কোহলি আবার ব্যর্থ, ধুঁকতে ধুঁকতে দিন পার ভারতের

আউট হয়ে ফিরছেন কোহলি। ছবি: রয়টার্স
আউট হয়ে ফিরছেন কোহলি। ছবি: রয়টার্স
>

টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে—নিউজিল্যান্ড সফরে দুই সংস্করণেই ব্যর্থ কোহলি। টেস্টে এসেও রান পাননি তিনি। ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম ইনিংসে ২ রানে ফিরে গেছেন তিনি। ভারতেও শুরুটাও ভালো হয়নি এ টেস্টে

৪৫, ১১, ৩৮, ১১, ৫১, ১৫, ৯। সাত ইনিংসে একজন ব্যাটসম্যানের রান। একটা ফিফটি আছে, একটা চল্লিশোর্ধ্ব ইনিংস, আরেকটি ত্রিশোর্ধ্ব। অন্য কোনো মাঝারি মানের ব্যাটসম্যানের জন্য হয়তো এ চালিয়ে নেওয়ার মতো ফর্ম। কিন্তু এই সাত ইনিংস যদি আসে বিরাট কোহলির ব্যাট থেকে? নামটা কোহলি বলেই প্রশ্ন উঠে যায়—হলো কী তাঁর?

নিউজিল্যান্ডে আসার আগে গত জানুয়ারিতে দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের শেষ দুই ইনিংসেও কোহলির ব্যাট দেখেছিল দুটি ফিফটি (৮৯ ও ৭৮)। কিন্তু নিউজিল্যান্ডে আসার পর থেকেই হঠাৎ ছন্দপতন ভারত অধিনায়কের। ওই সাত ইনিংস ছিল টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডে সিরিজে। আজ ওয়েলিংটনের বেসিন রিজার্ভে শুরু হয়েছে ভারত-নিউজিল্যান্ডের দুই টেস্ট সিরিজের প্রথমটি, তাতেও কোহলি ব্যর্থ। আউট হয়ে গেছেন মাত্র ২ রান করে। দিন শেষে ভারতও ধুঁকছে। বৃষ্টিতে আগেভাগে খেলা শেষ হয়ে গেছে, তার আগে অভিষিক্ত নিউজিল্যান্ড পেসার কাইল জেমিসনের তোপে ভারত ৫ উইকেট হারিয়ে করতে পেরেছে মাত্র ১২২ রান। কোহলির উইকেটটিসহ ৩ উইকেট জেমিসনের।

সন্তানের বাবা হবেন নিল ওয়াগনার, স্ত্রীর পাশে থাকতে তাই ছুটি নিয়েছেন। তাঁর বদলেই দলে ঢুকেছেন জেমিসন। কিন্তু ৬ ফুট ৮ ইঞ্চি উচ্চতার ২৫ বছর বয়সী ফাস্ট বোলারের বাউন্সার আর বুদ্ধিদীপ্ত বোলিংয়ের সামনেই আজ আর পেরে উঠল না ভারত। নিউজিল্যান্ডের হয়ে বাউন্সার বললে ওয়াগনারের নামই হয়তো কল্পনায় ভাসবে, বিভিন্ন কোণ থেকে শর্ট লেংথে বল ফেলে ব্যাটসম্যানের গায়ের দিকে ভয়ংকর বাউন্সার ছুড়তে ওয়াগনারের জুড়ি মেলা ভার। জেমিসন তেমন নন, বরং প্রথাগত ওপেনিং বোলারের মতো ‘গুড লেংথে’ বল করেছেন, ব্যাটসম্যানকে শট খেলতে উৎসাহিত করেছেন। কিন্তু তাঁর ‘তাল গাছসম’ উচ্চতার কারণে হঠাৎ পাওয়া বাড়তি বাউন্সই ভুগিয়েছে ভারতকে।

ওয়ানডে সিরিজে নিউজিল্যান্ডকে বলতে গেলে একাই জেতানো রস টেলরের শততম টেস্ট এটি। তাতে টস জিতে ভারতকে আগে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। পঞ্চম ওভারেই ধাক্কা। টিম সাউদির আউট সুইং বলে সামনের পা না নাড়িয়ে শট খেলতে চাওয়ার মূল্য পৃথ্বী শ (১৬) দিলেন অফ স্টাম্প হারিয়ে। কিন্তু আরেক ওপেনার মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে (৩৪) নিয়ে প্রথম দশ ওভার পার করে দিয়েছিলেন চেতেশ্বর পূজারা (১১)। দশ ওভার শেষে ভারতের রান ছিল ১ উইকেটে ৩১, দুই নতুন বোলারকে অনেকক্ষণ সামলে নেওয়ায় মনে হচ্ছিল শুরুর ধাক্কাটা ভারত কাটিয়ে উঠবে।

কিন্তু বাঁধ সাধলেন জেমিসন। বাতাস তাঁর অনুকূলে ছিল, একটু ধীর গতির পিচ থেকে নিজের উচ্চতা কাজে লাগিয়ে অসমান বাউন্স তুলে নিচ্ছিলেন জেমিসন। ১৬তম ওভারে তাঁর দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে উইকেটের পেছনে বিজে ওয়াটলিংকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন পূজারা। তাঁর ১৪ বল পর আউট কোহলিও। নিজের আগের ওভারে পূজারাকে ফেরানোর পর এমনই বাউন্সারে কোহলিকে ‘অভিবাদন’ জানিয়েছিলেন জেমিসন যে, বলটা ওয়াইডই হলো! পরের ওভারে এক-দুটি বাউন্সারের পর ফুল লেংথ বল করে যাচ্ছিলেন কোহলিকে, দ্বিতীয়বারের চেষ্টায় সফল। অফ স্টাম্পের বাইরে ফুল লেংথের বলে শট খেলতে চেয়েছিলেন কোহলি, কিন্তু আগের বাউন্সারগুলোর কারণে একটু ব্যাকফুটে ছিলেন বলেই কি না, টাইমিং হলো না। স্লিপে ক্যাচ গেল টেলরের হাতে। ৪০ রানেই নেই ভারতের ৩ উইকেট।

আগারওয়াল আর রাহানে মিলে এরপর ৪৮ রানের জুটিতে ভারতকে কিছুটা স্বস্তি দিয়েছেন বটে। যদিও উইকেটে খুব একটা স্বস্তিতে ছিলেন না আগারওয়াল। ট্রেন্ট বোল্টের বাউন্সারে পুল করতে গিয়ে ব্যাটের ওপরের কানায় লেগে তাঁর সংগ্রামের অবসান জেমিসনের হাতে ক্যাচ হয়ে। সেই জেমিসনই পরে উইকেটকিপার ওয়াটলিংয়ের ক্যাচ বানিয়ে ফিরিয়েছেন হনুমা বিহারিকে।

বৃষ্টিতে দিনের খেলা আগেভাগেই শেষ হয়ে গেছে। তাতে স্বস্তিটা হয়তো ভারতই বেশি পেয়েছে। দিন শেষে রাহানে ৩৮ রানে অপরাজিত, তাঁর সঙ্গী উইকেটকিপার ঋষভ পন্ত অপরাজিত ১০ রানে।