নেইমার না এমবাপ্পে - কাকে ছাড়বে পিএসজি?

নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে (ডানে)। দুজনকে আগামী মৌসুমে একইসঙ্গে পিএসজিতে দেখার সম্ভাবনা কম। ছবি: রয়টার্স
নেইমার ও কিলিয়ান এমবাপ্পে (ডানে)। দুজনকে আগামী মৌসুমে একইসঙ্গে পিএসজিতে দেখার সম্ভাবনা কম। ছবি: রয়টার্স
>

নেইমার জুনিয়র ও কিলিয়ান এমবাপ্পে—আগামী মৌসুমে দুজনই ক্লাব ছাড়তে চান বলে বাজারে গুঞ্জন। কিন্তু নেইমার আর এমবাপ্পে একসঙ্গে ছাড়বে না পিএসজি

পিএসজির সঙ্গে দুজনের বর্তমান চুক্তি ২০২২ পর্যন্ত। সেটি নবায়নে পিএসজি প্রস্তাব দিলেও গড়িমসি করছেন নেইমার আর কিলিয়ান এমবাপ্পে দুজনই। এর মধ্যে দুজনকে ঘিরে বাজারে গুঞ্জনের তো আর অভাব নেই! স্প্যানিশ দুই পরাশক্তি পিছু নিয়েছে এমবাপ্পে-নেইমারের। বার্সেলোনা ফেরাতে চায় নেইমারকে, এমবাপ্পেকে নিয়ে যেতে চায় রিয়াল মাদ্রিদ। নেইমার নিজেও বার্সায় ফিরতে আগ্রহী, আর রিয়ালে খেলা তো এমবাপ্পের ছোটবেলার স্বপ্ন।

এত কিছুর মধ্যে পিএসজি পড়েছে গ্যাঁড়াকলে! এই মৌসুমের শেষে আগামী গ্রীষ্মকালীন দলবদলে নেইমার-এমবাপ্পেকে ধরে রাখতে পারবে তো ফরাসি ক্লাবটি?

তবে স্পেন ও ফ্রান্সের সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, এরই মধ্যে একটা অবস্থা বুঝে একটা ব্যবস্থা ঠিক করে নিয়েছে পিএসজি। নেইমার-এমবাপ্পে দুজনকেই তো আর একসঙ্গে ছাড়া যাবে না, তাহলে ক্লাবই পড়ে যাবে সংকটে। সময়ের ফুটবলের সেরা খেলোয়াড়দের দুজনের অভাব একসঙ্গে পূরণ করা শুধু কঠিনই নয়, প্রায় অসম্ভবই হবে। পিএসজি তাই অন্তত এই মৌসুম শেষে দুজনকে একসঙ্গে ছাড়বে না ঠিক করেছে। সে ক্ষেত্রে কাকে রাখবে আর কাকে ছাড়বে? ইউরোপের সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন, এমবাপ্পেকে ধরে রাখতে যা সম্ভব সবই করবে পিএসজি, ছেড়ে দেবে নেইমারকে।

ফ্রান্সের সাময়িকী ফ্রান্স ফুটবল ও প্যারিসের পত্রিকা লো পারিসিয়েন বলুন, আর স্পেনের মার্কা কিংবা এএস—সবখানে একই খবর। ২০১৭ সালের আগস্টে বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যাওয়া নেইমারকে আবার ফেরাতে এই মৌসুমের শুরুতে উঠেপড়ে লেগেছিল বার্সা। অনেক আলোচনাও হয়েছিল পিএসজির সঙ্গে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত বনিবনা হয়নি। সে ধাক্কা কাটিয়ে, চোট সারিয়ে দারুণ ছন্দেও ফিরেছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। এখন আগামী মৌসুমের শুরুতে আবার তাঁকে পেতে বার্সা ঝাঁপাবে বলে গুঞ্জন।

বার্সার জন্য নেইমারকে ফেরানো সবদিক বিচারেই হয়তো মাঠে-মাঠের বাইরে ঝামেলায় কাঁটাতারে জড়িয়ে পড়া ক্লাবটির জন্য আদর্শ সমাধান। মেসি-সুয়ারেজদের বন্ধু নেইমার। আর তাঁর মতো একজনকে মাঠে পাওয়া তো বিশ্বের যেকোনো দলেরই স্বপ্ন। আর নেইমারের মতো একজনকে ফেরালে ক্লাবের সমর্থকদের চোখে অনেক নিচে নেমে যাওয়া বার্সা বোর্ডের সম্মানও কিছুটা পুনরুদ্ধার হবে। পিএসজিতে যাওয়ার সিদ্ধান্তটা ভুল ছিল বুঝতে পেরে নেইমার নিজেও ফিরতে উন্মুখ।

পিএসজির জন্যও ২১ বছর বয়সী এমবাপ্পেকে ছেড়ে দেওয়ার তুলনায় ২৮ বছর বয়সী ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ডকে ছাড়া সহজ। লাভজনকও। কিন্তু ওদিকে রিয়াল মাদ্রিদ যে এমবাপ্পের প্রতি আগ্রহের ব্যাপারটা সুযোগ পেলেই খোলাখুলিই জানায়, এমবাপ্পের রিয়ালের প্রতি ভালোবাসাও গোপন রাখেননি।

এমন অবস্থায় এমবাপ্পেকে ক্লাবে রাখাকেই অগ্রাধিকার দিচ্ছে পিএসজি। হ্যাঁ, দুজনের কারও চুক্তিতে রিলিজ ক্লজ (পিএসজির আগ্রহের বাইরে এমবাপ্পে বা নেইমারকে কিনতে গেলে আগ্রহী ক্লাবকে যে অর্থ দিতেই হবে) নেই। দুজনের চুক্তি আরও দুই বছর আছে, এই দুই বছরে পিএসজি না চাইলে তাঁদের কেউ কিনতে পারবে না। কিন্তু ফুটবলে দলবদল তো আর এত জোলো হিসাবে চলে না! অর্থের লড়াইয়ে পিএসজি পিছিয়ে না থাকলেও রিয়াল-বার্সার আগ্রহের সামনে প্যারিসের ক্লাবটা একটু চাপেই আছে।

সে ক্ষেত্রে করণীয় কী ঠিক করেছে পিএসজি? নেইমারের চুক্তি নবায়নের জন্য অত বেশি জোর আর দিচ্ছে না, বরং এমবাপ্পেকে চুক্তি নবায়নে ‘লোভ দেখাতে’ উঠেপড়ে লেগেছে। কী লোভ? মার্কা জানাচ্ছে, ২১ বছর বয়সী বিশ্বকাপজয়ী ফরাসি স্ট্রাইকারকে ক্লাবের ইতিহাসেরই সবচেয়ে বেশি বেতনভোগী ফুটবলার বানানোর পরিকল্পনা পিএসজির, অর্থাৎ নেইমারের চেয়েও বেশি বেতন হবে এমবাপ্পের। কিন্তু শুধু অর্থ দিয়ে তো একদিন ব্যালন ডি’অর জয়ের স্বপ্ন দেখা এমবাপ্পেকে খুশি রাখা যাবে না, পিএসজি তাই নেইমারকে ছাপিয়ে এমবাপ্পেকেই ক্লাবের মূল খেলোয়াড় বানানোর প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। পাশাপাশি পারফরম্যান্সভিত্তিক আরও অনেক বোনাসের শর্তও থাকবে, যেটি এমবাপ্পের চেয়েও মূলত তাঁর বাবা-মাকে আগ্রহী করার উদ্দেশে।

দেখা যাক, এসবে কাজ হয় কি না!