লিটনের অসমাপ্ত ইনিংসের পর বাংলাদেশ ৩২১

লিটনের ইনিংসটা রয়ে গেল অসমাপ্ত। ছবি: শামসুল হক
লিটনের ইনিংসটা রয়ে গেল অসমাপ্ত। ছবি: শামসুল হক
>সিলেটে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩২১ করেছে বাংলাদেশ। এটি ওয়ানডতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ

লিটন দাস যখন পায়ের মাংসপেশিতে টান খেয়ে মাঠ থেকে উঠে গেলেন, তখন বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৬.২ ওভারে ২০৬। লিটন খেলেছেন ১০৫ বলে ১২৬ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। যেভাবে তিনি খেলছিলেন, তাতে ৫০ ওভার শেষে সংগ্রহটা অনেক দূর যাবে, এমন ভাবনার মানুষ কম ছিলেন না। বিশেষ করে লিটনের পরে যেখানে মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মোহাম্মদ মিঠুন কিংবা মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ছিল ৩২০। আজ বাংলাদেশ সেটিকে ছাড়িয়ে যাবেই—প্রত্যাশাটা ছিল এমনই। বাংলাদেশ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে আগের সংগ্রহকে ছাড়িয়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু করতে পেরেছে মাত্র ১ রান বেশি। লিটনের অসমাপ্ত সেঞ্চুরির পর মিঠুনের ফিফটি আর সাইফউদ্দিনের ঝোড়ো ব্যাটিংয়ে ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩২১ রানে থেমেছে বাংলাদেশ।

ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পেয়েছেন লিটন। ২০১৮ সালে দুবাইয়ে এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে ঝড় তুলেছিলেন। ১২১ রানের সেই ইনিংসে নিজেকে চিনিয়েছিলেন তিনি। মাঝখানে ওয়ানডেতে বেশ কয়েকটা সম্ভাবনাময় ইনিংস খেললেও তিন অঙ্কে পৌঁছাতে পারেননি। আজ সিলেটে সেই অপেক্ষাটা ঘুচল। লিটনের ‘অসমাপ্ত’ ১২৬ তাঁর ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ, সিলেটের মাঠেও এটি সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।
ওপেনিংয়ে লিটনের সঙ্গী তামিম ইকবাল ধুঁকেছেন শুরু থেকেই। সে তুলনায় লিটনের ব্যাটে ছিল আত্মবিশ্বাসী আর মুগ্ধতা ছড়ানো সব শট। শুরুতে তাঁর স্ট্রাইক রেট ছিল ১০০-এর ওপর। ফিফটি পেয়েছিলেন ৪৫ বলে। কিন্তু সত্তর পার হওয়ার পর কেন যেন নিজেকে গুটিয়ে নিলেন তিনি। সেঞ্চুরির আগে বাউন্ডারি মারতে পারেননি ৩১ বল। কিন্তু তাতে কী! সিঙ্গেলস কিংবা ডাবলস নেওয়া কখনোই বন্ধ করেননি তিনি। সে কারণেই ইনিংসটিতে স্ট্রাইক রেট কখনোই ১০০-এর নিচে নামতে দেননি তিনি। লিটন আহত হয়ে মাঠ ত্যাগের আগে খেলা শেষ বলটিতে মেরেছেন দুর্দান্ত এক ছক্কা। ওই শটটি খেলেই পায়ের মাংসপেশির ব্যথায় কুঁকড়ে ওঠেন তিনি। ড্রেসিং রুমে ফেরেন ফিজিওর কাঁধে ভর দিয়ে।

৬৮ রানের জুটি গড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ-মিঠুন। মিঠুন পেয়েছেন ফিফটি। ছবি: শামসুল হক
৬৮ রানের জুটি গড়েছিলেন মাহমুদউল্লাহ-মিঠুন। মিঠুন পেয়েছেন ফিফটি। ছবি: শামসুল হক

লিটনের মাঠ ছাড়াটা ছিল বড় ধাক্কাই। বিশেষ করে তিনি যেভাবে খেলছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশা ছিল তাঁর পরের নামগুলোর কাছে—মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মিঠুন। লিটনের ওই ইনিংসটির ধারেকাছেও যদি তাঁরা থাকেন, বাংলাদেশের সংগ্রহ অনেক দূর গিয়ে থামে। কিন্তু মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। মুশফিক তিরিপান্নোর বলে উইকেটের পেছনে মুতুম্বামিকে ক্যাচ দেন। আউট হওয়ার সময় তিনি করেছিলেন ২৬ বলে ১৯ রান। মাহমুদউল্লাহ মিঠুনের সঙ্গে গড়েছিলেন ৬৮ রানের জুটি। এ জুটিতে অবশ্য মিঠুনই ছিলেন রান তোলায় এগিয়ে। মাহমুদউল্লাহ মিঠুনকে সঙ্গ দিয়ে হাত খোলা শুরু করেছিলেন। কিন্তু ২৮ বলে ৩২ করে ফেরেন তিনি। তাঁর ইনিংসে ছিল ২ বাউন্ডারি ও একটি বিশাল ছক্কা।
মিঠুন ৪১ বলে ৫০ করেছেন। ৫টি বাউন্ডারি আর এক ছক্কায় সাজানো ইনিংসটি আরও বড় করতে পারতেন তিনি। বল বলতে অন্তত ইনিংসের শেষ পর্যন্ত টিকে থাকটাই প্রত্যাশিত ছিল তাঁর কাছে। তবে তিনি যতটুকু করেছেন, সেটা কম নয়। শেষ দিকে দ্রুত তিন উইকেটের পতনে মনে হচ্ছিল দলীয় সংগ্রহটা বোধ হয় কোনোক্রমে ৩০০ পেরোবে। কিন্তু সাইফউদ্দিন ঝড় তুলে বাংলাদেশকে নিয়ে গেছেন ৩২১-এ। সাইফউদ্দিন ১৫ বলে ২৮ করেছেন। মেরেছেন তিনটি বিশাল, দৃষ্টিনন্দন ছক্কা।

১৫ বলে ২৮ করে শেষ দিকে ঝড় তুলেছিলেন সাইফউদ্দিন। ছবি: শামসুল হক
১৫ বলে ২৮ করে শেষ দিকে ঝড় তুলেছিলেন সাইফউদ্দিন। ছবি: শামসুল হক

এর আগে, লিটনকে পুরোদমে মেলে ধরার সুযোগ দিয়ে তামিম নিজে আস্তে আস্তে ইনিংস গড়ার কাজে মন দিয়েছিলেন। কিন্তু ১৩ ওভার শেষে সেই তামিমই ফিরে গেছেন দুই ওপেনারের মধ্যে সবার আগে। অভিষিক্ত তরুণ অলরাউন্ডার ওয়েসলি মাধভেরে এলবিডব্লুর ফাঁদে ফেলেছেন তাঁকে। তবে আউট হওয়ার আগে লিটনের সঙ্গে বাংলাদেশের ইনিংসের ভিত্তিটা বেশ ভালোভাবে গড়ে দিয়ে গেছেন তামিম; যদিও প্রত্যাশার চেয়ে মন্থর ব্যাটিং করেছেন। ৪৩ বল খেলে দুটি চার মেরে ২৬ রান করেছেন তিনি। এলবিডব্লু  হওয়ার পর রিভিউ নিয়েছিলেন। লাভ হয়নি। ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট হিসেবে তামিমকেই পেয়েছেন মাধভেরে। ওয়ানডেতে ৭ হাজার রানের মাইলফলক ছুঁতে তামিমের দরকার ছিল আর ১০৮ রান। এই ম্যাচে অন্তত হলো না সেই রেকর্ড। দ্বিতীয় উইকেটে নাজমুল হোসেনের সঙ্গে ৭৭ বলে ৮০ রানের জুটি গড়েন লিটন। ২৯ রান করে তিনোতেন্দা মুতুম্বোদজির বলে আউট হন নাজমুল।
ব্যাটসম্যানরা নিজেদের কাজ করে দিয়ে গেছেন। এখন বাকি দায়িত্ব পুরোপুরিই বোলারদের। দায়িত্বে সফল হওয়ার রসদ কিন্তু আছেই বাংলাদেশ দলের কাছে।