'বেকুব' রোনালদিনহোর যেমন কাটছে জেলে

প্যারাগুয়ের আসুনসিওন কারাগারে কেমন আছেন রোনালদিনহো?
জেলের মধ্যে রোনালদিনহো। মুখে হাসি লেগেই আছে। ছবি: টুইটার
জেলের মধ্যে রোনালদিনহো। মুখে হাসি লেগেই আছে। ছবি: টুইটার

কোথাকার জল কোথায় গড়ায়! এক সময় ছিলেন বিশ্বসেরা ফুটবলার। এখন ভাইয়ের সঙ্গে দিন কাটছে জেলে, জাল পাসপোর্ট বহনের দায়ে। বন্দিজীবন কাটছে প্যারাগুয়ের আসুনসিওন কারাগারে। তাদের আইনজীবী সার্জিও কুইরোজ গৃহবন্দী রাখার আপিল করেছিলেন। খারিজ করে দিয়েছে আদালত। তবে আসুনসিওন কারাগারের কমিশনার ব্লাস ভেরা জানিয়েছেন, কারাগার-জীবনের সঙ্গে দ্রুতই মানিয়ে নিচ্ছেন রোনালদিনহো। এদিকে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘এক্সট্রা’ জানিয়েছে, ২০০৫ ফিফা ব্যালন ডি’অর জয়ী তারকাকে দর্শক হিসেবে দেখা যেতে পারে কারাগারের ফুটসাল টুর্নামেন্টে।

সোমবার ইনডোর এই ফুটবল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হবে। রোনালদো সেখানে দর্শক হিসেবে থাকবেন বলে জানিয়েছে ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যম। ব্লাস ভেরার ভাষায়, ‘রোনালদিনহো খেলবেন সে আশা করছি না আমরা। তবে সে দর্শক হিসেব থাকলে ভালোই হবে।’ প্রতি ছয় মাস অন্তর এ কারাগারে ফুটসাল টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়। রোনালদিনহো গ্রেপ্তার হওয়ার আগেই এ টুর্নামেন্টের দিনক্ষণ ঠিক করা ছিল। ১০ দলে ভাগ হয়ে খেলবেন মোট ১৯৪জন বন্দী। পুলিশ কিংবা প্রহরীদের কেউ এ টুর্নামেন্টে খেলেন না।

রোনালদিনহোকে কারাগারের ‘কোয়াড্রিলেটারাল’ বিভাগে রাখা হয়েছে। এটি সাধারণ কয়েদিদের সেল নয়। সেখানে ভাই রবার্তো ডি আসিস মোরেইরার সঙ্গে একটি কক্ষে আছেন রোনালদিনহো। সাজা পাওয়া পুলিশ কর্মকর্তা, ড্রাগ চোরাকারবারি, রাজনীতিবিদ এবং অন্যান্য ‘ভিআইপি’ অপরাধীরা এ বিভাগে আছেন। রোনালদিনহো যেমন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছেন অর্থ পাচারের দায়ে সাজা পাওয়া প্যারাগুয়ে ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক প্রধান র‌্যামন গঞ্জালেস দাহের। সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, রাতে দর্শনপ্রার্থীদের সঙ্গে দেখা করতে পারছেন রোনালদিনহো। ফাস্ট ফুড চেইন শপ থেকে নাকি খাবারও আনিয়েছেন। ‘সেলিব্রেটি বন্দী’ বলে কথা!

তবে রোনালদিনহোর আরেক আইনজীবী অ্যাডলফো মারিনের দাবি, পাসপোর্টের কাগজপত্র যে জাল সেটি জানতেন না তাঁর মক্কেল। বার্সেলোনা ও এসি মিলানের সাবেক এ মিডফিল্ডারকে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত জেলে থাকতে হবে। প্যারাগুয়ের আইন অনুযায়ী ছয় মাস ধরে তদন্তকাজ চালানো যায়। মারিন অবশ্য তাঁর মক্কেলের পক্ষসমর্থন করে বকেই দিয়েছেন, ‘রোনালদিনহো কোনো অপরাধ করেনি, কারণ সে বুঝতে পারেনি কাগজপত্র জাল। আদালত এসব বিবেচনায় নেয়নি। সে একজন বেকুব।’

রোনালদিনহোর কারাগারের জীবন নিয়ে সংবাদ সংস্থা রয়টার্সকে টেলিফোনে ভেরা বলেন, ‘মোটা দাগে দেখলে সে ভালোই আছে। ফুরফুরে মেজাজে আছে, সব সময় যেমন দেখা যায় টেলিভিশনে। মুখে হাসি লেগেই থাকে।’ ভেরা আরও জানান ৩৯ বছর বয়সী রোনালদিনহো এবং তাঁর ভাইয়ের কক্ষে বিছানা, টেলিভিশন, ফ্যান আছে। তবে শৌচাগার আলাদা নয়। অন্যান্য আসামিদের সঙ্গে ভাগ করতে হচ্ছে সাধারণ শৌচাগার। কক্ষের বহিঃপ্রাঙ্গনে যাওয়ার অনুমতিও পেয়েছেন রোনালদিনহো। কারাগারের সরবরাহ করা খাবার তাঁরা খাননি। বাইরে থেকে খাবার এনে দিচ্ছেন তাদের আইনজীবী। ব্রাজিলের পর্যটন দূতের দায়িত্ব পাওয়া রোনালদিনহো এক ক্যাসিনো মালিকের আমন্ত্রণে প্যারাগুয়ে গিয়ে জাল পাসপোর্ট বহনের দায়ে বুধবার গ্রেপ্তার হন।

আসুনসিওনে জাতীয় পুলিশ সদর দপ্তর। এখানকার কারাগারেই দিন কাটছে রোনালদিনহোর। ছবি: এএফপি
আসুনসিওনে জাতীয় পুলিশ সদর দপ্তর। এখানকার কারাগারেই দিন কাটছে রোনালদিনহোর। ছবি: এএফপি

এদিকে অস্ট্রেলিয়ার সংবাদমাধ্যম ‘সিডনি মর্নিং হেরাল্ড’ জানিয়েছে, সিডনিতে আগামী মে মাসে দাবানলে দুর্গতদের সাহায্যে দাতব্য ম্যাচ খেলার কথা ছিল রোনালদিনহোর। কিন্তু গ্রেপ্তার হয়ে জেল খাটায় ম্যাচে তাঁর না খেলার সম্ভাবনাই বেশি। দুই বছর আগে ফুটবল ছাড়ার পর থেকেই জীবনটা ভালো যাচ্ছে না রোনালদিনহোর। ক্যারিয়ারের শেষ দিকে এসে ঝামেলায় জড়িয়েছেন বেশি।

ব্রাজিলে পোর্তো অ্যালেগ্রেতে পরিবেশ বিপর্যয় করে মাছ মারার ‘ডক’ বানানোয় ২০১৫ সালে তাঁকে ২০ লাখ ডলার জরিমানা করেছিল আদালত। কেড়ে নিয়েছিল পাসপোর্ট। এরপরও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট তখন পর্যটন দূত বানিয়েছিলেন রোনালদিনহোকে। পরে জরিমানা দিয়ে ফিরে পেয়েছিলেন পাসপোর্ট। এ ছাড়াও ডিজিটাল মুদ্রা (ক্রিপ্টোকারেন্সি) জালিয়াতির অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। এক ভুক্তভোগী তাঁর কাছে ক্ষতিপূরণ বাবদ ৬ কোটি ৫০ লাখ ডলার দাবি করেছিলেন, জানিয়েছিল সংবাদমাধ্যম। গত জুলাইয়ে ব্রাজিলের সংবাদমাধ্যম ‘ফোলহা ডি সাও পাওলো’ জানিয়েছিল, বেশ ভালো ঋণে পড়েছেন রোনালদিনহো। পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ ডলার। এ ছাড়াও তাঁর চারটি ভূ-সম্পত্তি নিলামে তুলেছে রিও গ্রান্দে আদালত। জব্দ করা হয়েছিল ৫৭টি পাসপোর্টও।