'এভাবে বাড়ি ফিরে বাবা-মায়ের কাছে কী জবাব দেব?'

স্বপ্নচূড়া অ্যান্ড আক্কেলপুর ক্লাবের ফুটবলাররা। ছবি: সংগৃহীত
স্বপ্নচূড়া অ্যান্ড আক্কেলপুর ক্লাবের ফুটবলাররা। ছবি: সংগৃহীত
>

প্রথমবার নারী ফুটবলের দলবদলে অংশ নিয়েও খেলা হচ্ছে না সিলেটের দল স্বপ্নচূড়া অ্যান্ড আক্কেলপুর ক্লাবের

মিডফিল্ডার উমা রানী দাসের মন ভীষণ খারাপ। গত দুদিন কেঁদেই চলেছেন। কাঁদতে কাঁদতে রীতিমতো অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সুবর্ণা আক্তার ও তমা রানী দাস। প্রথমবারের মতো মেয়েদের ফুটবল লিগে অংশ নিতে সিলেট থেকে ঢাকায় এসেছেন এই মেয়েরা। দলবদলে অংশ নিলেও শেষ পর্যন্ত ফুটবল ফেডারেশন উমা দাসদের স্বপ্নচূড়া অ্যান্ড আক্কেলপুর ক্লাবকে এবারের লিগ থেকে বাদ দিয়েছে।

তিন দফা পেছানোর পর ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হবে মেয়েদের ফুটবল লিগ। সেখানে আট দল অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত সাত দল নিয়ে হচ্ছে এই লিগ। এই ক্লাবকে বাদ দেওয়ার ব্যাখ্যায় বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগ জানান, দলটির অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক দুই রকম তথ্য দিয়েছেন। কোচও কিছু ফুটবলার নিয়ে মাঝে লাপাত্তা হয়ে গিয়েছিল। এই দলকে লিগে নিলে খেলায় সেটার প্রভাব পড়তে পারে। লিগ নিয়ে সমালোচনা হতে পারে। এ জন্য এমন সিদ্ধান্ত।

ক্লাব কর্মকর্তাদের বলির পাঁঠা হতে হচ্ছে ফুটবলারদের। বিষয়টা কিছুতেই মানতে পারছেন না উমা রানী, ‘আমরা অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় খেলতে এসেছি। এ খবর শোনার পর থেকে আমাদের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়েছে। আমরা খেলতে চাই। এভাবে বাড়ি ফিরে গেলে বাবা–মায়ের কাছে কী জবাব দেব?’

গত ২৫ জানুয়ারি থেকে মিরপুরের ধামালকোটে একটি ফ্ল্যাটে বাড়ি ভাড়া করে ২৩ সদস্যের দল নিয়ে আছেন ম্যানেজার রাকিব আহমেদ। বাফুফের সিদ্ধান্তে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এই কর্মকর্তা , ‘আমরা এত কষ্ট করে মেয়েদের এখানে খেলতে এনেছি, কিন্তু খেলা শুরু হতে না হতেই স্বপ্ন ভেঙে গেল আমাদের। আসলে ক্লাবের যে সমস্যা, তা আমরা মিটিয়ে ফেলেছি। কিন্তু বাফুফে বলছে, আমরা খেলতে পারব না। এটা খুবই হতাশাজনক কথা।’

অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় খেলতে এসেছেন মেয়েরা। ছবি: সংগৃহীত
অনেক স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় খেলতে এসেছেন মেয়েরা। ছবি: সংগৃহীত

ক্লাবের সভাপতি পারভেজ আমির এখনো আশায় আছেন দলটিকে শেষ পর্যন্ত মাঠে নামাতে পারবেন, ‘মোহামেডান, আবাহনী, শেখ জামাল, শেখ রাসেল দল গড়েনি এবার। আমার স্বপ্ন ছিল এই মেয়েদের ঢাকায় খেলাব। গরিব ঘরের মেয়েরা ঢাকায় এসেছে বড় স্বপ্ন নিয়ে। কিন্তু বাফুফের এক সিদ্ধান্তে সব শেষ। এখানে ফুটবলারদের তো কোনো দোষ নেই। এ জন্যই বেশি খারাপ লাগছে। আশা করছি, বাফুফে সিদ্ধান্তটা পুনর্বিবেচনা করবে।’

ক্লাবটির সাধারণ সম্পাদক জাতীয় দলের সাবেক ফুটবলার কায়সার হামিদ। তাঁর দাবি দলে কোনো অন্তর্দ্বন্দ্ব নেই, ‘১২ ফেব্রুয়ারি আমরা একটা চিঠি পেলাম যেখানে লেখা, বাদ দেওয়া হয়েছে আমাদের। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি চিঠি দিয়ে বাফুফেকে জানিয়েছি যে আমাদের ক্লাবে কোনো সমস্যা নেই। ক্লাবের অন্তর্দ্বন্দ্ব থাকতেই পারে। তাই বলে বাফুফে খেলতে দেবে না, এটা কেমন কথা? আমি মোহামেডানে দীর্ঘদিন খেলেছি। সেখানেও কত রকম সমস্যা দেখেছি। কিন্তু এর জন্য ফুটবল ফেডারেশন কখনো হস্তক্ষেপ করেনি। সিদ্ধান্ত পুনঃ বিবেচনার আবেদন করেও সুরাহা পাইনি আমরা।’