থমকে যাবে পলিদের ফুটবল ক্যারিয়ার

স্বপ্নচূড়া ক্লাবের এই মেয়েরা ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে আছেন শঙ্কায়। কাল বাফুফে ভবনে। ছবি: প্রথম আলো
স্বপ্নচূড়া ক্লাবের এই মেয়েরা ফুটবল ক্যারিয়ার নিয়ে আছেন শঙ্কায়। কাল বাফুফে ভবনে। ছবি: প্রথম আলো
>

প্রায় সাত বছর পর আজ থেকে শুরু হচ্ছে মেয়েদের প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। কিন্তু দলবদলে অংশ নিয়েও খেলতে পারছে না স্বপ্নচূড়া অ্যান্ড আক্কেলপুর ক্লাব

সে এক অদ্ভুত দৃশ্য! বাফুফে ভবনের আবাসিক ভবনের চারতলার বারান্দায় দাঁড়িয়ে বেশ কিছু নারী ফুটবলার। কয়েক বছর ধরে জাতীয় ও বয়সভিত্তিক বিভিন্ন টুর্নামেন্টে খেলে যাদের পায়ের নিচে একটা জায়গা দাঁড়িয়ে গেছে। ঠিক ওদের সামনেই ভবনের ঘাসের মাঠে বসে আছে আরও কিছু মেয়ে। ওপরের তলার মেয়েরা যেন আক্ষরিক অর্থেই ওপরে উঠে গেছে। আর নিচে বসা মেয়েরা জানেন না তাদের ফুটবল ভবিষ্যৎ কী।

আজ থেকে কমলাপুর স্টেডিয়ামে শুরু হচ্ছে প্রিমিয়ার ফুটবল লিগ। প্রায় সাত বছর পর মাঠে গড়ানো লিগে খেলার কথা ছিল আট দলের। সেই হিসেবে দলবদলে অংশ নিয়েছিল সুনামগঞ্জের স্বপ্নচূড়া অ্যান্ড আক্কেলপুর ক্লাব। কিন্তু ক্লাবটির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে শেষ পর্যন্ত বাফুফে এই দলকে বাদ দিয়েই খেলা শুরু করেছে। আর এতেই থমকে গেছে এই ক্লাবে নাম লেখানো ২৩ ফুটবলারের ভবিষ্যৎ।

এঁদেরই একজন নওগাঁর পলি মজুমদার। বাবা নদী থেকে বালু তোলার কাজ করেন। পলি পড়াশোনার পাশাপাশি ছোটবেলা থেকেই ফুটবলের নেশায় মজেছেন। বঙ্গমাতা স্কুল ফুটবলে একসময় নিয়মিত খেলতেন পলি। এই মিডফিল্ডারের পায়ের কাজ দেখেই স্থানীয় ক্লাবগুলো তাকে ধারে খেলাতে নিয়ে যায় বিভিন্ন এলাকায়। স্থানীয় ভাষায় যাকে বলে ‘খ্যাপ’। প্রতিটি ম্যাচ খেলে ৮০০ টাকা পান পলি। আর এই টাকা দিয়েই পড়ালেখার খরচ চালান, সাহায্য করেন পরিবারকে।

এবারের প্রিমিয়ার লিগে পলিকে দলে টানে স্বপ্নচূড়া ক্লাব। স্বপ্নচূড়া ক্লাবে খেলে একসময় জাতীয় দলে খেলবে এমন স্বপ্ন দেখেন পলি। কিন্তু হঠাৎ করেই পলির স্বপ্ন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। ক্লাবটি লিগে খেলতে পারবে না শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে তাঁর। কাল দুপুরে বাফুফে ভবনে দাঁড়িয়ে বলছিলেন, ‘অনেকে বলেন গরিবের মেয়ের স্বপ্ন দেখা উচিত নয়। কথাটার মানে আজ আমি বুঝতে পারলাম। ভেবেছিলাম লিগে খেলে নিজেকে প্রমাণ করব। ভবিষ্যতে যদি জাতীয় দলে খেলতে পারি, হয়তো ফুটবল দিয়ে আমার ভাগ্যের চাকা ঘুরবে। কিন্তু এখন আমার ভাগ্যটাই থমকে গেল।’

সুনামগঞ্জের মেয়ে উমা রানী দাস তো ফুটবল ছেড়ে দেওয়ার কথাই ভাবছেন, ‘আমরা এলাকায় ফুটবল খেলি বলে ছেলেরা সারাক্ষণ উত্ত্যক্ত করে। অনুশীলনে যাওয়ার সময় বলে, তোরা কি আমাদের সঙ্গে ফুটবল খেলবি? এবার ফুটবল না খেলে বাড়ি ফিরে গেলে মুখ দেখানোই দায় যাবে। ওরা আমাদের নিয়ে আরও হাসাহাসি করবে। কারণ এরই মধ্যে সবাই জেনে গেছে আমরা খেলতে পারছি না।’

ক্লাব কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্বের বলি কেন হতে হবে সেটা ভেবেই পাচ্ছেন না উমা, ‘দোষ করেছেন ক্লাবের স্যারেরা। কিন্তু আমাদের দোষ কোথায়? আমরা কেন খেলতে পারব না। মাঠের সঙ্গে মাঠের বাইরেও লড়াই করতে হচ্ছে আমাদের। এভাবে ফুটবল খেলা কঠিন হয়ে পড়ছে।’


স্বপ্নচূড়ার মেয়েরা কাল দেখা করতে চেয়েছিলেন মহিলা কমিটির চেয়ারম্যান মাহফুজা আক্তারের সঙ্গে। মাহফুজা বলেছেন, ‘লিগে ওরা না খেলতে পারলেও ওদের ফুটবল ক্যারিয়ারে কোনো সমস্যা হবে না। বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলের ট্রায়ালে সুযোগ দেওয়া হবে ওদের। যদি নিজেদের প্রমাণ করতে পারে তাহলে জাতীয় দলে সুযোগ পাবে এই মেয়েরা।’

সেই পর্যন্ত মেয়েরা ফুটবল খেলাটা চালিয়ে যেতে পারলেই হয়!