তবে কথা হোক বাংলায়

সংবাদ সম্মেলনে গর্বের সঙ্গেই মাতৃভাষায় কথা বলা উচিত ক্রিকেটারদের। ফাইল ছবি
সংবাদ সম্মেলনে গর্বের সঙ্গেই মাতৃভাষায় কথা বলা উচিত ক্রিকেটারদের। ফাইল ছবি

২০১০ সালের ২৮ মে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে লর্ডসের অনার্স বোর্ডে নাম তোলেন শাহাদাত হোসেন। কিন্তু আগুন ঝরানো বোলিং করা সেই শাহাদাতের সংবাদ সম্মেলনে এসে নিবু নিবু অবস্থা! শাহাদাত ইংরেজিতে দুর্বল। সঙ্গে ম্যানেজার বা মিডিয়া ম্যানেজার না থাকায় ব্রিটিশ সাংবাদিকদের করা প্রশ্নগুলো তাঁর কাছে যেন ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের বোলিং করার চেয়েও কঠিন মনে হলো!

মাঠে দুর্দান্ত, কিন্তু ইংরেজিতে খুব একটা পটু নন-এমন উদাহরণ শুধু বাংলাদেশ দল কেন, উপমহাদেশের ক্রিকেটেই কম নেই। ফুটবল-টেনিসের মতো অন্য জনপ্রিয় খেলাগুলোয় ইংরেজি যোগাযোগের একমাত্র ভাষা নয়। কিন্তু ক্রিকেটে ব্যাপারটা ভিন্ন।

মাঠের খেলার পর একজন ক্রিকেটারকে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে যেতে হয়। সম্প্রচারের দায়িত্ব থাকা চ্যানেলের সঙ্গে কথা বলতে হয়। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে আসতে হয়। মাঝেমধ্যে বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারও দিতে হয়। এই প্রতিটি ক্ষেত্রে সবাই যেন ধরেই নেয় যে ক্রিকেট খেলে, সে ভালো ইংরেজিও জানে। আর সে জন্যই বিব্রতকর অবস্থায় পড়েন কম ইংরেজি জানা বা একেবারেই না জানা ক্রিকেটাররা। বাংলাদেশ দলের ইংরেজি কম জানা অনেক ক্রিকেটার তাই কথা বলার এসব উপলক্ষ এড়িয়ে যেতে চান।

মাঠে দুর্দান্ত খেলেও শুধু ইংরেজিতে দুর্বলতার কারণে সংবাদ সম্মেলনে অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়তে হয় ক্রিকেটারদের। ভাঙা ভাঙা বা ভুল ইংরেজিতে দেওয়া উত্তরে ওই ক্রিকেটারের বক্তব্যটাই ঠিকমতো ফুটে ওঠে না। সঙ্গে প্রশ্নকর্তা বিদেশি সাংবাদিকের জ্বালা ধরানো মুচকি হাসি তো আছেই। অথচ একজন ক্রিকেটারের ইংরেজি কম জানাটা দোষের নয়। তাদের দিয়ে জোর করে ভুল ইংরেজি বলানোর এর চেয়ে যদি এমন হয়, ইংরেজিতে দুর্বল ক্রিকেটারদের সংবাদ সম্মেলনগুলো হলো পুরোই বাংলায়! প্রশ্নকর্তার ইংরেজি প্রশ্নগুলো তাকে বাংলায় বুঝিয়ে দেবেন মিডিয়া ম্যানেজার বা দলের ম্যানেজার। আবার তাঁরাই ক্রিকেটারের দেওয়া বাংলা উত্তর বিদেশি সাংবাদিকদের ইংরেজিতে অনুবাদ করে দেবেন। বাংলাদেশ দলে এ রকম যে একেবারেই হয় না, তা নয়। তবে সেটি হয় ক্ষেত্রবিশেষে। দু-একটি প্রশ্নে কোনো সাংবাদিক যদি ক্রিকেটারটির কথা একদমই না বোঝেন, তখন।

যে ভাষার লড়াইয়ের জন্য ২১ ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস, সংবাদ সম্মেলনে গর্বের সঙ্গেই তো সে ভাষায় কথা বলা উচিত ক্রিকেটারদের! লিওনেল মেসি-নেইমারদের মতো খেলোয়াড়েরাও আনুষ্ঠানিক কথাবার্তা মাতৃভাষায়ই বলেন। তাহলে অনুবাদকের সাহায্য নিয়ে ক্রিকেটারদের বাংলায় কথা বলা নয় কেন? আর যদি সংবাদ সম্মেলন ইংরেজিতেই করতে হয়, তাহলে ইংরেজিতে দুর্বল খেলোয়াড়দের ইংরেজিতে কথা বলা শেখানোটাও জরুরি।

ক্রিকেটাররা যে ভাষায়ই কথা বলবেন, তা হবে শুদ্ধ ভাষা-এটিই হোক ভাষা দিবসের প্রতিজ্ঞা।