অশ্বিনকে ঠেকাতে হাতের আঙুল কেটে ফেলার হুমকি

ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আঙুল হারানোরই হুমকি পেয়েছিলেন অশ্বিন। ছবি: এএফপি।
ক্রিকেট খেলতে গিয়ে আঙুল হারানোরই হুমকি পেয়েছিলেন অশ্বিন। ছবি: এএফপি।
>ম্যাচের আগে অশ্বিনকে আটকে রেখেছিল প্রতিপক্ষ দলের তিন-চার সমর্থক। তাঁর আঙুল ফেলে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছিল।

ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির ভারত দলে ব্রাত্য হয়ে পড়েছেন আড়াই বছরের বেশি হয়ে গেল। আন্তর্জাতিক মঞ্চে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের দেখা মেলে এখন শুধু টেস্টেই। একসময় স্পিনে প্রতিপক্ষকে ঘূর্ণি খাইয়েছেন সব সংস্করণে, এখন সে ঘূর্ণি চলে শুধু লাল বলে।

৩৩ বছর বয়সী ভারতীয় স্পিনারকে ঘিরে এখন প্রতিপক্ষের পরিকল্পনায় হয়তো তাঁর বোলিংয়ের ধরন, আঙুলের কোন প্যাঁচে কোন রহস্য লুকিয়ে সেসবের কম্পিউটার বিশ্লেষণ চলে। তবে এতে বোধ হয় মোটেও গা করেন না অশ্বিন। অন্তত ১৮-১৯ বছর আগের স্মৃতি মনে করলে তো এসব তাঁর কাছে খেলোই লাগার কথা! সে সময় কোনো বিশ্লেষণ-টিশ্লেষণ চলত না। বরং অশ্বিনকে ঠেকাতে একবার নাকি প্রতিপক্ষ তাঁর হাতের আঙুলই কেটে ফেলার হুমকি দিয়েছিল!

ওয়েলিংটনে আগামী শুক্রবার থেকে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভারতের দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটি শুরু হবে। এ সিরিজে দলে আছেন অশ্বিন। তবে ২০১০ সালে ভারতীয় দলে অভিষেকের পর ৭০টি টেস্ট, ১১১ ওয়ানডে ও ৪৬টি টি-টোয়েন্টি খেলা অশ্বিন ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশি ভয়টা সম্ভবত পেয়েছিলেন ক্রিকেটকে পেশা হিসেবে বেছে নেওয়ারও অনেক আগে। ভারতীয় ক্রিকেট–বিষয়ক ওয়েবসাইট ক্রিকবাজে সে গল্পই জানিয়েছেন অশ্বিন।

ক্রিকেটে মজে থাকা আর দশটা কিশোরের মতোই সে সময় অশ্বিন আর তাঁর বন্ধুরা টেনিস বলে আয়োজিত অনেক টুর্নামেন্টে খেলতে যেতেন। অনেক জায়গায় অশ্বিনকে ‘খ্যাপ’ খেলতেও নিয়ে যাওয়া হতো। একবার এক টুর্নামেন্টের ফাইনালে খেলার কথা অশ্বিনের। সেদিনই ঘটে ঘটনাটা।

অশ্বিনের মুখেই শুনুন ভয়ংকর সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা, ‘আমার বন্ধুরা আমাকে টেনিস বলের টুর্নামেন্টে খেলতে নিয়ে যেত। আমার বাবা মোটেও সেটা পছন্দ করতেন না। রাস্তার ধারে যে আমি ক্রিকেট খেলতাম, সেটাও তাঁর ভালো লাগত না। এমনই এক দিন আমার একটা ফাইনাল খেলার কথা। আর (চেন্নাইয়ে) আমাদের সংস্কৃতিটাই এমন যে, মানুষ এসব টুর্নামেন্ট জেতাকে অনেক গর্বের মনে করত। তা আমি ফাইনাল খেলতে মাঠের উদ্দেশে রওনা দেব, এমন সময়ে রয়্যাল এনফিল্ডে (মোটরসাইকেল) করে চার-পাঁচজন মানুষ এল। অনেক পেশিবহুল, লম্বা ছিল ওরা।’

লোকগুলোকে দেখে প্রথমে ভুলই ভেবেছিলেন অশ্বিন। তখনো কোনো বিপদের শঙ্কা তাঁর মাথায়ই আসেনি, ‘ওরা আমাকে নিতে এসেছিল। বলল, ‘‘চলো যেতে হবে।’’ আমি বললাম, ‘‘কে আপনারা?’’ ওরা বলল, ‘‘তুমি তো ম্যাচটাতে খেলছ, তাই না? আমরা তোমাকে নিতে এসেছি।’’ আমি তো ভাবছিলাম, ‘‘বাহ! ওরা আমাকে নেওয়ার জন্য গাড়িও পাঠিয়েছে!’’ ভালোই লাগছিল।’

মাঠের কাছাকাছি নিয়ে গিয়ে অশ্বিনের বেশ খাতিরই করছিলেন মানুষগুলো, ‘ওই সময় আমার বয়স ১৪-১৫ হবে। ওরা আমাকে খুব ঝা–চকচকে একটা চায়ের দোকানে নিয়ে গেল। চেন্নাইয়ে চায়ের দোকানে সংস্কৃতিটা কিন্তু অন্য রকম। প্রতিটি মাঠের পাশেই এমন চায়ের দোকান আছে, যেগুলোতে অনেক বেঞ্চ-টেঞ্চ থাকে। ওরা আমাকে বসিয়ে ভাজি–পোড়া অর্ডার দিল। বলল, ‘‘খাও। ভয় পেয়ো না।’’

এতটুকু পর্যন্তই আনন্দেই ছিলেন অশ্বিন। এরপরই ভুলটা ভাঙল ভারতীয় স্পিনারের, ‘ততক্ষণে ৩.৩০টা-৪টার মতো বেজে গেছে। আমি ওদের বললাম, চলো যাই। তখন ওরা বলল, ‘‘না, না, আমরা আসলে তোমার প্রতিপক্ষ দলের লোক। তুমি যাতে না খেলো, সেটা নিশ্চিত করতেই এসেছি আমরা। তুমি যদি এখান থেকে মাঠে গিয়ে খেলতে নামো, আমরা নিশ্চিত করব তোমার হাতের আঙুল একটাও আর থাকবে না।’’

ভয়ংকর অভিজ্ঞতাই বটে!