নেইমারের লাল কার্ড, পিএসজিকে জেতালেন আরেক ব্রাজিলিয়ান

গোলের পর পিএসজি খেলোয়াড়দের উল্লাস। ছবি : এএফপি
গোলের পর পিএসজি খেলোয়াড়দের উল্লাস। ছবি : এএফপি
>শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে বোর্দোকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে পিএসজি। লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়েছেন নেইমার

এমনিতে সেন্টারব্যাক হিসেবেই পরিচিতি তাঁর। সেন্টারব্যাক হিসেবেই এএস রোমাতে এক মৌসুম আলো ছড়িয়ে যোগ দিয়েছেন পিএসজিতে। এরপর মারকিনিওসের গল্পটা শুধুই এগিয়ে যাওয়ার। জাতীয় দলেও কোচ তিতের অন্যতম ভরসার ডিফেন্ডার তিনি। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপারটা ঘটে তাঁর বর্তমান ক্লাব পিএসজির হয়ে খেলতে নামলেই। পিএসজির কোচ টমাস টুখেল তাঁকে সেন্টারব্যাক নন, বরং সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবেই বেশি পছন্দ করেন। সেই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার মারকিনিওসের জোড়া গোলেই গত রাতে বোর্দোকে ৪-৩ গোলে হারিয়েছে পিএসজি।

পিএসজিতে মারকিনিওসের সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হওয়ার পেছনে কারণও আছে। কিছুদিন আগেও পিএসজিতে খেলানোর মতো পর্যাপ্ত মিডফিল্ডার ছিল না। সবেধন নীলমণি হয়ে ছিলেন মার্কো ভেরাত্তি। আর্জেন্টিনার লিয়ান্দ্রো পারেদেসকে ফুটবলার হিসেবে টুখেল ঠিক তেমন পছন্দ করেন না, ফরাসি মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান রাবিওর সঙ্গেও বিরোধটা পৌঁছে গিয়েছিল তুঙ্গে। কথায় বলে, প্রয়োজনীয়তাই উদ্ভাবনের জনক। সেই প্রয়োজনীয়তার কারণেই সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে মারকিনিওস আর দানি আলভেসকে খেলানো শুরু করেন টুখেল। পরে আলভেস ক্লাব ছেড়ে চলে গেলেও মারকিনিওসের গা থেকে সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের তকমাটা তাই উঠে যায়নি।

গত রাতেও সেটাই হয়েছে। ৪-২-২-২ ছকে খেলতে নামা পিএসজি সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হিসেবে মার্কো ভেরাত্তির সঙ্গে মাঠে নামিয়েছিল মারকিনিওসকে। সেই মারকিনিওসই জোড়া গোল করে পিএসজিকে উদ্ধার করেছেন, দলকে এনে দিয়েছেন ৪-৩ গোলের এক রুদ্ধশ্বাস জয়। পিএসজির বাকি ২ গোল এডিনসন কাভানি ও কিলিয়ান এমবাপ্পে। এমবাপ্পে-কাভানি গোল পেলেও আক্রমণভাগে পিএসজির সবচেয়ে বড় ভরসা নেইমার গোল করা তো দূরে থাক, উল্টো লাল কার্ড দেখে দলকে আরও ঝামেলায় ফেলে দিয়ে চলে গেছেন। যদিও পরে জয়ের পথে সেটা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেনি।

বোর্দোও যে হেলাফেলা করার মতো ক্লাব, তা কিন্তু নয়। নতুন মালিক এসে পিএসজির খোলনলচে পাল্টে দেওয়ার আগে বোর্দো ছিল ফরাসি ফুটবলের অন্যতম প্রধান শক্তি। এই ক্লাবে এক কালে খেলে গেছেন জিনেদিন জিদান, ক্রিস্তফার ডুগারি, বিজেন্তে লিজারাজুর মতো তারকারা। যদিও এখন তাদের অবস্থা বেশ সঙিন, পয়েন্ট তালিকার ১২তম অবস্থানে থাকা দলটি সর্বশেষ লিগ জিতেছে সেই ২০০৮-০৯ মৌসুমে।

তাও, পিএসজিকে পেয়ে নিজেদের হারানো জৌলুশের কথা মনে করিয়ে দেওয়ার প্রয়াস পেল যেন দলটা। ম্যাচের ১৮ মিনিটে দক্ষিণ কোরিয়ার স্ট্রাইকার হুয়াং উই-জো কর্নার থেকে ভেসে আসা বলে মাথা ছুঁইয়ে দলকে এগিয়ে দেন। সাত মিনিট পর মাঠের ডান প্রান্ত থেকে আর্জেন্টাইন তারকা ডি মারিয়ার বাম পায়ের মাপা ক্রসে হেড করে পিএসজিকে সমতায় ফেরান উরুগুয়ের স্ট্রাইকার কাভানি। এর কিছুক্ষণ পর ভাগ্যের পরিহাসে দলকে এগিয়ে দিতে পারেননি কাভানি, এমবাপ্পের বাড়ানো বলে তাঁর একটি ট্যাপ-ইন পোস্টে বাধা পায়।

ম্যাচের অধিকাংশ সময় বল দখলে রাখা পিএসজি প্রথমার্ধের যোগ করা সময়ের দ্বিতীয় মিনিটে এগিয়ে যায়। এবারও গোল বানিয়ে দেওয়ার কাজে ডি মারিয়া। মাঠের ডান প্রান্ত থেকে ডি মারিয়ার মারা ফ্রি-কিকে মাথা ছুঁইয়ে নিজের প্রথম গোল করেন মারকিনিওস।

তবে ২-১ গোলে এগিয়ে থেকে বিরতিতে যাওয়ার ইচ্ছেটা বাস্তবে রূপ নেয়নি পিএসজির। এদিন নিয়মিত গোলরক্ষক কেইলর নাভাসের জায়গায় পিএসজির গোলবার সামলানোর দায়িত্ব পেয়েছিলেন এই মৌসুমেই সেভিয়া থেকে দলে আসা স্প্যানিশ গোলরক্ষক সার্জিও রিকো। রিকোর একটা ভুল ক্লিয়ারেন্সে বল বোর্দোর ব্রাজিলীয় ডিফেন্ডার পাবলো নাসিমেন্তোর গায়ে লেগে পিএসজির জালে জড়ায়। সমতায় ফেরে বোর্দো।

৬৩ মিনিতে আবারও ত্রাতার ভূমিকায় মারকিনিওস। এমবাপ্পের ক্রসে কাভানির মাপা হেড বোর্দোর গোলরক্ষক বেনোয়াঁ কস্তিল আটকে দিলে বল চলে যায় ওঁত পেতে থাকা মারকিনিওসের কাছে। গোল করে দলকে আবারও এগিয়ে দেন তিনি। এর ছয় মিনিট পর কাভানির পাসে পা ঠেকিয়ে দলের ব্যবধান দ্বিগুণ করেন ফরাসি স্ট্রাইকার কিলিয়ান এমবাপ্পে।

তবে ম্যাচের ৮৩ মিনিটে আবারও পিএসজি শিবিরে ভয় ধরিয়ে দেন স্প্যানিশ মিডফিল্ডার রুবেন পারদো। ডান পায়ের দূরপাল্লার এক শটে স্কোরলাইন ৪-৩ করে ফেলেন তিনি। ম্যাচ শেষ হওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন নেইমার। শেষমেশ পরাজয়ের আশঙ্কা উড়িয়ে দিয়ে জয় নিয়েই মাঠ ছাড়ে পিএসজি।

ওদিকে প্রিমিয়ার লিগে গত রাতে এভারটনকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে আর্সেনাল। আর্সেনালের হয়ে জোড়া গোল করেছেন পিয়েরে-এমেরিক অবামেয়াং। একটি গোল এডি এনকেতিয়ার। এভারটনের হয়ে দুটি গোল করেন ডমিনিক কালভার্ট-লুইন ও ব্রাজিল তারকা রিচার্লিসন। দলে নতুন আসা তারকা ব্রুনো ফার্নান্দেসের নৈপুণ্যে ওয়াটফোর্ডকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড। ফার্নান্দেসের পেনাল্টি গোল ছাড়াও গোল করেছেন ফরাসি স্ট্রাইকার অ্যান্থনি মার্শিয়াল ও ইংলিশ স্ট্রাইকার মেসন গ্রিনউড। নরউইচকে ৩-০ গোলে হারিয়েছে উলভারহ্যাম্পটন। লা লিগায় ভিয়ারিয়ালকে ৩-১ গোলে হারিয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। গোল করেছেন অ্যানহেল কোরেয়া, হোয়াও ফেলিক্স ও কোকে।

সিরি আ তে লেচ্চেকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছে এএস রোমা। একটি করে গোল করেছেন তুরস্কের উইঙ্গার চেঙ্গিজ উনদের, আর্মেনিয়ার মিডফিল্ডার হেনরিখ মেখিতারিয়ান, বসনিয়ার স্ট্রাইকার এডিন জেকো ও সার্বিয়ার লেফটব্যাক আলেক্সান্ডার কোলারভ। জেনোয়াকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে লাৎসিও।