সাবেক আর্জেন্টাইনের চোখেই মেসি যেন অবসরে যাওয়া খেলোয়াড়

বার্নাব্যুতে কাল হতাশ মেসিকেই দেখা গেছে। ছবি: রয়টার্স
বার্নাব্যুতে কাল হতাশ মেসিকেই দেখা গেছে। ছবি: রয়টার্স

৬.৩৯!

তেমন বিশেষ কোনো সংখ্যা নয়। তবে খুঁজলে সংখ্যাটার একটা তাৎপর্য পাওয়া যেতে পারে। ফুটবল বিশ্লেষণের ওয়েবসাইট হুস্কোরড প্রতি ম্যাচেই ফুটবলারদের পারফরম্যান্সের ভিত্তিতে একটা রেটিং দেয়। ১০-এর মধ্যে কে কত পেলেন, সেটি বোঝায় ম্যাচে কার পারফরম্যান্স কেমন ছিল। হুস্কোরডের রেটিংই এ ক্ষেত্রে অন্য সব ওয়েবসাইটের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পায়। তা সেই হুস্কোরডের বিশ্লেষণ, গতকাল রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে স্প্যানিশ লিগ মৌসুমের দ্বিতীয় ও শেষ এল ক্লাসিকোতে বার্সেলোনার ২-০ গোলের হারের ম্যাচে কাতালান ক্লাবটির অধিনায়ক লিওনেল মেসির পারফরম্যান্সের রেটিং এটি—৬.৩৯।

এর তাৎপর্য? লিগে এই মৌসুমে এর চেয়ে কম রেটিং কোনো ম্যাচে পাননি মেসি! একে ম্যাচটা চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদের মাঠে, তারওপর ভাবা হচ্ছিল এই ম্যাচই গড়ে দেবে এবারের স্প্যানিশ লিগের শিরোপার পথ। এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে মেসির এমন হতাশাজনক পারফরম্যান্স বার্সেলোনা সমর্থকদের হতাশ করেছে, এ নিয়ে সংশয় সামান্যই।

হতাশ হয়েছেন স্প্যানিশ এল চিরিঙ্গিতো টিভিতে ম্যাচটির বিশ্লেষক হিসেবে কাজ করা সাবেক আর্জেন্টাইন গোলকিপার উগো গাত্তি। সত্তরের দশকে আর্জেন্টিনার হয়ে ১৮টি ম্যাচ খেলা গাত্তির এমনিতেই মেসির সমালোচক হিসেবে বেশ খ্যাতি আছে। তা শুধু এই ম্যাচ নয়, সাম্প্রতিক সময়ে মেসির পারফরম্যান্স আর তাঁর শরীরী ভাষা দেখে বোকা জুনিয়র্সের গাত্তির মনে হয়েছে, মেসি যেন অবসরে চলে যাওয়া কোনো খেলোয়াড়!

ফুটবল তো শুধু সংখ্যা আর রেটিং দিয়ে বিচার করা যায় না! গোল, গোলে সহায়তা, কী পাস (যে পাসের পর শট নিতে পারেন সতীর্থ কোনো খেলোয়াড়), ড্রিবল—এই পরিসংখ্যানগুলো ফুটবলে অনেক কিছু বলে, তবে সবটা নয়। সেখানে দর্শকের চোখের দেখা একটা ব্যাপার। আবার অনেক সময় সাদা চোখের দৃষ্টির অগোচরেও থেকে যায় অনেক কিছু, যা হয়তো ফুটবল বিশ্লেষক চোখেই ধরা পড়তে পারে। আর দর্শক আর বিশ্লেষক দুই চোখই হয়তো বলবে, শুধু এই ম্যাচ নয়, বেশ কিছুদিন ধরেই মেসি অনেকটা নিষ্প্রাণ। গোল করছেন-করাচ্ছেন বটে, দলের খেলাও গড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু মেসি বলতে ম্যাচজুড়ে যে জাদুর সম্মোহন ছিল একটা সময়, সেটি গত কিছুদিনে অনেকটাই অনুপস্থিত।

উগো গাত্তি। ছবি: সংগৃহীত
উগো গাত্তি। ছবি: সংগৃহীত

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে কাল যেমন মেসির জাদুর ছিটেফোঁটাও ছিল না। বল হারিয়েছেন বারবার। দুটি দারুণ সুযোগ নষ্ট করেছেন। আর ৭১ মিনিটে ভিনিসিয়ুসের গোলে রিয়াল ম্যাচে প্রথমবার এগিয়ে যাওয়ার চার মিনিট পর যা হলো, সেটি তো অনেক প্রশ্ন আর একটা শঙ্কাও তুলে দিয়েছে—৩২ বছর বয়সেই কি মেসি ফুরিয়ে গেছেন? মাঝমাঠ থেকে ফ্রেঙ্কি ডি ইয়ংয়ের থ্রু ধরে রিয়ালের সব ডিফেন্ডারকে এড়িয়ে গোলমুখে ছুটেছিলেন মেসি। এমন পরিস্থিতিতে দশবারের মধ্যে নয়বারই গোল করে বেরিয়ে আসেন মেসি। কিন্তু বাকি যে একবার, সেটিই যেন কাল দেখা গেছে। তা-ও রিয়াল সমর্থক বাদে অন্য যেকোনো ফুটবলপ্রেমী চোখের জন্য অপ্রীতিকর দৃশ্যই। মেসি দৌড়েছেন বটে, কিন্তু তাতে গতি ছিল কম। অনেক পেছন থেকে এসেও রিয়াল লেফটব্যাক মার্সেলো মেসি শট নেওয়ার আগেই তাঁর পা থেকে বল কেড়ে নিয়েছেন। মেসির গতি যে কমে গেছে, সেটির প্রমাণ অবশ্য গত কয়েক ম্যাচেই বেশ চোখে পড়েছে। এল ক্লাসিকো বলে কালকের ঘটনাটা আলোচনায় বেশি এসেছে, এই যা!

নতুন কোচ কিকে সেতিয়েনের কৌশলে এখন মেসি অনেকটাই মাঝমাঠে নেমে খেলা গড়ায় বেশি মনোযোগ দেন। কিন্তু সেখানে তাঁকে ঘিরে থাকা চার-পাঁচজন প্রতিপক্ষের দঙ্গলে বল হারাচ্ছেন অনেকবার। খেলায় মেসির প্রভাব যেন কমছে ধীরে ধীরে!

গাত্তির কথায়ও যেন সেটিরই ঝাঁঝ। কালকের ম্যাচের পর মেসিকে নিয়ে আর্জেন্টাইন ক্লাব বোকা জুনিয়র্সে কিংবদন্তিতুল্য গোলকিপারের চাঁচাছোলা সমালোচনা, ‘মেসি বিশ্বের সেরা হতে পারে, কিন্তু বড় ম্যাচে ওকে খুঁজে পাওয়া যায় না। (দল চাপে পড়লে) ওর মুখে একটা দুঃখী ভাব থাকে, সতীর্থদের জন্য কোনো প্রেরণা জোগাতে পারে না ও।’ শুধু এই ম্যাচই নয়, সাম্প্রতিক সময়েই মেসির শরীরী ভাষা দেখে গাত্তির উপলব্ধি, ‘মেসিকে দেখে মনে হয় ও যেন অবসরে চলে যাওয়া কোনো খেলোয়াড়। বার্সেলোনাও আজ (কাল) মাঠজুড়েই ছিল জঘন্য।’

স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন সত্যি হলে মেসির এমন পারফরম্যান্সের কারণ হতে পারে মাংসপেশির চোট। গত মাস দু-এক ধরেই নাকি চোটটা নিয়েই খেলে চলেছেন মেসি। চোটটা তাঁকে মাঠের বাইরে ঠেলে দেওয়ার মতো গুরুতর নয় ঠিকই। দল নিয়ে ক্লাবের বোর্ডের অদূরদর্শী পরিকল্পনা আর একের পর এক চোটের কারণে মেসিকে বিশ্রামেও রাখার মতো অবস্থায় নেই বার্সা। কিন্তু খেলে চললেও চোটটা বার্সার নম্বর টেনের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলছে বেশ!