তিনি ছিলেন বাংলাদেশের 'নাদিয়া কোমানিচি'

>আজ বিশ্ব নারী দিবস। এ দিনে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে মেয়েদের পথচলার প্রাথমিক দিনগুলোর এক সাহসী সৈনিকই ছিলেন জিমন্যাস্টস ও জুডো খেলোয়াড় খুরশিদা আক্তার
সত্তরের দশকে জিমন্যাস্টিকস, জুডো দিয়ে দেশ মাতিয়েছিলেন খুরশিদা আক্তার। ফাইল ছবি, প্রথম আলো
সত্তরের দশকে জিমন্যাস্টিকস, জুডো দিয়ে দেশ মাতিয়েছিলেন খুরশিদা আক্তার। ফাইল ছবি, প্রথম আলো

সত্তরের দশকে সারা দুনিয়ার খেলা কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন এক রোমানিয়ান নারী—নাদিয়া কোমানিচি। ১৯৭৬ সালে মন্ট্রিয়েল অলিম্পিকের জিমন্যাস্টিকসে এই কোমিনিটি তিনটি সোনার পদকসহ ‘পারফেক্ট টেন’ স্কোর করে সবাইকে অবাক করে দিয়েছিলেন তিনি। ঠিক এই সময় বাংলাদেশ মাতাচ্ছিলেন এক নারী জিমন্যাস্ট—খুরশিদা আক্তার। এ প্রজন্মের কাছে তিনি হয়তো খানিকটা অপরিচিতই। কিন্তু এই খুরশিদা জিমন্যাস্টিকস ছাড়াও দেশব্যাপী সারা ফেলেছিলেন ১৯৭৭ সালে ক্রীড়া সাময়িকী ক্রীড়াজগতের প্রথম সংখ্যার প্রচ্ছদে এসে।

খুরশিদা কেবল জিমন্যাস্টসই ছিলেন না, ছিলেন একজন সফল জুডো খেলায়াড়ও। ১৯৭৯ থেকে ১৯৮৮ পর্যন্ত তিনি তিনবার জাতীয় চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন। জাতীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টও জিতেছেন আরও তিনবার। মজার ব্যাপার হচ্ছে ২০০৪ সালে জিমন্যাস্টস নয়, একজন জুডো খেলোয়াড় হিসেবেই তিনি জিতেছিলেন জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার।

তিনি খেলার জগতে এসেছিলেন অনেকটা হঠাৎ করেই। ছোটবেলায় একেবারেই খেলাধুলা পছন্দ করতেন না। খুব নিভৃতচারী ছিলেন তিনি। মাঠে গিয়ে দৌড়াতে হবে কেন—তাঁর মনে এ প্রশ্নই আসত। কিন্তু কীভাবে যেন তিনি মিশে গেলেন খেলার জগতের সঙ্গে। বড় ভাই সালাউদ্দিন আহমেদ এ জন্য ‘দায়ী’। তাঁর ছিল দারুণ উৎসাহ। অনেকটা জোর করেই তিনি বোনকে নিয়ে যান অ্যাথলেটিকস কোচ রাজিয়া সুলতানার কাছে। সে সময় জিমন্যাস্টিকসে ছেলেদের জাতীয় চ্যাম্পিয়ন মীর রবিউজ্জামানের সঙ্গে পরিচয় খুরশিদার। পরিচয় থেকে প্রণয়। এরপরই জিমন্যাস্টস হয়ে ওঠা।

ক্রীড়াজগতে প্রচ্ছদকন্যা হওয়ার সেই অভিজ্ঞতা প্রথম আলোর কাছে বলেছেন, ‘সে সময় পরিবেশ-পরিস্থিতি অনেকটাই উদার ছিল। তিনি বলেছিলেন জিমন্যাস্টিকসের পোশাক পরে ছবি তুললেও তাঁকে সে সময় কোনো সামাজিক বাধা বা সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়নি। প্রথম দিকে আমার মধ্যেও একটু সংশয় ছিল। সবাই কীভাবে নেবে। তবে আমার স্বামী রবিউজ্জামান সাহেবের উৎসাহেই আমি ছবিটা তুলি।’

খুরশিদা ঢাকারই মেয়ে। এ শহরেই তাঁর বেড়ে ওঠা। তবে বাবার চাকরির সুবাদে তাঁর জন্ম কিন্তু চট্টগ্রামে। পারিবারিক আবহ ছিল বেশ উদার। তাঁর খেলাধুলা নিয়ে কখনোই কেউ কিছু বলেনি। খেলার পাশাপাশি পড়াশোনা-সংসার সবই চালিয়ে গেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজ বিজ্ঞানে মাস্টার্স করেছেন।

এক মেয়ের জননী তিনি। মেয়ে ফারাহ নাজ জামানও মাকে গর্বিত করেছেন। একটি বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানের বড় কর্তা তিনি। তবে খুরশিদার শরীরটা ইদানীং বেশ খারাপই যাচ্ছে। বছর কয়েক আগে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিলেন। প্রচণ্ড আঘাত পেয়েছিলেন মাথায়। তখন থেকেই দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ। চলাফেরায় বেশ অসুবিধা। তবে সংসারে সুখের অভাব নেই । স্বামী, মেয়ে, মেয়ের জামাই সবাইকে নিয়ে পরিপূর্ণ একজন নারী তিনি।

নারী দিবসে বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে নারীর পথচলার এই পুরোধাকে শুভেচ্ছা।