আইপিএল খেলা ক্রিকেটারের এখন থাকার জায়গা নেই

২০০৯ সালে আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে খেলার সময়ে পমার্সবাখ। ছবি: রয়টার্স।
২০০৯ সালে আইপিএলে কিংস ইলেভেন পাঞ্জাবে খেলার সময়ে পমার্সবাখ। ছবি: রয়টার্স।

এমনিতে তেমন কোনো নামকরা ক্রিকেটার তিনি ছিলেন না। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার বলতে ২০০৭ সালে পার্থে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে একটা মাত্র টি-টোয়েন্টি খেলা। প্রথম শ্রেণি, লিস্ট ‘এ’ আর অন্য টি-টোয়েন্টি মিলিয়েও ক্যারিয়ারটা মাত্র ১৩২ ম্যাচের। এখনো বয়স তাঁর মাত্র ৩৫, তাঁর বয়সের অনেকেই এখনো মাঠ মাতিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু লুক পমার্সবাখ নামটা বললে কজনই-বা মুহূর্তেই চিনে ফেলবেন?

খুব বেশি নয়, এই তো, ছয়-সাত বছর আগের কথা। পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পার্থে জন্ম নেওয়া পমার্সবাখ টি-টোয়েন্টিতে বেশ নাম কামাচ্ছেন তখন। ২০০৮ থেকে ২০১৩ সালের মধ্যে চার মৌসুম আইপিএলে খেলছেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান, নিজ দেশে বিগব্যাশে আলো ছড়াচ্ছেন। কিন্তু সাবেক অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটারের পরিচয় এখন জীবনের কঠিনতম অংশের সঙ্গে। মানসিক অবসাদের কারণে ক্রিকেট ছেড়েছেন ছয় বছর আগে, কিন্তু ক্যারিয়ারজুড়ে তাঁর ‘শত্রু’ হয়ে থাকা উগ্র মানসিকতা আর মাদকাসক্তি এখনো পমার্সবাখকে ছাড়েনি। ফল? একটা মোটরসাইকেল আর ১০টি মদের বোতল চুরির অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। আর সর্বস্ব হারানো পমার্সবাখের এখন মাথা গোঁজার ঠাঁই তাঁর নিজের গাড়িটি।

পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার স্থানীয় পত্রিকার প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটা আলাদা ঘটনায় গত বুধবার পার্থের আদালতে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল পমার্সবাখের। কিন্তু যাননি সেখানে, তাই তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে।

বিতর্কের অবশ্য নিয়মিত সাক্ষাৎ বর্তমানে চার বছর বয়সী এক মেয়ের বাবা পমার্সবাখের সঙ্গে। এক সময় আইপিএলে তাঁকে ৩ লাখ ডলারে কিনে নিয়েছিল প্রীতি জিনতার দল কিংস ইলেভেন পাঞ্জাব, ২০০৮ ও ২০০৯ মৌসুমে সেখানেই খেলেছিলেন। পরে খেলেছেন রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুতে। আইপিএলে সব মিলিয়ে ১৭ ম্যাচে ১২২-এর বেশি স্ট্রাইক রেটে করেছেন ৩০২ রান। একটা ফিফটিও আছে। কিন্তু ২০১২ সালে দিল্লিতে দিল্লি ডেয়ারডেভিলসের বিপক্ষে ম্যাচের পর এক আমেরিকান নারী ও তাঁর বাগদত্তকে হামলা করার অভিযোগ ওঠে তাঁর বিরুদ্ধে। দিল্লি আদালতে তাঁকে পাঠানো হয়। সেখান থেকে জামিন মেলে ঠিকই, কিন্তু সেবারের টুর্নামেন্টে নিষিদ্ধ হন পমার্সবাখ।

এরপর তাঁর ক্যারিয়ারের ‘ক্যানসার’ হয়ে এসেছে মাদকাসক্তি। এখন পমার্সবাখ নিজের গাড়িতেই থাকেন। এবারের নববর্ষের দিনে পার্থের ইন্নালুতে এক শপিং সেন্টারের সামনে থেকে একটা বাইক চুরির অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এর কয়েক দিন পর ওঠে একটা পানীয়ের দোকান থেকে মদের বোতল চুরির অভিযোগ। কে বলবে, এই পমার্সবাখই এক সময় অস্ট্রেলিয়া জাতীয় দলে খেলেছিলেন!

তাঁর জাতীয় দলে খেলার গল্পটাও অবশ্য দারুণ! ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেই ম্যাচের আগে গা-গরমের সময় ট্রাউজার টেনে ওঠাতে গিয়ে পিঠে ব্যথা পান ব্র্যাড হজ, তাঁর বদলে পমার্সবাখকে ডাকা হয় দলে। পমার্সবাখ সেই মুহূর্তে কী করছিলেন? পার্থে বাড়ির পাশের ম্যাচটা দর্শক হিসেবে দেখতে এসে গাড়ি পার্ক করছিলেন! সেখান থেকে মাঠে নেমে ৭ বলে ১ চার ১ ছক্কায় ১৫ রান করেছিলেন, অস্ট্রেলিয়া ম্যাচটা জেতে ৫৪ রানে। সে বছর অবশ্য মাঠে দারুণ ছন্দেই ছিলেন পমার্সবাখ, জিতেছিলেন অস্ট্রেলিয়ার উঠতি ক্রিকেটারদের জন্য দারুণ প্রার্থিত ‘ব্র্যাডম্যান ইয়াং ক্রিকেটার অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার হয়ে ওই ম্যাচের বছর দু-এক পর মদ্যপ অবস্থায় গাড়ি চালানো আর এক পুলিশের ওপর হামলায় জরিমানার পাশাপাশি রাজ্য ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে দুই বছরের জন্য নিষিদ্ধ হন পমার্সবাখ। ফিরে আসার পর আবার জড়ান আইপিএলের ওই ঘটনায়। এরপরও ফিরে এসেছিলেন, ২০১২ সালের বিগব্যাশে তাঁর দল ব্রিসবেন হিটকে শিরোপা জেতানোর পথে টুর্নামেন্টের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহকও হয়েছিলেন।

তার দুবছর পরই অবসাদের সঙ্গে লড়াইকে কারণ দেখিয়ে তাঁর ক্রিকেট ছেড়ে যাওয়া। কিন্তু মাঠ ছেড়ে গেলেও মাঠের বাইরের ঝামেলাগুলো পমার্সবাখকে ছাড়েনি।