৪৫ বছর আগের স্মৃতি মনে করিয়ে দিলেন রিয়াল গোলরক্ষক

গোটা ম্যাচে বার্সার খেলোয়াড়দের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কোর্তোয়া। ছবি : এএফপি
গোটা ম্যাচে বার্সার খেলোয়াড়দের সামনে চীনের প্রাচীর হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কোর্তোয়া। ছবি : এএফপি
>

গত রাতে বার্সেলোনাকে নিজেদের মাঠে ২-০ গোলে হারিয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদ। জাত চিনিয়েছেন রিয়ালের বেলজিয়ান গোলরক্ষক থিবো কোর্তোয়া

গত ফুটবল বিশ্বকাপের পর চেলসি থেকে রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেওয়ার পর থেকেই সমালোচনা তাঁর পিছে লেগে আছে।

নিজের রিয়ালে আসার অনেক ইচ্ছে ছিল, যে কারণে চেলসি–সমর্থকদের উষ্মা হজম করেছেন। এ ছাড়া তাঁর রিয়ালে আসার কারণে টানা তিনবার চ্যাম্পিয়নস লিগজয়ী গোলরক্ষক কেইলর নাভাসকে ক্লাব ছাড়া হতে হয়েছে, যে কারণে রিয়ালের একশ্রেণির সমর্থক থিবো কোর্তোয়ার রিয়ালে যোগ দেওয়ার বিষয়টা ঠিক ভালোভাবে নিতে পারেননি।

শুরুতে প্রতি ম্যাচে কোর্তোয়ার কেমন খেলছেন, একদম মাইক্রোস্কোপ দিয়ে পরীক্ষা করা হতো যেন। অন্য দলের সমর্থকেরা তো বটেই, নিজের দলের সমর্থকেরাও করতেন এই কাজ। একটা ভুল হলেই সব শেষ। একটু পা হড়কালেই ছুটে আসত সমালোচনার তির। ক্লাব বদল করে অন্য দেশে আসলে অনেক সময় খাপ খাইয়ে নিতে সময় লাগে, কোর্তোয়ারও লেগেছে। প্রথম-প্রথম রিয়ালের হয়ে খেলতেনও সাদামাটা। ফলে সমর্থকদের অসন্তুষ্টি ও প্রতিপক্ষের নিন্দা কী জিনিস, হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন কোর্তোয়া।

কিন্তু সেসব দিন এখন দূর অস্ত। আস্তে আস্তে এখন রিয়াল সমর্থকদের দেখিয়ে দিচ্ছেন তাঁর মান। বিশেষ করে বার্সেলোনার বিপক্ষে এল ক্লাসিকোতে। এই মৌসুমের দুই এল ক্লাসিকোতে অসাধারণ একটা রেকর্ড করেছেন কোর্তোয়া। ৪৫ বছর পর এই প্রথম লিগে বার্সেলোনার বিপক্ষে দুই ম্যাচে গোল না খেয়ে থাকলেন কোনো রিয়াল গোলরক্ষক।

৪৫ বছর আগে কী অবস্থা ছিল রিয়াল-বার্সার? তখন চলছে ১৯৭৪-৭৫ মৌসুম। বার্সায় তখন খেলতেন ইয়োহান ক্রুইফ। মাত্রই দলে যোগ দিয়েছেন ইয়োহান নিসকেন্স। ওদিকে রিয়ালে ছিলেন সান্তিলানা, গুন্টার নেটজার, পল ব্রাইটনার ও ভিসেন্তে দেল বস্কের মতো তারকারা। গোলবার সামলাতেন হয় মিগুয়েল অ্যানহেল, না হয় মারিয়ানো গার্সিয়া রেমন। সেবারই সর্বশেষ বার্সার বিপক্ষে মৌসুমের দুই লিগ ম্যাচ খেলে একটা গোলও হজম করেনি রিয়াল। সেবারও এবারের মতো বার্সার মাটিতে গোলশূন্য ড্র ও নিজেদের মাঠে জয় পেয়েছিল রিয়াল (১-০)। মৌসুম শেষে লিগও জেতে তারাই।

এর আগে ১৯৩৫-৩৬ ও ১৯৫৭-৫৮ মৌসুমেও একই কাজ করেছিল রিয়াল।

এরপর কত তারকাই তো খেলে গেলেন রিয়ালের হয়ে। গোলবার সামলালেন জার্মানির কিংবদন্তি গোলরক্ষক বোডো ইলগনার, স্পেনের ফ্রান্সেসকো বুয়ো, অগুস্তিন প্রমুখ। ইকার ক্যাসিয়াসের কথাই বা কীভাবে ভোলা যায়! তবে এদের কেউই কোনো মৌসুমে বার্সার বিপক্ষে দুটি লিগ ম্যাচে গোল না খেয়ে থাকেননি। ‘অসাধ্য’টা সাধন হয়েছে কোর্তোয়ার হাত ধরেই।

কিছুদিন আগেই কোর্তোয়া বলেছিলেন, মেসিকে নিয়ে আলাদাভাবে চিন্তা করছেন না তিনি। এল ক্লাসিকোর শুরুর আগেই মনস্তত্ত্বের খেলায় বার্সাকে হারিয়ে দিতে চাইছিলেন হয়তো! কিন্তু কোর্তোয়া দেখিয়ে দিলেন, শুধু মুখেই নয়, নিজের কাজেও পারদর্শী তিনি। বারবার কোর্তোয়া নামের দেওয়ালের সামনে মুখ থুবড়ে পড়ল মেসি, গ্রিজমান, ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ং, আর্থার মেলোদের সকল আক্রমণ।

বার্নাব্যুতে গোল না করা কীভাবে থাকতে হয়, সেটা ভুলেই গিয়েছিল বার্সেলোনা। সর্বশেষ সেই ২০০৬ সালে বার্নাব্যুতে এসে গোলহীন থেকেছিলেন মেসি-ইতোরা। ভুলে যাওয়া সে স্বাদ গতকাল বার্সা পেল এই কোর্তোয়ার কল্যাণেই।