'এখনকার গোলরক্ষকদের প্রাথমিক জ্ঞান কম'

সিকি শতকের গোলরক্ষক–ক্যারিয়ার বিপ্লবের। ছবি: প্রথম আলো
সিকি শতকের গোলরক্ষক–ক্যারিয়ার বিপ্লবের। ছবি: প্রথম আলো
>কদিন আগে সাতসকালে শেখ জামাল ধানমন্ডি মাঠে হাজির বিপ্লব ভট্টাচার্য। মোহামেডান ফুটবল দলের অনুশীলন দেখছিলেন। এ বছরই আনুষ্ঠানিকভাবে একটি ম্যাচ খেলে অবসর নিতে চান। কিন্তু তার আগে এ মৌসুম থেকেই শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের গোলরক্ষক কোচ হিসেবে শুরু করেন নতুন অধ্যায়। দেশের ফুটবলে নবাগত এই কোচ ফিরে তাকালেন তাঁর দীর্ঘ প্রায় ২৫ বছরের গোলরক্ষক–জীবনের দিকে। নতুন লক্ষ্য নিয়েও কথা বলেন আটটি সাফ টুর্নামেন্ট খেলে রেকর্ড গড়া এই গোলরক্ষক।

প্রশ্ন: অবশেষে কোচিং শুরু করলেন। কেমন লাগছে?
বিপ্লব ভট্টাচার্য: ভালোই লাগছে। সকাল-বিকেল গ্লাভস হাতে অনুশীলনে ছুটে যাই আগের মতোই। কিন্তু এখন ভূমিকা পাল্টে কোচ। কাজটা উপভোগ করছি। আমি খেলা ছেড়ে এটাই করতে চেয়েছি।

প্রশ্ন: আনুষ্ঠানিক অবসরের ব্যাপারে কী ভাবছেন?
বিপ্লব: এবারের লিগের দ্বিতীয় পর্বে কোনো একটি বড় ম্যাচে আনুষ্ঠানিকভাবে অবসর নিতে চাই। মানিক ভাইয়ের (শেখ জামালের কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক) সঙ্গে কথা হয়েছে। তিনি সুযোগ করে দেবেন বলেছেন।

প্রশ্ন: কোচিং নিয়ে পরিকল্পনা কী? কত দূর যেতে চান?
বিপ্লব: অনেক দূর। এরই মধ্যে গোলকিপিংয়ের ওপর লেভেল-১ কোচিং কোর্স করেছি। আগামী এপ্রিলে লেভেল-২ করার পরিকল্পনা আছে। তারপর লেভেল-৩। এগুলো করতে পারলে জাতীয় দলের গোলরক্ষক কোচ হতে পারব। আমার আসল লক্ষ্য সেটাই। কোচিংয়ের প্রতিটি সার্টিফিকেটই অর্জন করতে চাই। দেশের বাইরে কোচিং করানোর স্বপ্ন দেখি।

প্রশ্ন: কবে থেকে ভাবলেন কোচিংয়ে আসবেন?
বিপ্লব: অনেক দিন থেকেই। সুযোগটা এবার করে দিয়েছে শেখ জামাল ধানমন্ডি। যদিও এ ক্লাবে কখনো খেলিনি, কিন্তু ক্লাবটির কোচ মানিক ভাই অনেক উৎসাহ দেন কোচিংয়ে আসতে। কোচ মারুফ ভাই, টিটো ভাইও চেয়েছেন কোচিংয়ে আসি। বাফুফের সাবেক টেকনিক্যাল ও স্ট্র্যাটেজিক্যাল পরিচালক পল স্মলি অনেক সহায়তা করেছেন। তিনিই আমাকে খেলোয়াড় থাকতে থাকতে কোচ বানিয়েছেন। তাঁর অধীনেই কোচিং কোর্স করেছি।

প্রশ্ন: আমিনুল আর আপনি একসঙ্গে দীর্ঘদিন জাতীয় দলের গোলরক্ষক ছিলেন। আপনাদের কোচিংয়ে আসাটা দেশের ফুটবলের জন্যই ভালো। কিন্তু আমিনুল এলেন না, রাজনীতিতে ব্যস্ত। যোগাযোগ হয় আমিনুলের সঙ্গে?
বিপ্লব: যোগাযোগ কমই হয়। কোচিংয়ে না আসাটা ওর নিজস্ব সিদ্ধান্ত। তবে আমিনুলও কোচিংয়ে এলে ভালো হতো। আমি আর আমিনুল একসঙ্গেই উঠে আসি। ১৯৯১ সালে অনূর্ধ্ব-১৪ মা মনি কাপে আমি কুমিল্লা ও আমিনুল সিলেটের হয়ে খেলি। আমরা তখন একদম পিচ্চি (হাসি) ছিলাম।

প্রশ্ন: ঢাকার শীর্ষ লিগে প্রথম ম্যাচটির কথা মনে পড়ে?
বিপ্লব: ১৯৯৫ সালে ফকিরেরপুলের বিপক্ষে আবাহনীর হয়ে। আবাহনীর গোলকিপার তখন সাইদুর ভাই। কর্মকর্তা গাফফার ভাই খেলার দিন বলেন, ‘তুমি আজ থেকে শুরু করবে।’ মুন্না ভাই বলেন, ট্রেনিংয়ে যেভাবে কিপিং করিস, সেটা করবি মাঠেও। ঘাবড়াবি না। সেই ম্যাচে আমরা ৩-১ গোলে জিতেছি। পরপরই জাতীয় অনূর্ধ্ব-১৬ দলে ডাক পাই। অনূর্ধ্ব-১৬ খেলেই জাতীয় দলে ডাকেন অটো ফিস্টার।

প্রশ্ন: বাংলাদেশে ফুটবলে কোনো রেকর্ডপত্র নেই। তারপরও গত ২৫ বছরে কতগুলো ঘরোয়া ম্যাচ খেলেছেন বলে মনে হয়?
বিপ্লব: অনুমান করে যদি বলি, নয় শর ওপর প্রথম শ্রেণির ম্যাচ তো হবেই।

প্রশ্ন: গোলরক্ষক হয়েও শীর্ষ ফুটবলে স্ট্রাইকার হিসেবে আপনি দুটি ম্যাচ খেলেছেন, যা ছিল দারুণ ব্যতিক্রম...
বিপ্লব: ২০০২ সালে মুক্তিযোদ্ধার জার্সিতে সিলেটে নিটল টাটা জাতীয় লিগে প্রথম ম্যাচটি খেলি। মনিকে দিয়ে গোলও করিয়েছি সেনাবাহিনীর বিপক্ষে। চোট থেকে সেরে ওঠা আমিনুলকে ম্যাচটিতে দেওয়া হয় পোস্টে। খেলোয়াড়সংকট থাকায় মানিক ভাই আমাকে স্ট্রাইকার হিসেবে নামিয়ে দেন। সেবার ১ আর ১৪ নম্বর জার্সি দেওয়া হয় আমাকে। ওই লিগেই ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে বরিশালে দ্বিতীয় ম্যাচটি খেলি স্ট্রাইকার হিসেবে।

প্রশ্ন: বর্তমান গোলরক্ষকদের কেমন দেখছেন?
বিপ্লব: এখনকার গোলরক্ষকদের প্রাথমিক জ্ঞান কম। অনেকে ১৭-১৮ বছর বয়সে শিখতে আসে। শিখতে হয় আরও অনেক আগে। জাতীয় দলের সোহেল সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করে। মনোযোগ আর পজিশন-সংক্রান্ত জ্ঞান ঠিক রাখলে সে অনেক ভালো গোলকিপার। আশরাফুল রানার পরিজশন-সংক্রান্ত জ্ঞান ভালো। জিকো ভালো করছে। জার্মানির ম্যানুয়েল নয়ারের মতো গোলকিপাররা এখন রক্ষণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা অনেক বেশি। পাপ্পুর মধ্যে এই জিনিসটা দেখছি।

প্রশ্ন: আপনার দেখা বাংলাদেশের সেরা গোলকিপার কে?
বিপ্লব: যদিও আমিনুলের সঙ্গে লড়াই ছিল আমার, তবু আমার দেখা ও-ই সেরা।