বোল্টের চেয়েও জোরে দৌড়ান এই নির্মাণশ্রমিক?

মোষ নিয়ে দৌড়াচ্ছেন শ্রীনিবাস গৌড়া। ছবি: আইএএনএস টুইটার পেজ
মোষ নিয়ে দৌড়াচ্ছেন শ্রীনিবাস গৌড়া। ছবি: আইএএনএস টুইটার পেজ
>ভারতের এক ‘কাম্বালা জকি’র সঙ্গে অলিম্পিকে আটবার সোনার পদকজয়ী উসাইন বোল্টের তুলনা চলছে

মানুষের তুলনার অভ্যাস নতুন কিছু না। খেলাধুলায় তো বটেই। প্রতিশ্রুতিশীল কাউকে দেখলে রব ওঠে নতুন ‘ম্যারাডোনা, মেসি, রোনালদো, টেন্ডুলকার, কোহলি...।’ এরা সবাই রেফারেন্স পয়েন্ট। ১০০ মিটার দৌড়ে যেমন উসাইন বোল্ট। সম্ভাবনাময় কোনো স্প্রিন্টারকে ১০০ মিটার ও ২০০ মিটারে বিশ্ব রেকর্ডধারী জ্যামাইকান কিংবদন্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়। তবে ভারতে বোল্টের সঙ্গে যাঁর তুলনা উঠেছে তিনি কোনো পেশাদার দৌড়বিদ নন।

শ্রীনিবাস গৌড়া একজন খণ্ডকালীন নির্মাণশ্রমিক। এর পাশাপাশি ‘কাম্বালা জকি’। বিষয়টি খুলে বলা যাক। কর্ণাটকে ভীষণ জনপ্রিয় ও ঐতিহ্যবাহী এ দৌড়কে স্থানীয় তুলু ভাষায় বলা হয়—কাম্বালা। নভেম্বর থেকে মার্চের মধ্যে জোয়াল পরানো এক জোড়া মোষ নিয়ে কৃষকের দৌড় প্রতিযোগিতা। সাধারণত ১৩২ মিটার থেকে ১৪২ মিটার দূরত্বের দৌড় প্রতিযোগিতা হয়ে থাকে কাম্বালা। ধানের কাদামাখা জমিতে মোষের সঙ্গে খালি পায়ে দৌড়ে থাকেন কৃষক।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, এবার কাম্বালা দৌড়েই ১৪২ মিটার দূরত্ব ১৩.৪২ সেকেন্ডে পাড়ি দিয়েছেন ২৮ বছর বয়সী শ্রীনিবাস। কাম্বালার ইতিহাসে এটি দ্রুততম দৌড়ের রেকর্ড। ৩০ বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। এরপর থেকেই বোল্টের সঙ্গে তুলনা চলছে শ্রীনিবাসের। ১০০ মিটার ৯.৫৮ সেকেন্ডে পাড়ি দিয়ে দ্রুততম দৌড়ের রেকর্ড গড়েছিলেন বোল্ট। অঙ্কের হিসেবে শ্রীনিবাস কাম্বালায় ওই দৌড়ে ১০০ মিটার পারি দিয়েছেন ৯.৫৫ সেকেন্ডে! ২০০৯ বার্লিন বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপে বোল্টের বিশ্ব রেকর্ড গড়া দৌড়ের চেয়ে ০.০৩ সেকেন্ড দ্রুততম!

ভারতের সাংসদ শশী থারুর এ নিয়ে আজ টুইট করেন, ‘উসাইন বোল্টের চেয়েও দ্রুতগামী? কর্ণাটকের লোকটি মোষ নিয়ে ১০০ মিটার ৯.৫৫ সেকেন্ডে পাড়ি দিয়েছে। ভারতের অ্যাথলেটিকস অ্যাসোসিয়েশনকে বলছি তাকে নিজেদের অধীনে নিয়ে অলিম্পিক চ্যাম্পিয়ন বানাতে। জানি না এমন আরও কত প্রতিভা লুকিয়ে আছে!’

শ্রীনিবাস গৌড়া। ছবি: টুইটার
শ্রীনিবাস গৌড়া। ছবি: টুইটার

স্থানীয় কাম্বালা একাডেমিতে এ দৌড়ের ওপর প্রশিক্ষণ নিয়েছেন শ্রীনিবাস। তিনি নিজে অবশ্য বোল্টের সঙ্গে তুলনায় নারাজ। শুধু এটুকু বলেছেন, ‘কাম্বালা ভালোবাসি। আমার এ সাফল্যের পেছনে দুটি মোষেরও কৃতিত্ব রয়েছে। তারা খুব দ্রুত দৌড়েছে। আমি অনুসরণ ও পরিচালনা করেছি।’ বিশেষজ্ঞরা অবশ্য দু-রকম কথা বলছেন। মোষের সঙ্গে দৌড়ানোয় শ্রীনিবাসের দৌড়ের গতিতে তাদেরও ভূমিকা আছে। মোষ টেনে নিয়েছে আরকি। আবার কাদাজলের মাঠে খালি পায়ে দৌড়ানোয় শ্রীনিবাসের গতিও কমার কথা স্বাভাবিক ট্র্যাকের তুলনায়।

কাম্বালা একাডেমির সভাপতি অধ্যাপক গুণাপালা কাদাম্বাও শ্রীনিবাসকে বোল্টের সঙ্গে তুলনা করছেন না। তাঁর প্রশংসা করে কাদাম্বা বলেন, ‘আমরা শ্রীনিবাসকে নিয়ে গর্বিত। সে একাডেমির প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিল। এ মৌসুমে আয়োজিত ১১টি কাম্বালায় সে ৩২টি পুরস্কার জিতেছে। প্রায় প্রতিটি কাম্বালায় অন্তত দুটি করে পুরস্কার জিতেছে। তবে বোল্টের সঙ্গে তুলনা করছি না। কারণ তাঁর দৌড়ের সময় নিয়ে আমরা ঠিক নিশ্চিত না। শুধু ফিনিশে লেজার নেটওয়ার্ক সিস্টেম ও ইলেকট্রনিক টাইমিং আছে। কাম্বালায় দৌড়ের ট্র্যাকও আলাদা হয়।’

ভারতের খ্যাতনামা ব্যবসায়িক গ্রুপ ‘মহেন্দ্র’-এর চেয়ারম্যান আনন্দ মহেন্দ্র শ্রীনিবাসকে নিয়ে টুইট করেন, ‘তার শরীর দেখলেই বোঝা যায় অসাধারণ এক অ্যাথলেট। এখন কিরণ রিজিজু হয় তাকে ১০০ মিটার স্প্রিন্টার বানাবে নতুবা কাম্বালা দৌড়টা আমরা অলিম্পিকে দেখতে চাই। শ্রীনিবাসের জন্য আমরা সোনার পদক চাই!’ আনন্দ মহেন্দ্রর টুইট রি-টুইট করে ভারতের মন্ত্রী কিরণ রিজিজু জানান, ‘কর্ণাটকের শ্রীনিবাসকে গৌড়াকে কোচদের মাধ্যমের ট্রায়ালের ব্যবস্থা করা হবে।’

শশী থারুরের টুইট। ছবি: টুইটার
শশী থারুরের টুইট। ছবি: টুইটার

২০১৩ সাল থেকে কাম্বালায় অংশ নিচ্ছেন শ্রীনিবাস। এ পর্যন্ত ২৮টি পদক জিতেছেন। পশুদের ওপর অত্যাচারের জন্য এ দৌড় একবার বন্ধ করার আবেদন উঠেছিল আদালতে। কিন্তু ২০১৬ সালে এ দৌড়ের ছাড়পত্র দেয় ভারতের আদালত।