দর্শকহীন মাঠে রোনালদো-দিবালাদের বাজিমাত

গোল করার পর দিবালার উল্লাস। ছবি : এএফপি
গোল করার পর দিবালার উল্লাস। ছবি : এএফপি
>

লিগের শুরুতে মনে হয়েছিল এবার হয়তো আসলেই জুভেন্টাস লিগ শিরোপা হারাবে, ইন্টারের কাছে। কিন্তু টানা আটবার লিগ চ্যাম্পিয়ন তো এমনি এমনি হয়নি জুভরা। লিগে এই নিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো ইন্টারকে হারিয়ে তারা দেখিয়ে দিল, চ্যাম্পিয়নদের স্নায়ু আসলে অন্য ধাতেই গড়া থাকে

সকাল অনেক সময়েই দিনের পূর্বাভাস দেয় না। এবারের সিরি ‘আ’র জন্য কথাটা আরও বেশি প্রযোজ্য।

মৌসুম যখন শুরু হলো, ইন্টার-জুভেন্টাস দুই দলের অবস্থা ছিল দুই রকম। নতুন কোচ আন্তোনিও কন্তেকে এনে ইন্টার মিলান লিগ জেতার স্বপ্নে বিভোর। কন্তের সঙ্গে দলে এলেন রোমেলু লুকাকু, অ্যালেক্সিস সানচেজ, নিকোলো বারেলা, স্টেফানো সেনসি, দিয়েগো গডিনের মতো তারকারা। ওদিকে জুভেন্টাসের অবস্থা তথৈবচ। নতুন কোচ এসেছে তাদেরও। কিন্তু ট্রফি জয়ের সামর্থ্যের হিসাবে কি কন্তের সঙ্গে মরিজিও সারির তুলনা চলে?

শুরুর লিগ ম্যাচগুলোতেও সেটাও প্রতিফলন দেখা গেল। ইন্টার ম্যাচ জিততে লাগল দাপটের সঙ্গে। জুভেন্টাসও জিতেছে, তবে ইন্টারের ফর্মের কাছে শেষমেশ জুভেন্টাস পাত্তা পাবে না, এমনটাই মনে হচ্ছিল।

কিন্তু চ্যাম্পিয়নদের ধাতই যে অন্য রকম! টানা আটবার লিগ জিতে জিতে প্রক্রিয়াটা একদম মুখস্থ হয়ে গেছে হয়তো তুরিনের বুড়িদের কাছে। ফলে লিগে ইন্টার যতই প্রতাপ দেখাক না কেন, ঠিকই জুভেন্টাসের কাছে হেরে বসল লিগে। একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে গত রাতে। রোনালদো-দিবালারা ২-০ গোলে ইন্টারকে লিগে দ্বিতীয়বারের মতো হারিয়ে দেখিয়ে দিলেন, সঠিক সময়ে ফর্মে না থাকলে আগে পরে ম্যাচ জিতে আসলেও কোনো লাভ নেই।

করোনাভাইরাস আতঙ্কে গত রাতে দর্শকহীন মাঠে খেলেছেন রোনালদোরা। ম্যাচের আগে রোনালদোর একটা ভিডিও ভাইরাল হলো। বাস থেকে নেমে ‘কাল্পনিক’ সমর্থকদের সঙ্গে হাত মেলানোর ‘নাটক’ করলেন এই পর্তুগিজ তারকা! বোঝাই যাচ্ছিল, বেশ ফুরফুরে মেজাজে আছেন তিনি। ম্যাচ শেষেও ফুরফুরে মেজাজেই থাকার কথা তাঁর!

ম্যাচ হেরে ইন্টারের শিরোপা জেতার আশা একদম শেষ হয়েই গেল বলা যায়। আর এই শেষ করে দেওয়ার পেছনে কাজ করেছে মরিজিও সারির ক্ষুরধার মস্তিষ্ক।

সারির দল সুন্দর ফুটবল খেলে, এমন একটা সুনাম থাকলেও এই মৌসুমে জুভেন্টাসের খেলা দেখে সেটা মনে হচ্ছিল না। মহাগুরুত্বপূর্ণ এই ম্যাচে প্রতিপক্ষকে চমকে দেওয়ার মতো এক কাজ করলেন সারি। বসনিয়ার মিডফিল্ডার মিরালেম পিয়ানিচকে ছাড়া যে জুভেন্টাসের মিডফিল্ড এক সময়ে কল্পনাও করা যেন না, সে পিয়ানিচকেই গতকাল বেঞ্চে বসিয়ে রেখেছিলেন জুভেন্টাস কোচ। পরিবর্তে নামিয়েছিলেন এই মৌসুমেই ফ্রিতে আর্সেনাল থেকে দলে আসা তারকা অ্যারন র‍্যামসিকে। ব্যস, টোটকাটা ভালোভাবে কাজে লেগে গেল। গোটা মৌসুমের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর ফুটবল জুভেন্টাস গত রাতেই খেলল। যার জবাব জানা ছিল না ইন্টার কোচ আন্তোনিও কন্তের কাছে।

প্রথমার্ধ গোলশূন্য থাকার পর সেই র‍্যামসিই ৫৫ মিনিটে এগিয়ে দিলেন জুভেন্টাসকে। ব্লেইজ মাতুইদির কাছ থেকে বল পেয়ে ডান পায়ের জোরালো শটে গোল করে জানিয়ে দিলেন, জুভেন্টাসের মূল একাদশে খেলার যোগ্যতা তাঁর যথেষ্টই আছে। এমনকি বিকল্প হিসেবে নেমে দিবালাও ঝলক দেখিয়েছেন। গোল করে জয় নিশ্চিত করেছেন দলের।

প্রাপ্তির এ রাতে জুভেন্টাসের একমাত্র অপ্রাপ্তি রোনালদোর গোল না পাওয়া। দিবালাকে দিয়ে গোল করানো এই তারকা নিজেও বেশ কয়েকটা সুযোগ পেয়েছিলেন গোল করার। পারেননি। পারলে সিরি ‘আ’তে প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে টানা ১২ ম্যাচে গোল করতে পারতেন।

ইন্টার মিলানকে হারিয়ে সিরি ‘আ’র পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠেছে জুভেন্টাস। দুইয়ে থাকা লাৎসিওর (৬২) চেয়ে এক পয়েন্টে এগিয়ে আছেন রোনালদোরা (৬৩)। আর এক ম্যাচ কম খেলে ইন্টার মিলান জুভেন্টাসের চেয়ে পিছিয়ে গেছে ১১ পয়েন্টে। শিরোপা জিততে তাই ভাগ্যের ছোঁয়া দরকার ইন্টারের।