যে কারণে মুশফিক নির্ভার

শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে পাওয়া প্রথম সেঞ্চুরিকে ডাবলে রূপ দিয়েছেন মুশফিক। ছবি: শামসুল হক
শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে পাওয়া প্রথম সেঞ্চুরিকে ডাবলে রূপ দিয়েছেন মুশফিক। ছবি: শামসুল হক
>

কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাঁকে। টেস্টে এখন উইকেটকিপিং না করার দুটি দিকই দেখছেন মুশফিক

নভেম্বরের ভারত সফর থেকে নিয়মিত উইকেটকিপিং করছেন না মুশফিকুর রহিম। যদিও কিপিং গ্লাভস দূরে রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ ছিল না তাঁর জন্য। দলীয় সিদ্ধান্তকে সম্মান জানিয়ে উইকেটকিপিং থেকে তবুও সরেই দাঁড়িয়েছেন তিনি।

সরে দাঁড়িয়েছেন ঠিক, পছন্দের কাজটা না করতে পেরে কি মন খারাপ হচ্ছে মুশফিকের? তাঁর উইকেটকিপিং করা না করা নিয়ে তো কম বিতর্ক হয়নি। বেশির ভাগ সময়েই তিনি কিপিং গ্লাভস হাতছাড়া করতে চাননি। নানা সময়ে টিম ম্যানেজমেন্টের সিদ্ধান্তে ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন, তবে এ নিয়ে নিজের অভিমানও খুব একটা গোপন রাখেননি।

মুশফিক সব সময়ই বলে এসেছেন ব্যাটিংয়ের সুবিধার্থে তিনি উইকেটকিপিং করেন। উইকেটের আচরণ, বলের গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে উইকেটের পেছনে থেকেই নাকি খুব ভালো ধারণা পান। শুধু ব্যাটসম্যানের চেয়ে স্বীকৃত উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে তাঁর রেকর্ড তুলনামূলক ভালো। ৫৫ টেস্টে ৩৭.০ গড়ে রান ৩৫১৫। ৭ সেঞ্চুরির ৬টিই পেয়েছেন কিপারব্যাটসম্যান হিসেবে। দুটি ডাবল সেঞ্চুরিও পাওয়া একই ভূমিকায়। ক্যারিয়ারের বেশির ভাগ সময় উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন বলেই হয়তো পরিসংখ্যানটা এমন উজ্জ্বল। শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলেছেন ১৫ টেস্ট। ৩৫.৯২ গড়ে রান করেছেন ৮৯৮। কিপিং গ্লাভস খুলে রেখে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলে প্রথম সেঞ্চুরিটা পেয়েছেন কাল। সেটিও আবার রূপ দিয়েছেন ডাবলে।

যে উইকেটকিপিং এত ভালোবাসেন, সেটি ছেড়ে শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন ছিল মুশফিকের। তবুও কেন ছাড়লেন, সেটি কাল সংবাদ সম্মেলনে বলছিলেন ৩২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান, ‘এখনো অনুভব করি উইকেটের পেছন থাকাটা আমাকে অনেক সহায়তা করে। এখন আমাকে তথ্য নিতে হয়। লিটনের কাছে জানতে হয় কী হচ্ছে, স্লিপে কী হচ্ছে। আবার একই সঙ্গে আমার বয়স বেশির দিকেই যাচ্ছে। ফিল্ডিংয়ে থাকলে একটু নির্ভার থাকতে পারি। বলতে পারেন এটার প্রতিফলন হয়তো আমার ব্যাটিংয়ে পড়ছে। তবে এখনো কিপিংটা অনেক মিস করি। দল যেটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে এটা আমি সম্মান করি।’

কিপিং না করাটা আদপে উপকারই করেছে মুশফিককে। এখন তিনি আরও নির্ভার হয়ে মনোযোগ দিতে পারছেন ব্যাটিংয়ে। এ প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে একটু রসিকতাও করলেন টেস্টে এই মুহূর্তে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রানসংগ্রাহক, ‘এখন তো চাপ আরও বেড়ে গেল। আগে দুটি ভূমিকা ছিল। একটা খারাপ করলে অন্তত আরেকটা থেকে সহায়তা পাওয়া যেত। এখন একটা মাত্র দিক। আমি তো বোলিংও পারি না! বাস্তবতা অবশ্যই মানতে হবে। আমার মনে হয়, এটাই আমার সঠিক সময় এখন অন্য দিকে একটু মনোযোগ দেওয়ার। ফিল্ডিংয়ের সময় আমি একটু নির্ভার থাকতে পারি। এতে ব্যাটিংয়ে আমার মনোযোগটা আরও বেশি থাকে। ভালো যাচ্ছে, আশা করছি এটা ধরে রাখতে পারব।’

উইকেটকিপিং না করে যদি মুশফিকের ব্যাটিংয়ে রানবন্যা দেখা যায়, ক্রিকেটানুরাগীরা বলবেন, এভাবেই চলুক না!