ফেদেরার বুঝিয়ে দিলেন, তিনিও মানুষ

ফ্রেঞ্চ ওপেনে খেলা হচ্ছে না ফেদেরারের। ছবি : এএফপি
ফ্রেঞ্চ ওপেনে খেলা হচ্ছে না ফেদেরারের। ছবি : এএফপি
>

ডান হাঁটুটা বেশ কিছুদিন ধরেই ভোগাচ্ছিল। এত দিন এড়িয়ে যাচ্ছিলেন, এবার আর পারলেন না। শল্যবিদের ছুরির নিচে যাচ্ছেন এই কিংবদন্তি। ফলে খেলা হবে না ফ্রেঞ্চ ওপেনে

রজার ফেদেরার। রাফায়েল নাদাল। নোভাক জোকোভিচ।

একটা ছোট তথ্য দিই এই তিনজন সম্পর্কে। ২০০৩ সালের উইম্বলডন থেকে এই বছরের অস্ট্রেলিয়ান ওপেন পর্যন্ত গ্র্যান্ড স্ল্যাম টুর্নামেন্টের আসর বসেছে ৬৭ বার। ১১ বার বাদ দিলে বাকি ৫৬ বার শিরোপা উঠেছে ঘুরেফিরে এই তিনজনের হাতে। গত প্রায় দেড় যুগ ধরে টেনিসের ইতিহাস নতুন করে লিখছেন এই তিনজন। ৩৮ বছর বয়সী ফেদেরার বিশটি গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে আপাতত সবার ওপরে থাকলেও নাদাল (১৯) আর জোকোভিচ (১৭) তাঁর কাঁধে নিশ্বাস ফেলছেন যেন। ‘বিগ থ্রি’ তো আর এমনি এমনিই বলা হয় না এই তিনজনকে! গ্র্যান্ড স্ল্যামে এই তিনজনের আধিপত্য দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক, আজীবন একই গতিতে খেলে যাবেন এই তিনজন, জিতে যাবেন মেশিনের মতো।

কিন্তু দিন শেষে তারাও যে মানুষ, দিন শেষে বয়সের ভারে যে তাদেরও ন্যুব্জ হয়ে যেতে হয়, সেটার প্রমাণ আস্তে আস্তে আসা শুরু হয়েছে এই তিনজনের কাছ থেকে। বিশেষ করে ফেদেরারের কাছ থেকে। এককালে টেনিসের একচ্ছত্র এই রাজাধিরাজ শেষ গ্র্যান্ড স্লাম জিতেছেন সেই ২০১৮ সালের অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে। এরপর থেকেই অস্তাচলে যেতে শুরু করেছে তাঁর ফর্ম। গত বছর উইম্বলডন জয়ের হাতছোঁয়া দূরত্বে এসেও পারেননি জোকোভিচের হার-না-মানা মানসিকতার কাছে। পরের দুই টুর্নামেন্ট, ইউএস ওপেন ও অস্ট্রেলিয়ান ওপেনেও বশ মেনেছিলেন জোকোভিচ আর গ্রিগর দিমিত্রভের কাছে। এবার জানিয়ে দিলেন, ফ্রেঞ্চ ওপেনে খেলবেনই না। বয়সের সঙ্গে তাঁর হাঁটু পেরে উঠছে না যে!

শুধু ফ্রেঞ্চ ওপেনই নয়, ফ্রেঞ্চ ওপেনের আগে দুবাই, ইন্ডিয়ান ওয়েলস, মায়ামি, বোগোতা, মাদ্রিদ ও রোমে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া টুর্নামেন্টেও দেখা যাবে না তাঁকে। ডান হাঁটুর অস্ত্রোপচার করাবেন তিনি। আর সেই অস্ত্রোপচারের পুনর্বাসনের জন্যই বসে থাকতে হবে কয়েক মাস। ফলে ফ্রেঞ্চ ওপেনে খেলা হবে তাঁর।

তবে ফ্রেঞ্চ ওপেনে ফেদেরার কখনই অত ভালো ছিলেন না। নিজের জেতা বিশ গ্র্যান্ড স্ল্যামের মধ্যে মাত্র একটি জিতেছেন রোলাঁ গারোঁয়, তাও জিতেছেন সেই ২০০৯ সালে। রাফায়েল নাদালের আধিপত্যে লাল মাটিতে নিজের দুর্গটা গড়তে পারেননি এই সুইস তারকা। ওদিকে ফ্রেঞ্চ ওপেনের পরে হওয়া উইম্বলডনে আবার ফেদেরারের রাজত্ব, ঘাসের রাজ্যে শিরোপা জিতেছেন আটবার। ফলে হাঁটুর অস্ত্রোপচার করার জন্য এই সময়টাকেই উপযুক্ত বলে মনে করেছেন হয়তো তিনি!

নিজের পোস্টেও জানিয়েছেন, উইম্বলডনকেই পাখির চোখ করছেন তিনি, 'আমার ডান হাঁটু বেশ কিছু দিন ধরে জ্বালাচ্ছে আমাকে। ভেবেছিলাম সমস্যাটা আপনা-আপনি মিটে যাবে, কিন্তু হাঁটুর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর, আমার দলের সঙ্গে আলোচনা করার পর সিদ্ধান্ত নিলাম, সুইজারল্যান্ডে হাঁটুর অস্ত্রোপচার করাব আমি। ফলে দুবাই, ইন্ডিয়ান ওয়েলস, মায়ামি, বোগোটা, মাদ্রিদ ও রোমে খেলতে পারব না। খেলব না ফ্রেঞ্চ ওপেনেও। আবারও কোর্টে নামার জন্য তর সইছে না আমার। দেখা হবে ঘাসের কোর্টে!'

এর আগে ২০১৬ সালে এমন হাঁটুর চোটে পড়েছিলেন ফেদেরার। সেবার যন্ত্রণা দিয়েছিল পিঠও। কোনোরকমে অস্ট্রেলিয়ান ওপেন ও উইম্বলডনে খেলতে পারলেও চোটের কারণে খেলতে পারেননি ফ্রেঞ্চ আর ইউএস ওপেনে। পরে ২০১৭ সালের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ফেদেরারের প্রত্যাবর্তনটা হয়েছিল রাজার মতন। চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রাফায়েল নাদালকে পাঁচ সেটের মহাকাব্যিক লড়াইয়ে হারিয়ে ক্যারিয়ারে পঞ্চমবারের মতো অস্ট্রেলিয়ান ওপেন জিতেছিলেন তিনি।

এবার উইম্বলডনেও কী তেমন কোনো প্রত্যাবর্তন লেখা আছে ফেদেরারের ভাগ্যে? নামটা ফেদেরার বলেই হয়তো আশায় বুক বাঁধা যায়!