কিসের শাস্তি পাচ্ছেন মুশফিক?

মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো
মুশফিকুর রহিম। ছবি: প্রথম আলো

মুশফিকুর রহিমের নিজেরও কি মনে আছে তারিখটা? স্কোয়াডে থেকেও সর্বশেষ কবে সুযোগ পাননি বাংলাদেশ দলের একাদশে?

চোটে না পড়লে এ রকম দুর্ভাগ্যে আসলে তাঁকে কমই পড়তে হয়েছে। সর্বশেষ উদাহরণ, ২০১৯ সালের নিউজিল্যান্ড সফর। চোটের কারণে খেলতে পারেননি প্রথম দুই টেস্টে। ক্রাইস্টচার্চের তৃতীয় টেস্টে যা-ও খেলার কথা ছিল, টেস্ট শুরুর আগের দিন মসজিদে বন্দুকধারীর হামলায় তো পরে আর ম্যাচটাই হলো না।

মুশফিকের একাদশের বাইরে থাকার ইতিহাস ঘাঁটতে হচ্ছে বিসিবির একটি সিদ্ধান্তের কারণে। লাহোর, রাওয়ালপিন্ডির মতো মুশফিক পাকিস্তান সফরের শেষ অংশ করাচি পর্বেও না যাওয়ার সিদ্ধান্তে অটল। সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে তাই কাল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে খেলানো হবে না মুশফিককে। নির্বাচকদের মাধ্যমে এর যে ব্যাখ্যা জানা গেছে, সেটি মেনে নেওয়া কঠিনই। মুশফিক যেহেতু পাকিস্তানে যাবেনই না, তাঁর জায়গায় কালকের ম্যাচে এমন কাউকে তাঁরা খেলাতে চান, যাঁর পাকিস্তানে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। ওই খেলোয়াড়কে ম্যাচ প্র্যাকটিসের সুযোগ দিতেই নাকি এমন সিদ্ধান্ত, যাতে যুক্তি বলতে তেমন কিছুই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

ঠিক সামনেই যে ম্যাচ আছে, সেটি বাদ দিয়ে প্রায় এক মাস পরের একটি ম্যাচ নিয়ে ভাবা কেন? জিম্বাবুয়েকে যত সহজ প্রতিপক্ষ ভাবা হয়েছিল, তারা যে তত সহজ নয়, সে তো দ্বিতীয় ওয়ানডেতেই বোঝা গেছে! শেষ বলে পাওয়া রুদ্ধশ্বাস জয়ে যে ভূমিকা ছিল মুশফিকের ৫৫ রানের ইনিংসটিরও, সেটিও কি এত দ্রুত ভুলে গেল সবাই!

দুর্দান্ত ফর্মে থাকা একজন ব্যাটসম্যানকে শুধু আরেকজনকে ম্যাচ প্রস্তুতির সুযোগ দিতে বসিয়ে রাখা কতটা যুক্তিসংগত, কাল জানতে চাওয়া হয়েছিল প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীনের কাছে। তাঁর ব্যাখ্যা, ‘মুশফিকের অনুপস্থিতিতে আমরা পাকিস্তানের ম্যাচের জন্য যেভাবে দল সাজাতে চাই, জিম্বাবুয়ে সিরিজের শেষ ম্যাচ সেভাবেই খেলাব।’

পরিবর্তিত সূচি অনুযায়ী বাংলাদেশ দল করাচিতে একমাত্র ওয়ানডে খেলবে ১ এপ্রিল। এর এত আগে একটিমাত্র ম্যাচ প্র্যাকটিসে কার কী উপকার হবে, সেটি বিসিবি আর নির্বাচকেরাই ভালো জানেন। আর ম্যাচ প্র্যাকটিসের জন্য তো সামনে প্রিমিয়ার লিগ ছিলই!

মুশফিককে না খেলানোর সিদ্ধান্ত থেকে কালকের ম্যাচের একাদশ আর ব্যাটিং অর্ডারও সাজিয়ে ফেলেছে নির্বাচক কমিটি ও বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। মুশফিকের জায়গায় চার নম্বরে ব্যাট করবেন মোহাম্মদ মিঠুন। আর মিঠুনের জায়গায়, অর্থাৎ ছয়ে আফিফ হোসেন। এ ম্যাচে আফিফের সঙ্গে অভিষেক হওয়ার সম্ভাবনা আছে মোহাম্মদ নাঈম শেখেরও। গত ম্যাচে হাতে চোট পাওয়া নাজমুল হোসেন শেষ পর্যন্ত খেলতে না পারলে নাঈম খেলবেন তাঁর জায়গায়।

নাজমুলের খেলার সম্ভাবনা কম বলেই তৃতীয় ওয়ানডের জন্য প্রথম দুই ম্যাচের ১৫ জনের দলের সঙ্গে ১৬ তম সদস্য হিসেবে ডাকা হয়েছে সৌম্য সরকারকে। তবে সৌম্যের এ ম্যাচে খেলার সম্ভাবনা নেই। তাঁকে স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করা মূলত কনকাশন বদলির চিন্তা থেকে। একই কারণে মুশফিককেও রেখে দেওয়া হয়েছে দলের সঙ্গে।

পাকিস্তানে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত মুশফিকের শুরু থেকেই। তাঁর এই সিদ্ধান্ত কোনো চমক হয়েও আসেনি। কারণ, বিসিবিই বলেছিল, কোনো ক্রিকেটার এই সফরে যেতে না চাইলে তাঁকে জোর করা হবে না। পরিবারের ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে পাকিস্তান যাওয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেওয়া সে কারণেই সহজ হয়ে গিয়েছিল মুশফিকের জন্য। এরপর রাওয়ালপিন্ডিতে টেস্ট হলো, করাচি যাওয়ার সময়ও এগিয়ে আসছে। আর বিসিবিও যেন বারবারই ভুলে যাচ্ছে, এই সফর থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার স্বাধীনতা তারাই খেলোয়াড়দের দিয়েছিল। রাওয়ালপিন্ডির পর করাচি যাওয়ার আগেও তাই নতুন করে মুশফিককে সিদ্ধান্তে অটল থাকার কথা জানাতে হচ্ছে।

সিরিজের শেষ ওয়ানডেতে কাল মুশফিককে খেলতে না দেওয়াটা যত না করাচির ওয়ানডের চিন্তা থেকে, তার চেয়ে বেশি এটাকে একটা শাস্তিই মনে হচ্ছে। বড়রা তাদের কথায় অটল থাকতে না পারলেও মুশফিককে যে টলানো যায়নি তাঁর অবস্থান থেকে!