প্রোটিয়াদের পিটিয়ে ছাতু বানালেন মরগানরা

মরগানের ঝড় ম্যাচটাকে সহজ বানিয়ে দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স
মরগানের ঝড় ম্যাচটাকে সহজ বানিয়ে দিয়েছে। ছবি: রয়টার্স

১, ২...এরপর তো ৩-ই আসে!

দক্ষিণ আফ্রিকা-ইংল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচে দুই দলের মধ্যে ব্যবধান ছিল মাত্র ১ রানের। দ্বিতীয় ম্যাচে দুই শ ছাড়ানো স্কোরকেও প্রায় মামুলি বানিয়ে ফেলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। কিন্তু শেষ দিকে হিসাব মেলাতে না পেরে হেরেছে ২ রানে। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে এমন টান টান উত্তেজনা থেকে রেহাই পেতে ২২২ করেছিল স্বাগতিক দল। কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হলো না। উত্তেজনা ঠিকই এড়ানো গেছে, তবে সেটা ইংলিশদের কল্যাণে। দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিয়েছে সফরকারীরা। ২-১ ব্যবধানে সিরিজও জিতে নিয়েছে তারা।

গত ম্যাচে ভয়ংকর মূর্তিতে আবির্ভূত হয়েছিলেন কুইন্টন ডি কক। ২ চারের সঙ্গে ৮ ছক্কা মেরেছিলেন মাত্র ২২ বলে। সেদিনের মতো আগ্রাসী হতে পারেননি ডি কক। আজ বাউন্ডারির সংখ্যাও নেমে এসেছে অর্ধেকে। এক চারের সঙ্গে ঠিক চারটি ছক্কা। রানটাও আগের ম্যাচের প্রায় অর্ধেক। ৬৫–এর বদলে করেছেন ৩৫, গত ম্যাচের চেয়ে ২ বল বেশি খেলেও। তবু ৪৬ বলের জুটিতে ৮৪ রান পেয়েছে প্রোটিয়ারা। কারণ, আগ্রাসনে অধিনায়ককেও ছাড়িয়ে গেছেন টেন্ডা বাভুমা। ডি ককের সমান ২৪ বলেই ৪ চার ও ৩ ছক্কা মেরেছেন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটিটা একদম হাতের নাগালে এসেও ধরা দেয়নি। আদিল রশিদের বলে বোল্ড হয়েছেন ৪৯ রানে।

২ রানের মধ্যে ডি কক ও বাভুমা ফিরলেও স্বাগতিকেরা পথ হারায়নি হেনরিখ ক্লাসেনের জন্য। ইংলিশ বোলারদের পেস নিয়ে খেলেছেন রীতিমতো। যতই তেড়েফুঁড়ে আসার চেষ্টা করেছেন মাক উড, টম কারেনরা, তত দ্রুত বল ছুটেছে বাউন্ডারির দিকে। ৩৩ বলে সমান চারটি করে চার-ছক্কায় ৬৬ রান করেছেন। তবে বড় অসময়ে ফিরেছেন ক্লাসেন। ইনিংসের ২১ বল বাকি, এমন অবস্থায় ক্লাসেনের বিদায়ের পরও বলপ্রতি দুই রান করে তুলেছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাতে মূল অবদান ডেভিড মিলারের (২০ বলে ৩৫)।

তাড়া করতে নেমে ইংল্যান্ডের শুরুটা ছিল দুর্দান্ত। মাত্র দ্বিতীয় ওভারেই জেসন রয় ফিরেছেন। কিন্তু তার আগের বলেই ছক্কা মেরে রয় পুরো দলের মনোভাব টের পাইয়ে দিয়েছেন। অন্যদিকে জস বাটলার উদ্ভাবনী সব শটে ডেল স্টেইনের সুইং পাওয়ার চেষ্টা শেষ করে দিয়েছেন। বাটলার ও জনি বেয়ারস্টো দক্ষিণ আফ্রিকার সব বোলারেরই কঠিন পরীক্ষা নিয়েছেন। ফিফটি ছুঁতে ৫ ওভার খেলে ফেললেও পরের পঞ্চাশ মাত্র ২৬ বলে তুলে ফেলেছেন এ দুজন। ২৩ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া বাটলার (৫৭) ফিরেছেন স্কুপ করতে গিয়ে। ১০৬ রানে বাটলারকে হারিয়েও ইংল্যান্ডের খুব একটা ক্ষতি হয়নি।

বেয়ারস্টো ঠিকই আক্রমণ চালিয়ে গেছেন। মাত্র তিন ওভার পরই অবশ্য ফিরেছেন এই ব্যাটসম্যান (৬৪)। এর মাঝেই ২৭ বলে ফিফটি করা বেয়ারস্টো ফিকোয়াওর বলে বোল্ড হওয়ার সময় দলকে রেখে যান ১৪০ রানে। অবশ্য এর ৩ রান আগেই তৃতীয় উইকেট হারাতে পারত ইংল্যান্ড। কিন্তু ডোয়াইন প্রিটোরিয়াসের বলে ডেভিড ম্যালানের ক্যাচ হাতে রাখতে পারেননি বাভুমা। ৮ রানে পাওয়া জীবন অবশ্য ৩ রান পরেই হেলায় হারিয়েছেন ম্যালান। ১৪৫ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড।

৩৮ বলে ৭৮ রান দরকার এ অবস্থায় জুটি বাঁধেন এউইন মরগান ও বেন স্টোকস। একদিকে দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারদের অনিয়ন্ত্রিত বোলিং, অন্যদিকে মরগানের পাওয়ার হিটিংয়ে ম্যাচটা একদম সহজ বানিয়ে ফেলে ইংল্যান্ড। শেষ ৩ ওভারে ৩৩ রান দরকার ছিল তাদের। সেটাকে ২ ওভারে ১৭-তে নামিয়ে আনে স্টোকস। পরের ওভারের প্রথম বলেই স্টোকস (২২) ফেরায় একটু আশা জেগেছিল দক্ষিণ আফ্রিকার। এক বল পরে ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন মঈন আলীও। প্রিটোরিয়াস ফেলে দিয়েছেন তুলনামূলক সহজ এক ক্যাচ। পরের দুই বলে মরগানের ষষ্ঠ ও সপ্তম ছক্কা লক্ষ্যটাকে ৩-এ নামিয়ে এনেছে। ২১ বলে ফিফটি ছুঁয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক। লুঙ্গি এনগিডির পরের বলে ২ রান নিয়ে ম্যাচটা সমতায় এনে দিয়েছেন মরগান।

শেষ ওভারের প্রথম বলে চার মেরে আনুষ্ঠানিকতা সেরেছেন মঈন আলী।