অন্যের সর্বনাশ করে মেসির সঙ্গী আনল বার্সেলোনা

নিজেদের নতুন স্ট্রাইকারকে পরিচয় করিয়ে দিল বার্সেলোনা। ছবি: বার্সেলোনা টুইটার
নিজেদের নতুন স্ট্রাইকারকে পরিচয় করিয়ে দিল বার্সেলোনা। ছবি: বার্সেলোনা টুইটার

স্ট্রাইকারের খোঁজ শেষ হয়েছে বার্সেলোনার। ছয় মাসের জন্য উসমান ডেমবেলে চোট পেয়ে ছিটকে পড়ায় তাঁর জরুরি বদলি স্পেন থেকে খুঁজে নিয়েছে কাতালানরা। লিগে অবনমন এড়ানোর জন্য লড়তে থাকা লেগানেসের মার্টিন ব্রাথওয়েটকে পছন্দ হয়েছে বার্সেলোনার। এই স্ট্রাইকার বার্সেলোনায় মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, এ নিয়ে শঙ্কায় আছেন অনেক বার্সেলোনা সমর্থক ও বিশ্লেষক। ব্রাথওয়েট ভালো করবেন কি করবেন না, এ নিয়ে সন্দেহ থাকতে পারে। কিন্তু বার্সেলোনার এই দলবদলে লেগানেসের সর্বনাশ যে হয়ে গেছে তাতে কারও কোনো সন্দেহ নেই।

ডেনিশ স্ট্রাইকারকে ৫ বছরের জন্য কিনে নিয়েছে বার্সেলোনা। এ জন্য তাঁর নামের পাশে থাকা পুরো রিলিজ ক্লজ (লেগানেসের ইচ্ছার বাইরে তাঁকে কিনতে যে অর্থ দিতে হতো আগ্রহী ক্লাবকে) অর্থাৎ ১৮ মিলিয়ন ইউরোই খরচ করেছে তারা। লেগানেস এ দলবদলে রাজি হওয়ার কোনো কারণও ছিল না। জানুয়ারির দলবদলের মৌসুম শেষ, নিজেদের এই স্ট্রাইকার হারালে কোনো বদলি আনার সুযোগও পাবে না লেগানেস। উপায় না পেয়ে তাই রিলিজ ক্লজ খরচ করেই ২৮ বছর বয়সী এই স্ট্রাইকারকে নিয়ে এসেছে বার্সেলোনা। এক বিবৃতিতে বার্সেলোনা জানিয়েছে, ‘ডেনমার্কের বন্দর নগরী এসবিয়ের্গে ১৯৯১ সালের ৫ জুন জন্ম নেওয়া মার্টিন ব্রাথওয়েট একজন পরিশ্রমী স্ট্রাইকার। লেগানেসে নজর কাড়া পারফরম্যান্সের পর বার্সেলোনায় আসছেন তিনি।’

প্রশ্ন উঠতেই পারে, লেগানেসে যদি বিকল্প কাউকে আনতে না পারে, তবে বার্সেলোনা কীভাবে কিনে আনল এই স্ট্রাইকারকে? এখানেই লা লিগার নিয়মের দুর্বলতা। কোনো খেলোয়াড় যদি ছয় মাসের জন্য চোট পান, সে ক্ষেত্রে দেশের যেকোনো লিগ থেকে দলবদলের মৌসুম ছাড়াও খেলোয়াড় কেনার ক্ষমতা রাখে যেকোনো ক্লাব। সেটা রিলিজ ক্লজ দিয়ে জোর করে হলেও। কিন্তু যে দল এভাবে খেলোয়াড় হারাচ্ছে, তাদের সে ক্ষতি পোষানোর কোনো উপায় রাখেনি লিগ। ফলে বার্সেলোনার মতো বড় দলগুলো যেখানে চাইলেই লেগানেসের সেরা স্ট্রাইকারকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে, সেখানে লেগানেসের পক্ষে দ্বিতীয় বা তৃতীয় বিভাগ থেকেও কোনো স্ট্রাইকার আনা সম্ভব হচ্ছে না।

গত মৌসুমে জানুয়ারির দলবদলে বিকল্প স্ট্রাইকার এনেও সুফল পায়নি বার্সা। কেভিন প্রিন্স বোয়াটেং এসে ডাগআউটের আসন গরম করেছেন শুধু। যে ম্যাচে তাঁর ওপর ভরসা রেখেছে দল, সে ম্যাচেই ডুবেছে বার্সেলোনা। ব্রাথওয়েটের ক্ষেত্রে এমন কিছু ঘটার আশঙ্কা করছে সবাই। কারণ, দলবদলে বার্সেলোনার সঙ্গে নাম জড়ানো অন্য স্ট্রাইকারদের (উইলিয়ান হোসে, কার্লোস ভেলা প্রমুখ) মান নিয়ে নিঃসংশয় হলেও ব্রাথওয়েট বার্সেলোনার মানের স্ট্রাইকার বলে স্বীকার করতে চান না বিশ্লেষকেরা।

ওদিকে লেগানেসের জন্য ব্রাথওয়েটই ছিলেন মূল ভরসা। লিগে ১৯ নম্বরে থাকা দলটি এ মৌসুমে যে ১৮টি গোল করেছে, তার ৬টিই ব্রাথওয়েটের। দলের মূল স্ট্রাইকারদের অন্যজন ইউসেফ এন-নেসিরিকেও জানুয়ারির দলবদলে টেনে নিয়ে গেছে আরেক বড় দল সেভিয়া, যিনি লেগানেসের হয়ে গোল করেছিলেন ৪টি। অবনমনের শঙ্কায় থাকা এক দলের জন্য যেখানে নেসিরির মতো এক স্ট্রাইকারকে হারানোই ছিল বড় ধাক্কা, এর মধ্যেই বিকল্প আনার সুযোগ না দিয়ে সর্বোচ্চ গোলদাতাকে এভাবে কেড়ে নেওয়া মানে তো দলটির অবনমন প্রায় নিশ্চিত করে দেওয়াই।

এ ব্যাপারে কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে লেগানেস। তাদের বিকল্প স্ট্রাইকার কেনার আবেদন যথেষ্ট জরুরি মনে হয়নি লা লিগার। ক্লাবের পরিচালক মার্টিন ওরতেগা বলেছেন, ‘আমরা কঠিন বিপদে আছি, এ ব্যাপারে সবাইকে জানাতে হবে। বার্সেলোনা অন্যায্য এক আইনের সুবিধা নিচ্ছে। এতে লেগানেস অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হলো।’