ক্লপের 'ইচ্ছাপূরণ' ও দুই গোলরক্ষকের গল্প

ভুল পাসের খেসারত গুনে গোল হজম করতে হয় আদ্রিয়ানকে। ছবি: এএফপি
ভুল পাসের খেসারত গুনে গোল হজম করতে হয় আদ্রিয়ানকে। ছবি: এএফপি
>চ্যাম্পিয়নস লিগ শেষ আট ফিরতি লেগে কাল লিভারপুলকে ৩-২ গোলে হারিয়েছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। দুই লেগ মিলিয়ে ৪-২ গোলের জয়ে শেষ আটে উঠল স্প্যানিশ ক্লাবটি

শেষ বাঁশি বাজার পর কথা খুঁজে পাচ্ছিলেন না ইয়ুর্গেন ক্লপ। তা স্বীকারও করলেন, ‘ঠিক কী বলা উচিত বুঝতে পারছি না। রাতটা স্বাভাবিক না লাগলেও এটা মেনে নিতে হবে। এই অবিশ্বাস্য চ্যাম্পিয়নস লিগের জন্য সবাইকে ধন্যবাদ।’

অবিশ্বাস্য? সে তো বটেই। চ্যাম্পিয়নস লিগে একেকটি মৌসুম তো অবিশ্বাস্য সব ঘটনারই খেরোখাতা। অ্যানফিল্ডে কাল চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে লিভারপুলের বিদায়ও অবিশ্বাস্য লাগতে পারে অনেকের কাছে। তবে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদকে প্রাপ্য কৃতিত্বটুকু দিতেই হবে। ডিয়েগো সিমিওনের সঙ্গে তাঁর শিষ্যদের শেষ পর্যন্ত লড়ে যাওয়ার মানসিকতাই অ্যাটলেটিকোকে তুলেছে কোয়ার্টার ফাইনালে। ৯৭ মিনিট থেকে ১২১ মিনিটের মধ্যে তিন গোল, তাও লিভারপুলেরই আঙিনায়—ভাবা যায়!

ঘরের মাঠে প্রথম লেগ ১-০ গোলে জিতেছিল স্প্যানিশ ক্লাবটি। ফিরতি লেগে ভাইনালডামের গোলে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত দুই লেগ মিলিয়ে ১-১ গোলে সমতায় ছিল লিভারপুল। অতিরিক্ত সময়ে শুরুতে রবার্তো ফিরমিনো গোল করলে হর্ষধ্বনি উঠেছিল অ্যানফিল্ডে। কোয়ার্টার ফাইনাল তখন হাতছোঁয়া দূরত্বে। কিন্তু এরপরই ভোজবাজির মতো পাল্টে গেল দৃশ্যপট। রিয়াল মাদ্রিদ বয়সভিত্তিক দল থেকে উঠে আসা মার্কোস ইয়োরন্তে ও আলভারো মোরাতার ‘যৌথ প্রযোজনা’য় শিরোপাধারিদের বিদায় নিশ্চিত হয়। ক্লপের মনে তখন কী খেলা করেছে, ইচ্ছাপূরণ?

ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগকে মোক্ষধাম করে ঘরোয়া কাপ টুর্নামেন্ট পাত্তা দেননি জার্মান এ কোচ। এফএ কাপ থেকে বিদায় নেওয়ার পর তা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। এমনকি চ্যাম্পিয়নস লিগও ক্লপের কাছে লিগের চেয়ে বেশি প্রাধান্য পায়নি। মাশুলটা তাই দিতেই হলো। এ হিসেবে চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে লিভারপুলের বিদায় তো ক্লপের একরকম ইচ্ছাপূরণই! তবে কাল রাতে লিভারপুল কোচের ‘ইচ্ছাপূরণ’ কিন্তু এক অর্থে দুই গোলরক্ষকের গল্প।

অ্যাটলেটিকো কাল রাতে শেষ আটের দেখা পেয়েছে তাদের গোলরক্ষকের জন্য। লিভারপুল পারেনি, সেটিও তাদের গোলরক্ষকের জন্য। আরেকটু গভীরে তাকালে বোঝা যায় সমস্যাটা আসলে চোট।

লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। ছবি: এএফপি
লিভারপুল কোচ ইয়ুর্গেন ক্লপ। ছবি: এএফপি

স্প্যানিশ ক্লাবটির গোলরক্ষক জাঁ ওবলাক দ্বিতীয়ার্ধে দেখিয়েছেন তিনি কেন বিশ্বের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক। লিভারপুলের একের পর এক আক্রমণ নস্যাৎ করেছেন নিজ হাতে। সেভ করেছেন মোট ৯টি। অসংখ্য ক্রস ঠেকানো তো আছেই। অন্য দিকে লিভারপুলের শেষ আটে ওঠার চেষ্টা ফল পায়নি তাদের গোলরক্ষক আদ্রিয়ানের ভুলে। কোমরে চোট পাওয়ায় নিয়মিত গোলরক্ষক আলিসন বেকারকে পায়নি লিভারপুল। তাঁর জায়গায় তিন কাঠির নিচের দাঁড়ানো আদ্রিয়ান ইয়োরেন্তের গোলটির জন্য দায়ী।

স্প্যানিশ গোলরক্ষকের বাজে ‘ক্লিয়ারেন্স’ থেকে বল পেয়ে যান হোয়াও ফেলিক্স। ‘ক্লিয়ার’ করতে গিয়ে ভুল পাস দিয়েছিলেন আদ্রিয়ান। ভয়ংকর জায়গায় বল পেয়েই ইয়োরন্তেকে পাস বাড়ান ফেলিক্স। গোল করতে স্প্যানিশ মিডফিল্ডারের কোনো সমস্যাই হয়নি। অ্যাটলেটিকো মহামূল্যবান এই ‘অ্যাওয়ে গোল’টি পাওয়ার আগে শেষ আটের দরজা কিন্তু খোলাই ছিল লিভারপুলের জন্য। কিন্তু ভুলের মাশুল হিসেবে ওই গোলটি হজমের পর পাল্টে যায় ম্যাচের গতিপথ।

ইয়োরন্তের করা পরের গোলটিতেও আরেকটু ভালো পারফর্ম করতে পারতেন আদ্রিয়ান। বক্সের বাইরে বেশ দূর থেকেই শট নিয়েছিলেন ইয়োরন্তে। বাম প্রান্তে ঝাঁপিয়ে পড়ার ‘রিফ্লেক্স’টা আরও ভালো হতে পারত আদ্রিয়ানের। মোরাতার শেষ গোলেও পোস্টের ডান প্রান্তে বেশি ফাঁকা জায়গা খেয়াল করেননি আদ্রিয়ান। তবে ক্লপ তাঁর গোলরক্ষককে এতটুকু দুষছেন না, ‘এক সেকেন্ডের জন্যও তাকে দোষ দেব না। সে এটা করতে চায়নি। অনেক ম্যাচেই সে আমাদের বাঁচিয়েছে।’

অন্যদিকে ওবলাক?

ফিরমিনো, মোহাম্মেদ সালাহ, ট্রেন্ট অ্যালেকজ্যান্ডার-আর্নল্ড, অ্যালেক্স অক্সালেড-চেম্বারলিনকে বলতে গেলে একাই রুখে দিয়েছেন ওবলাক। ম্যাচের কিছু মুহূর্তে মনে হয়েছে, লিভারপুল ও গোলের মাঝে দেয়াল শুধু এই স্লোভেনিয়ান গোলরক্ষকই। ম্যাচ শেষে সিমিওনেকে তাই বলতে হয়েছে, ‘সে ম্যাচটা বাঁচিয়েছে।’

ওদিকে ক্লপের জন্য রইল শুধু প্রিমিয়ার লিগ। বেশ বড় ব্যবধানে টেবিলের শীর্ষ থাকায় লিগ শিরোপাটা হয়তো পেয়েই যাবেন ক্লপ। কিন্তু ইউরোপসেরার মুকুট হারানোর ব্যথা ভুলে থাকাও কিন্তু এত সহজ না!