যেভাবে বার্সেলোনায় যেতে পারেন নেইমার

নেইমার শত চেষ্টাতেও বের হতে পারেননি পিএসজি থেকে, যেতে পারেননি প্রিয় বন্ধু মেসির বার্সেলোনায়
নেইমার শত চেষ্টাতেও বের হতে পারেননি পিএসজি থেকে, যেতে পারেননি প্রিয় বন্ধু মেসির বার্সেলোনায়

মৌসুম শেষ হতে এখনো বেশ বাকি। কিন্তু দলবদলের গুঞ্জন চলতে তাতে কোনো সমস্যা হচ্ছে না। গত মৌসুমে পিএসজি থেকে শত চেষ্টাতেও বের হতে পারেননি নেইমার, যেতে পারেননি প্রিয় বন্ধু মেসির বার্সেলোনায়। এর পর বার্সেলোনার কাছে বকেয়া বেতন চেয়ে মামলাও করেছেন। কিন্তু তারপরও বার্সেলোনাতেই ফেরা চেষ্টা চালাচ্ছেন ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। এমন ঘোলাটে সম্পর্কের মধ্যে ‘কাবাবের হাড্ডি’ হয়ে বসে আছে পিএসজি। গত দলবদলে কোনোভাবেই নেইমারকে ছাড়েনি। পরের মৌসুমেও ছাড়তে না চাওয়ারই কথা তাদের। তাহলে কী করবেন নেইমার?

এ অবস্থায় উদ্ধার পাওয়ার উপায় একটিই, ‘ওয়েবস্টার রুলিং।’ ২০০৬ সালে স্কটিশ ডিফেন্ডার অ্যান্ড্রু ওয়েবস্টার ফিফার এক নিয়মের ছিদ্র খুঁজে নিয়ে তাঁর ক্লাব হার্ট অব মিডলোথিয়ানের সঙ্গে চুক্তি বাতিল করেছিলেন। চুক্তির এক বছর বাকি থাকা অবস্থায়ও যোগ দিয়েছিলেন ইংলিশ ক্লাব উইগান অ্যাথলেটিকে। ফিফার আর্টিকেল ১৭তে লেখা ছিল যদি কোনো ফুটবলার ২৮ বছর বয়সের আগে চুক্তি করেন এবং তিন বছরের মধ্যে চুক্তি নবায়ন না করেন তবে চুক্তি স্বাক্ষরের তিন বছরের পর সে চুক্তি থেকে সরে আসা যায়। বয়স যদি ২৮ এর বেশি হয় তবে সময়টা কমে দুই বছর হয়ে যায়।

বার্সেলোনা থেকে ২০১৭ সালে ২২২ মিলিয়ন ইউরোতে পিএসজিতে আসা নেইমারের তিন বছর শেষ হবে এবারের জুলাইয়ে। এর পর তিনিও চাইলে ওয়েবস্টারের মতো পিএসজির সঙ্গে চুক্তি ভঙ্গ করে চলে যেতে পারবেন। তবে এতে বেশ কিছু কিন্তু আছে।

ওয়েবস্টারের ক্ষেত্রেই যেমন ওভাবে ক্লাব ছাড়া ভালোভাবে নিতে পারেনি সাবেক ক্লাব হার্ট। এবং ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ লাখ ইউরো চেয়েছিল তাঁর কাছ থেকে। ২০০৭ সালে ফিফার বিরোধ নিষ্পত্তি বিভাগ ওয়েবস্টারের ভবিষ্যৎ বেতন, তাঁর সম্ভাব্য আয়ের সম্ভাবনা ও আইনি খরচ হিসেব করে ৬ লাখ ২৫ হাজার ইউরোর শাস্তি দিয়েছিল। ওয়েবস্টার সময়মতো ক্লাবকে জানাননি বলেই শাস্তিটা বেশি দেওয়া হয়েছিল। হার্টস ওতে সন্তুষ্ট না হয়ে সর্বোচ্চ ক্রীড়া আদালতে যায়। কিন্তু সর্বোচ্চ ক্রীড়া আদালত উল্টো ওয়েবস্টারের জরিমানা দেড় লাখে কমিয়ে আনে। এর পর থেকেই এমন দলবদলকে ওয়েবস্টার রুলিং বলা হয়।

এভাবে রিয়াল মায়োর্কা থেকে নিউক্যাসল ইউনাইটেডে যোগ দিয়েছিলেন হোনাস গুতিরেজ। তবে ব্রাজিলিয়ান মিডফিল্ডার মাতুজালেমের দলবদলের ঘটনাই নেইমারের ক্ষেত্রে ঘটার সম্ভাবনা বেশি। এই মিডফিল্ডার শাখতার দোনেস্ক থেকে চলে এসেছিলেন রিয়াল জারাগোজায়। কিন্তু ইউক্রেনের ক্লাব দাবি করেছিল, তাদের ক্ষতিপূরণ হিসেবে খেলোয়াড়ের পুরো রিলিজ ক্লজ অর্থাৎ ২৫ মিলিয়ন ইউরোই দিতে হবে। কারণ, চুক্তির সময় খেলোয়াড় বলেছিল অন্য কোনো ক্লাব তাঁকে নিতে চাইলে এই অঙ্ক দিয়েই নিতে হবে।

ফিফা অবশ্য মাতুজালেমের বেতন হিসেব করে মাত্র ৬.৮ মিলিয়ন বা ৬৮ লাখ ইউরো জরিমানা করেছিল। শাখতার তা মেনে সর্বোচ্চ ক্রীড়া আদালতে যায় এবং, সেখানে ক্ষতিপূরণটা বেড়ে দাঁড়ায় ১ কোটি সাড়ে ১৮ লাখে। সে সঙ্গে বাৎসরিক ৫ শতাংশ সুদও দিতে হয়েছে জারাগোজাকে। এর পেছনে তারা কারণ দেখিয়েছিল, ক্ষতিপূরণ হিসেবের সময় তারা আরও অনেক কিছু হিসেবে করেছে। মাতুজালেমের মতো খেলোয়াড় হারানোর প্রভাব, শাখতারের যে বেতন বেঁচে গিয়েছে এবং খেলোয়াড়ের অবস্থান ও আচরণ—সবকিছুই বিবেচনা করা হয়েছে।

মৌসুমে ক্লাবের শেষ ম্যাচের ১৫ দিনের মধ্যে ক্লাব ছাড়ার ইচ্ছের কথা জানাতে পারলেই নেইমার পিএসজি ছেড়ে যেতে পারবেন আগামী মৌসুমে। কিন্তু নেইমারের ক্ষেত্রেও তাই সবকিছুই হিসেব করা হবে। সরল হিসেবে চুক্তির শেষ দুই বছরের মূল্য ৭৩.৬ মিলিয়ন ইউরো দিলেই চলবে না। তাঁর মতো বড় তারকা হারানোর প্রভাব, তাঁর বর্তমান ও অতীত বেতন, খেলোয়াড়ের ক্লাবের প্রতি আচরণ, ফিফা সবকিছুই বিবেচনা করবে। ফলে তাঁর নতুন ক্লাবকে ভবিষ্যতে আচমকা বড় কোনো অঙ্কের দলবদলের ফি দেওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।