি (৪৬ কোটি)। ব্যাংকে অর্থ রাখায়ও দাপট আর্সেনালের। ব্যাংকে ২৬ কোটি ১৫ লাখ ইউরো নাকি পড়ে আছে তাদের। তবে ইউনাইটেডকে টপকাতে পারেনি তারা। ২৭ কোটি ৩৫ লাখ ইউরো ব্যাংকে নিয়ে বসে আছে ওলে গুনার সুলশারদের দল।

খেলোয়াড়ের মূল্যটাই সবচেয়ে বেশি চমক জাগিয়েছে। বার্সেলোনা বা রিয়াল মাদ্রিদের পক্ষে খেলোয়াড়ের মূল্যে শীর্ষে ওঠা সম্ভব না, সেটা এখন অনুমিত। কিন্তু বর্তমান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন লিভারপুল কিংবা কাতারের ধনকুবেরের ক্লাব পিএসজিকেই এগিয়ে রাখছেন বিশেষজ্ঞরা। যদিও পেপ গার্দিওলার তরুণ ফুটবলারদের ক্লাবে টানার ক্ষমতাই সবচেয়ে বেশি মূল্যবান প্রমাণিত হয়েছে। হিসেব অনুযায়ী ম্যানচেস্টার সিটির সঙ্গে যুক্ত খেলোয়াড়দের মূল্য ১২৮ কোটি ইউরো। এরপরই আছে রিয়াল মাদ্রিদ (১১৯কোটি)। বার্সেলোনাও খুব একটা পিছিয়ে নেই (১১৮ কোটি ইউরো)। মাত্র ১ কোটি ইউরোর জন্য বার্সেলোনাকে ছুঁতে পারেনি লিভারপুল। ৮৭ কোটি ২৫ লাখ ইউরোতে পাঁচে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ।