বাফুফের সালাউদ্দিন আর কবে মাঠের সালাউদ্দিন হবেন?

বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ছবি: প্রথম আলো
বাফুফে সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন। ছবি: প্রথম আলো
>গত নির্বাচনের আগে সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ওটাই তাঁর শেষ নির্বাচন। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সবকিছু গোছাতে পারলে তাঁর আর বাফুফের সভাপতি থাকার প্রয়োজন হবে না। সেই তিনি এখন বলছেন, অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে তাঁর আরেক মেয়াদ লাগবে।

কতটা পথ পেরোলে জিরোবে পাখির ডানা? সহজ উত্তর, ক্লান্ত হলে।

কাজী সালাউদ্দিন তেমন নন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি হিসেবে তিন মেয়াদে তাঁর প্রায় ১২ বছর শেষ, চতুর্থ মেয়াদে প্রবেশের ক্ষণ গুনছেন। নির্বাচনী মাঠে বড় কাঁটা তরফদার রুহুল আমিন হঠাৎই সরে গেছেন। ব্যতিক্রম কিছু না হলে সম্ভবত কাজী সালাউদ্দিনই আগামী এপ্রিলের শেষ দিকে আরেক দফা বাফুফে সভাপতি হতে যাচ্ছেন।

গত নির্বাচনের আগে সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ওটাই তাঁর শেষ নির্বাচন। প্রথম আলোকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সবকিছু গোছাতে পারলে তাঁর আর বাফুফের সভাপতি থাকার প্রয়োজন হবে না। সেই তিনি এখন বলছেন, অসমাপ্ত কাজ শেষ করতে তাঁর আরেক মেয়াদ লাগবে।

চতুর্থবার নির্বাচিত হলে কী করবেন কাজী সালাউদ্দিন, সেটাই প্রশ্ন। আর কী করেছেন গত ১২ বছরে, সেটিও বিশ্লেষণের দাবি রাখে। সব বাদ দিয়ে গত চার বছরের খতিয়ান বলছে, বয়সভিত্তিক ও জাতীয় দলের বিদেশি কোচিং স্টাফের পেছনে কাঁড়ি কাঁড়ি অর্থ ব্যয় আর বয়সভিত্তিক স্তরে কিছু সাফল্য ছাড়া দৃশ্যমান বড় অর্জন নেই এই সময়ে। চার বছরে ১০০ কোটি টাকার ওপরে খরচ করেছে বাফুফে। যার মধ্যে প্রশাসনিক ব্যয়ই প্রায় ৪০ কোটি টাকা। বিনিময়ে প্রাপ্তি কী? জাতীয় দলের ফিফা র‌্যাঙ্কিং ঠেকেছে ইতিহাসে সর্বনিম্ন ১৯৭ (এখন অবশ্য ১৮৭) পর্যন্ত। তৃণমূলে হাত পড়েনি সেভাবে। বাফুফে ‘ঢাকা ফুটবল ফেডারেশন’ই রয়ে গেছে। বছরে অন্তত ২০-২৫টি জেলায় লিগ হয় না। তবু কোনো জবাবদিহি নেই।

২০০৮ সালে প্রথমবার বাফুফের সভাপতি নির্বাচিত হয়ে কাজী সালাউদ্দিন বলেছিলেন, ‘আগে ঢাকার ফুটবলটা ঠিক করি। তারপর ঢাকার বাইরে হাত দেব।’ আশান্বিত হয়েছিলেন অনেকে। এটা ঠিক যে তিনি দেশের শীর্ষ ফুটবল লিগ নিয়মিত আয়োজন করতে পেরেছেন। তবে ফুটবল উন্নয়নে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অভাব রয়ে গেছে আগের মতোই।

সালাউদ্দিন হঠাৎ একদিন একটা স্বপ্নের কথা জানান। ২০২২ কাতার বিশ্বকাপে খেলবে বাংলাদেশ। সেই অলীক স্বপ্ন মুখ থুবড়ে পড়ে অচিরেই। এশিয়ার সেরা ২০ দলেও ঢোকেনি বাংলাদেশ। উল্টো গত বছর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে ঢুকতেই প্রাণ ওষ্ঠাগত হয় এশিয়ার ৪৬ দেশে ৪২তম দলটির!

খারাপের মধ্যে ভালো, ২০১৮ এশিয়ান গেমসে প্রথমবারের মতো দ্বিতীয় রাউন্ডে ওঠা (অনূর্ধ্ব-২৩ দল)। বর্তমান জাতীয় দলটা অবশ্য কাজী সালাউদ্দিনের চোখে ৫০ বছরের মধ্যে সেরা। তবে বাস্তবতা হলো, গত চারটি সাফ টুর্নামেন্টে গ্রুপ পর্বই পেরোতে পারেনি বাংলাদেশ। কদিন আগে সাফ গেমসে (অনূর্ধ্ব-২৩) হয়েছে ভরাডুবি।

বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘আমি তো মাঠে খেলে দিতে পারব না। আমার কাজ সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা।’ কিন্তু এত অর্থ খরচের পরও জাতীয় দল সালাউদ্দিনের সময়ই না পারলে আর কবে পারবে? ২০১০ সালে অনূর্ধ্ব-২৩ দল এসএ গেমসে সোনা জেতার পর থেকেই ট্রফিবিহীন বাংলাদেশের ফুটবল। এ সময়ে ফিফার দেওয়া দুটি টার্ফ ছাড়া ফুটবলে কোথায়ও কোনো ইটও গাঁথা হয়নি। ফুটবলে এত টাকা খরচ হচ্ছে, অথচ আজ পর্যন্ত নিজস্ব একটা জিম নেই বাফুফের। একাডেমি তো আকাশের চাঁদ! ক্লাবগুলোকেও কার্যকরভাবে খেলোয়াড় তৈরির পথে আনতে পারেনি বাফুফে। ঘরোয়া ফুটবলের কাঠামো এই রোদ, এই বৃষ্টির মতো। যখন ইচ্ছা বিদেশি ফুটবলার বাড়ে। ক্লাব যা চায় তা-ই করে লিগ কমিটি। বোঝাই যায় না কাজী সালাউদ্দিনের মতো একজন বাফুফে সভাপতির চেয়ারে। শীর্ষ ফুটবলাররা এক মৌসুমে ৫০-৬০ লাখ টাকা করে পান, ফুটবলে দৃশ্যমান উন্নতি বলতে এটিই।

বাফুফের নির্বাচন এলেই শুরু হয় টাকার খেলা। অথচ সালাউদ্দিনের যুগেও গ্যালারি থাকে শূন্য। ফুটবলের বিপণন নেই। লিগ শুরু হয়েছে স্পনসর ছাড়াই। ঢাকার নিচের দিকের লিগগুলো অনিয়মিত। এক পাইওনিয়ার লিগ চার-পাঁচবার বন্ধ হয়ে শেষ হয় ছয় মাস পর। ৭ বছর পর নারী লিগের উদ্যোগ নিয়ে চলছে তেলেসমাতি কারবার।

নারী ফুটবলে সাফল্য এলেও ভিত্তিটা ভীষণ নড়বড়ে। সালাউদ্দিনের আশপাশে থাকা বাফুফের শীর্ষ কর্মকর্তাদের ক্লাবই নারী ফুটবল নিয়ে অনাগ্রহী। ফেডারেশনে আছে বিভেদ। বিরোধী পক্ষের আনা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগের তদন্তে নেমেছে দুদক। উন্নয়নের বদলে ফুটবলের ভাবমূর্তিতে কালিই পড়ছে শুধু।