নিউজিল্যান্ডে নাজেহাল সেই ভারতই 'বিদেশের মাটিতে সেরা'

নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদির সঙ্গে আলাপে মগ্ন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। নিউজিল্যান্ড সফরটা হতাশায়ই কেটেছে কোহলি ও ভারতের। ছবি: রয়টার্স
নিউজিল্যান্ডের টিম সাউদির সঙ্গে আলাপে মগ্ন ভারত অধিনায়ক বিরাট কোহলি। নিউজিল্যান্ড সফরটা হতাশায়ই কেটেছে কোহলি ও ভারতের। ছবি: রয়টার্স
>নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ওয়ানডেতে ৩-০ ব্যবধানে ধবলধোলাই হওয়ার পর টেস্টেও ২-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ হয়েছে ভারত। কিন্তু সেটিকে ‘স্বাভাবিক নয়’ জানিয়ে বিরাট কোহলির দলকেই টেস্টে বিদেশের মাটিতে সেরা বলছেন ব্রায়ান লারা।

প্রথম টেস্টে ১০ উইকেটে হার। পরের টেস্টে ৭ উইকেটে। প্রথম টেস্ট তবু চার দিনে গেছে, দ্বিতীয় টেস্ট তিন দিনেই শেষ। দুই টেস্টের চার ইনিংসে দলের রান একবারও ২৫০ পেরোয়নি, ২০০-ই পেরিয়েছে একবার। দিন দশেক আগে শেষ হওয়া নিউজিল্যান্ডের মাটিতে দুই টেস্টের সিরিজে এই ছিল ভারতের পারফরম্যান্সের হালচাল।

বলতে গেলে এই সিরিজের পর ভারতের টেস্ট দল নিয়ে হায়হায় রবই পড়ে গেছে। বিশেষ করে বিদেশের মাটিতে ভারতের পারফরম্যান্স পড়েছে আতশি কাঁচের নিচে। সিরিজজুড়ে ব্যর্থ বিরাট কোহলিকেও পড়তে হয়েছে প্রশ্নের মুখে। অথচ এত কিছুর পরও ব্রায়ান লারার ভাবনায় কোনো পার্থক্য হচ্ছে না। ওয়েস্ট ইন্ডিজ কিংবদন্তির চোখে, ভারতই এখনো বিদেশের মাটিতে টেস্টে সবচেয়ে ভালো দল। নিউজিল্যান্ড সফরে ভারতের এমন নাজেহাল অবস্থা লারার চোখে ‘স্বাভাবিক নয়।’

‘আমার মনে হয়, প্রায় দশ বছর ধরে ভারত বিদেশের মাটিতে খুব ভালো করছে। নিউজিল্যান্ডে যেটা হয়েছে সেটা অস্বাভাবিক কিছুই। বেশ কিছুদিন ধরে এত বেশি ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি খেলার পর ভারতের বাইরে কোথাও টেস্ট খেলতে হওয়াটা ওদের জন্য কঠিনই ছিল। তবে আমার এখনো মনে হয়, ভারত এখনো বিদেশের মাটিতে বিশ্বের সেরা’—ক্রিকইনফোতে বলেছেন লারা।

শুধু নিউজিল্যান্ড সফর ছাড়িয়ে একটু পেছনে গিয়ে বিদেশের মাটিতে টেস্টে ভারতের রেকর্ড অবশ্য লারার কথায় অনেকটাই সায় দেবে হয়তো। সর্বশেষ ১২ মাসে বিদেশের মাটিতে ৪ টেস্টে ভারতের জয়-হার সমান দুটি করে। সর্বশেষ দুই বছরে ১৩ টেস্ট জয় ৫টি, হার ৭টিতে। আর সর্বশেষ ৫ বছরে ২৭ টেস্টে ১৩ জয়, ১০ হার।

কিন্তু ভারত ছাড়িয়ে সবগুলো দলের সর্বশেষ দশ বছরের পরিসংখ্যান কী বলে? নতুন দুই সদস্য আফগানিস্তান আর আয়ারল্যান্ডকে হিসেবের বাইরে রাখলে এ সময়ে সবচেয়ে কম টেস্ট খেলেছে জিম্বাবুয়ে—১১টি। এরপরই বাংলাদেশ, ২৩টি। আর সবচেয়ে বেশি টেস্ট খেলেছে ভারত, ৫৭টি। দুইয়ে ইংল্যান্ড, ৫৪টি। ৫০-এর বেশি টেস্ট এই দশ বছরে খেলেছে আর শুধু অস্ট্রেলিয়াই (৫১টি)।

ব্রায়ান লারা। ছবি: এএফপি
ব্রায়ান লারা। ছবি: এএফপি

সব দল মিলিয়ে গত দশ বছরে বিদেশের মাটিতে টেস্ট জয়ের হারে (অন্তত দশ টেস্ট খেলেছে এমন দলগুলোর মধ্যে) অবশ্য ভারত আছে পাঁচ নম্বরে। ৫৭ টেস্টের ১৭টি জিতেছে, হেরেছে ২৭টি। জয়ের হার ০.২০ শতাংশ। অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকা—এই চার দলই ভারতের ওপরে। অস্ট্রেলিয়া ৫১ টেস্টে জিতেছে ১৯টি, হেরেছে ২৫টি। ইংল্যান্ড ৫৪ টেস্টে জিতেছে ১৯টি, হেরেছে ২৪টি। পাকিস্তান ৪৬ টেস্টে জিতেছে ১৬টি, হেরেছে ২৬টি। দক্ষিণ আফ্রিকার ৩৬ টেস্টে জয়-হার সমান ১২টি করে।

তবে দশ বছর থেকে কমিয়ে হিসেবটা সর্বশেষ পাঁচ বছরে করলে লারার কথাই ঠিক প্রমাণিত হয়। এ সময়ে বিদেশে টেস্ট জয়ের হারে (অন্তত দশ টেস্ট খেলেছে এমন দলের মধ্যে) ভারতই সবার ওপরে। ২৭ টেস্টে জিতেছে ১৩টি, হেরেছে ১০টি। দুইয়ে অস্ট্রেলিয়া, ২৭ টেস্টে জিতেছে ১১টি, হেরেছে ১৪টি।

তবে শুধু টেস্ট নয়, লারা কথা বলেছেন অক্টোবরে অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হতে যাওয়া টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ নিয়েও। সেখানে তিনটি দলকে এগিয়ে রাখছেন উইন্ডিজ কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান, ‘দল হিসেবে আমি তো অবশ্যই চাইব ওয়েস্ট ইন্ডিজ শেষ পর্যন্ত যাক, শিরোপা জিতুক। ভারত তাদের লিগের (আইপিএল) মাধ্যমে অনেক আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার তৈরি করছে, প্রত্যেক খেলোয়াড়ের উন্নতি হচ্ছে অনেক। যেমন কেএল রাহুল বিশ্বে আমার সবচেয়ে পছন্দের খেলোয়াড়। ওর খেলা দেখতে বেশ ভালো লাগে। ভারত আমার চোখে টুর্নামেন্টের বড় একটা শক্তি।’

আর অন্য দলটি কোনটি? স্বাগতিকদের কীভাবে ভোলেন লারা! বললেন, ‘অস্ট্রেলিয়া, নিজেদের মাটিতে...অন্য কারও জন্য মোটেও সহজ হবে না টুর্নামেন্টটা। অস্ট্রেলিয়া অবশ্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ আর ভারতকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকবে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সবাইকে নিয়েই দুশ্চিন্তায় থাকবে, ওদের অধারাবাহিকতা এত বেশি! সব মিলিয়ে বিশ্বকাপটা দারুণই হবে।’