সভাপতি-মহাসচিব দ্বন্দ্বে অচল শুটিং

শীর্ষ দুই কর্মকর্তার রেষারেষির দায় মেটাতে হচ্ছে শুটারদের । ফাইল ছবি
শীর্ষ দুই কর্মকর্তার রেষারেষির দায় মেটাতে হচ্ছে শুটারদের । ফাইল ছবি
>ফেডারেশনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার দ্বন্দ্ব এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে কার্যনির্বাহী কমিটির সভা হয়েছে মহাসচিবকে ছাড়াই। কার্যনির্বাহী আদেশে সই করছেন উপমহাসচিব। দুজনের মুখ দেখাদেখিও প্রায় বন্ধ।

বাংলাদেশ শুটিং স্পোর্ট ফেডারেশনের অস্ত্রাগার থেকে নাকি একটি রাইফেল ও একটি পিস্তল গায়েব হয়ে গেছে! ফেডারেশনের ‘অস্ত্র ও গোলাবারুদ’ নিরীক্ষা কমিটির প্রতিবেদনে পাওয়া গেছে গুলির গরমিলের তথ্য। গুলির হিসাবের গরমিলের হয়তো একটা কূলকিনারা করবে এ-সংক্রান্ত তদন্ত কমিটি। কিন্তু পুরো শুটিং ফেডারেশনই যেন গরমিলে ভরা!

ফেডারেশনের সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী ও মহাসচিব ইন্তেখাবুল হামিদের রেষারেষিতে স্থবির হয়ে পড়েছে শুটিং ফেডারেশন। গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত এসএ গেমসে শুটিং কোনো সোনা জেতেনি। গেমসের ইতিহাসে বাংলাদেশের শুটিংয়ে সোনা না পাওয়ার ঘটনা এ নিয়ে দ্বিতীয়বার। গত এক বছর হয়নি কোনো জাতীয় ও যুব চ্যাম্পিয়নশিপ। শুধু আন্তক্লাব ও এয়ারগান চ্যাম্পিয়নশিপ হয়েছে। অনুশীলনের জন্য গুলি ছিল না বলে ডিসেম্বরের পর থেকে চলতি মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত বন্ধ ছিল সব রকমের অনুশীলন ক্যাম্প। মুজিব বর্ষে ঢাকায় হবে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক এয়ারগান শুটিং চ্যাম্পিয়নশিপ। আগামী ২২-২৭ মে হতে যাওয়া এই চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য ৪৬ জন শুটারকে ক্যাম্পে ডাকা হয়েছে। ১৫ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়েছে ক্যাম্প। সাধারণত এসব ক্যাম্পের আদেশপত্রে সই করেন মহাসচিব। কিন্তু এবার ক্যাম্প শুরুর বিজ্ঞপ্তিতে নেই তাঁর কোনো সই!

সই করেছেন উপমহাসচিব জিয়া উদ্দিন। মহাসচিবের দাবি, ‘আমি ঢাকায় থাকলেও আমার সই নেওয়া হয়নি।’ আবার অন্য পক্ষ বলছে, মহাসচিব ফেডারেশনে আসেন না। তাই উপমহাসচিবের সই নিয়ে ক্যাম্প চালুর চিঠি ছাড়া হয়। জানা গেছে, সভাপতি এখন নিয়মিত ফেডারেশনে যান। তাঁর সঙ্গে মহাসচিবের মুখ দেখাদেখিও প্রায় বন্ধ। বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের উপমহাসচিব আসাদুজ্জামান কোহিনুর বলেন, ‘শুটিং ফেডারেশনের দুই শীর্ষ কর্মকর্তার দ্বন্দ্বের বিষয়টা আমরা জানি। কীভাবে শুটিং ফেডারেশনকে গতিশীল করা যায়, সেটা আমরা দেখছি।’

ফেডারেশনের শীর্ষ দুই কর্মকর্তার দ্বন্দ্ব এতটাই চরমে পৌঁছেছে যে, ১২ ফেব্রুয়ারির কার্যনির্বাহী কমিটির জরুরি সভা হয়েছে মহাসচিবকে ছাড়াই। কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় না থাকাটা মানতে পারছেন না মহাসচিব, ‘আমি সভাপতি সাহেবকে অনুরোধ করেছিলাম যেন এক দিন পরে এই সভার আয়োজন করেন। কিন্তু তিনি আমার কথা শোনেননি।’ তবে গুরুত্বপূর্ণ সভাটি পেছানোর কোনো উপায় ছিল না বলে দাবি সভাপতির, ‘সভার আগে তিনি আমাকে বলেছিলেন বিদেশে থাকবেন। তিনি ৮ ফেব্রুয়ারি দেশে ফিরলে যেন সভা করি। সেভাবেই সভার তারিখ দিয়েছিলাম। হঠাৎ করে তিনি এক দিন পেছানোর কথা বলেছিলেন। কিন্তু ঢাকার বাইরে থেকে সদস্যরা এসেছিলেন, তা ছাড়া বঙ্গবন্ধুর নামে টুর্নামেন্ট করব। এসব বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অপেক্ষায় ছিলাম, অনেকগুলো সাব কমিটির প্রতিবেদনও জমা ছিল। সব মিলিয়েই সভাটা ওই দিন শেষ করতে হয়েছে।’

ফেডারেশনের সার্বিক কার্যক্রমে বিরক্ত হয়ে ১০ ফেব্রুয়ারি পদত্যাগ করেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাক ওয়াইজ। গত নভেম্বরে কারণ দর্শানো নোটিশ ছাড়াই চাকরি থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয় ফেডারেশনের প্রধান ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুনকেও। রাইফেলের সুইডিশ কোচ ক্লাভস ক্রিস্টিয়েনসেন তো কর্মকর্তাদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে দুই বছর আগেই ঢাকা ছেড়েছেন। এসএ গেমস শেষে চলে গেছেন দক্ষিণ কোরিয়ান পিস্তল কোচ কিম ইলইয়াংও। শুটিংয়ের এই হযবরল অবস্থার প্রভাব পড়তে শুরু করেছে শুটারদের ওপর। এরই মধ্যে মানসিকভাবে অনেক শুটার বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন। শুটিং অঙ্গনে গুঞ্জন, মহাসচিবের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ ছিল, এমন শুটাররা আছেন বাদ পড়ার শঙ্কায়।

সদ্য সাবেক হওয়া প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাক ওয়াইজ বিরক্ত কণ্ঠে বলছিলেন, ‘ফেডারেশনে এত রাজনীতি হয়ে গেছে যে এখানে কাজ করাটাই সম্ভব না। আমি এসব রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকতে চাই। এ জন্যই চাকরিটা ছেড়ে দিয়েছি।’ তাঁর দাবি, দুই শীর্ষ কর্মকর্তার মনোমালিন্যের কারণেই শুটিংয়ের এই দুরবস্থা।

সভাপতি অবশ্য মনোমালিন্যের অভিযোগ মানতে নারাজ, ‘বিভিন্ন বিষয়ে মতের অমিল থাকতেই পারে। ভাই-ভাইয়ের মধ্যে এমন অনেক কিছুই তো হয়। এটাকে দূরত্ব বলব না। তবে তাই বলে আমাদের অনুশীলন থেমে নেই। এটার জন্য প্রতিযোগিতায় কোনো ব্যাঘাত ঘটছে বলে আমার মনে হয় না।’

ফেডারেশনের অস্ত্র ও গুলির তথ্যে গরমিল থাকার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কোনো অস্ত্র খোয়া গেছে বলে শুনিনি। কিন্তু গুলির গরমিলের বিষয়ে একটা প্রতিবেদন আমরাও দেখেছি। প্রাথমিকভাবে তদন্ত করে দেখা গেছে, কিছু গুলির গরমিল আছে। সেগুলো মিলিয়ে দেখার জন্য আরেকটি কমিটি করে দিয়েছি আমরা। সেই কমিটি বিষয়টি খতিয়ে দেখছে।’