দম আটকানো ম্যাচের শেষ 'অবৈধ' বলে

জয়ের পর হাসারাঙ্গার উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি
জয়ের পর হাসারাঙ্গার উচ্ছ্বাস। ছবি: এএফপি
কলম্বোয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে রোমাঞ্চকর ম্যাচে ১ উইকেটে জিতেছে শ্রীলঙ্কা


১৪ বছরের মধ্যে শ্রীলঙ্কার মাটিতে একটা ওয়ানডে জেতার কত কাছেই না চলে এসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ! কিন্তু কপালে না থাকলে যা হয় আর কী! রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনা ছড়ানো ম্যাচে কলম্বোয় আজ তিন ওয়ানডের সিরিজের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার কাছে ১ উইকেটে হেরে গেছে উইন্ডিজ।

ম্যাচটার শেষটাও কী নাটকীয়ই না হলো! ১ রান দরকার, শ্রীলঙ্কার হাতে ১ উইকেট আর ৫ বল—এমন অবস্থায় ম্যাচের সমাপ্তি টেনে দিল একটা অবৈধ বল! শ্রীলঙ্কার শেষ বেলার জয়ের নায়ক ব্যাটসম্যান ওয়ানিদু হাসারাঙ্গা মিডউইকেটে ঠেলে ১ রান নিয়েছিলেন বটে, কিন্তু সেই রানটা আর হিসেবে নেওয়া হলো না। কিমো পলের করা ম্যাচের শেষ ওভারের দ্বিতীয় যে বলে রানটা নিয়েছিলেন হাসারাঙ্গা, সেটি ছিল কোমরেরও বেশি উচ্চতার ফুলটস! ব্যাটের রান আর হিসাব হয়নি, নো বলেই লেখা হলো শ্রীলঙ্কার জয়।

তার আগেও নাটক কি কিছু কম হয়েছে? ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২৮৯ রানের জবাবে মিডল অর্ডারের ধসে ২৫৩ রানেই ৭ উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। এর ৯ রান পর পড়ে অষ্টম উইকেট। ২৭ বলে তখনো শ্রীলঙ্কার দরকার ছিল ২৮ রান, হাতে ২ উইকেট। কিন্তু আট নম্বরে নামা ব্যাটসম্যান হাসারাঙ্গার ৩৯ বলে ৪ চার ১ ছক্কায় অপরাজিত ৪২ রানের দুর্দান্ত ইনিংসে শেষ হাসি হাসতে পেরেছে শ্রীলঙ্কা।

২৪ বলে ২৫ রান দরকার—এমন সমীকরণ নিয়ে শুরু ৪৭তম ওভারের দ্বিতীয় ও তৃতীয় বলে শেলডন কটরেলকে টানা দুই চার মেরে চাপ কিছুটা কমান হাসারাঙ্গা। ততক্ষণেই ২৮ বলে ১ ছক্কা ৩ চারে ৩১ রান হয়ে গেছে হাসারাঙ্গার। কিন্তু ক্রিজে অন্য পাশে বোলার লক্ষণ সান্দাকান, তারওপর দুই চারে বল-রানের ব্যবধানটা দাঁড়ায় ২১ বলে ১৭, সে কারণেই হয়তো ঝুঁকি নিতে চাননি হাসারাঙ্গা। কটরেল-পলদের স্লোয়ার, অফ স্টাম্পের বাইরের ফুলটস রান নেওয়ার সুযোগও তেমন দেয়নি। শেষ দুই ওভারে লক্ষ্য তাই দাঁড়ায় ১০ রান।

৪৯তম ওভারের পঞ্চম বলে আবার চার মেরে হাসারাঙ্গা সেটিকে বানান ৭ বলে ১, লঙ্কানদের হাতে তখনো ২ উইকেট। এরপরই হলো নাটক! ওই ওভারের শেষ বলে রান হয়নি, শেষ ওভারে স্ট্রাইকে সান্দাকান। পলের করা ওভারের প্রথম বলেই সিঙ্গেল নিতে গিয়ে নন-স্ট্রাইক প্রান্তে সরাসরি থ্রোতে রানআউট সান্দাকান। ১ রান দরকার তখন, হাতে ১ উইকেট। শ্রীলঙ্কানদের স্বস্তি হয়ে ক্রিজে ছিলেন হাসারাঙ্গা। তবে পলের ওই কোমরের বেশি উচ্চতার ফুলটস অত হিসেবেই যেতে দেয়নি।

অথচ শ্রীলঙ্কাকে এত রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনায় যেতে হবে, এটিই বা কে ভেবেছিল? দুই ওপেনার আভিষ্কা ফার্নান্দো (৫০ রান) ও দিমুথ করুণারত্নের (৫২ রান) ফিফটিতে উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ১১১ রান। তিনে নামা কুশল পেরেরাও করেছিলেন ৪২ রান। কিন্তু মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা উইকেট বিলিয়ে আসাতেই হারের শঙ্কায় পেয়ে বসে শ্রীলঙ্কাকে।

এর আগে টসে হেরে ব্যাটিংয়ে নামতে হওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের শুরুটা অবশ্য এত দারুণ হয়নি। সুনীল আমব্রিস আউট হওয়ায় ১০ রানেই থেমেছে উদ্বোধনী জুটি। কিন্তু আরেক ওপেনার শাই হোপের ১৪০ বলে ১১৫ রানের দুর্দান্ত ইনিংস, আর শেষ ২০ বলে অষ্টম উইকেটে জুটি বাঁধা কিমো পল (১৭ বলে ৩২) আর হেইডেন ওয়ালশ জুনিয়রের (৮ বলে ২০) এনে দেওয়া ৪৯ রানের সৌজন্যে শ্রীলঙ্কাকে ২৯০ রানের লক্ষ্য বেঁধে দিয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।