অন্যকে নিয়ে হেসে নিজেই হাসির পাত্র নেইমার-এমবাপ্পে

হরলান্ডকে নকল করে উদযাপনের ভঙ্গির ছবি ইনস্টাগ্রামেও দিয়েছেন নেইমার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
হরলান্ডকে নকল করে উদযাপনের ভঙ্গির ছবি ইনস্টাগ্রামেও দিয়েছেন নেইমার। ছবি: ইনস্টাগ্রাম।
>প্যারিসের দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে পরশু দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর ‘ধ্যানে’র ভঙ্গিতে উদ্‌যাপন করেছেন নেইমার

বুক থেকে যেন একটা পাথর নেমে গেছে পিএসজি সমর্থকদের। তিন বছর ধরে চ্যাম্পিয়নস লিগে শেষ ষোলোতেই আটকা পড়ছিল দলটা, নেইমার-এমবাপ্পেকে নিয়েও গত দুই মৌসুমে ভাগ্য বদলানো যায়নি। অবশ্য গত দুই মৌসুমে শেষ ষোলোতে নেইমারকে চোটের কারণে সেভাবে খেলাতেই পারেনি পিএসজি। এবার নেইমার খেলেছেন, পিএসজিও শেষ ষোলোর বাধা পেরিয়ে উঠে গেছে শেষ আটে।

কিন্তু সে পথে একটা বিতর্কেও নাম লিখিয়েছেন নেইমাররা। বরুসিয়া ডর্টমুন্ডের মাঠে প্রথম লেগে ২-১ গোলে হেরে এলেও পরশু নিজেদের মাঠে দ্বিতীয় লেগে ২-০ গোলে জিতে শেষ আটে গেছে পিএসজি। দুই লেগ মিলিয়ে প্যারিসের ক্লাবটির জয় ৩-২ গোলে, দুই লেগেই একটি করে গোল নেইমারের। তা প্যারিসের দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে পরশু দলকে এগিয়ে দেওয়ার পর ‘ধ্যানে’র ভঙ্গিতে উদ্‌যাপন করেছেন নেইমার। ম্যাচের পর পুরো দল মিলে একই ভঙ্গিতে ছবি তুলেছেন, নেইমার আবার নিজের উদ্‌যাপনের ছবি ইনস্টাগ্রামেও দিয়েছেন।

বিতর্ক সেটি নিয়েই। ডর্টমুন্ডের স্ট্রাইকার আর্লিং ব্রট হরলান্ডকে খোঁচাতেই অমন উদ্‌যাপন করেছেন নেইমার। কিন্তু এখন শোনা যাচ্ছে, হরলান্ডের যে পোস্টের কারণে এমন খোঁচানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নেইমার ও তাঁর সতীর্থরা, সেই পোস্টটি আসলে হরলান্ড করেনইনি। পোস্টটি নকল বা ‘ফেইক’ ছিল!

নেইমাররা যা করেছেন, সেটিই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেক নিন্দা কুড়িয়েছে। গত জানুয়ারিতে ডর্টমুন্ডে যোগ দেওয়ার পর থেকেই আলো ছড়াতে থাকা হরলান্ড গোলের পর সাধারণত এই ধ্যানের ভঙ্গিতে উদ্‌যাপন করেন। তা ১৯ বছর বয়সী এই নরওয়েইজিয়ান স্ট্রাইকারকে পিএসজির সবাই মিলে যেভাবে খোঁচা মেরেছেন, হাসির পাত্র বানাতে চেয়েছেন, সেটিই পরশু ম্যাচের পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সমালোচনা কুড়িয়েছে।

হরলান্ডের ‘ধ্যানে’র ভঙ্গি নকল করলেন পিএসজি খেলোয়াড়েরা। ছবি: পিএসজির টুইটার
হরলান্ডের ‘ধ্যানে’র ভঙ্গি নকল করলেন পিএসজি খেলোয়াড়েরা। ছবি: পিএসজির টুইটার

কিন্তু এখন তো নিজেরাই উল্টো হাসির পাত্র বনে যাচ্ছেন নেইমাররা! কীভাবে? পরশু পিএসজির মাঠে দ্বিতীয় লেগের আগে হরলান্ডের একটা ছবি ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটার-ফেসবুকে। সামাজিক যোগাযোগের আরেক মাধ্যম স্ন্যাপচ্যাটে নাকি হরলান্ড ‘প্যারিস’ লেখা, আইফেল টাওয়ার আঁকা একটা টি-শার্ট পরে ছবি দিয়েছেন। যেটির ক্যাপশানে লেখা, ‘আমার শহর, তোমাদের নয়।’ অর্থাৎ, পিএসজির শহরে এসে পিএসজির ওপরে দাদাগিরির চেষ্টা আর কি!

নেইমাররা সে কারণেই হরলান্ডকে ‘উচিত শিক্ষা’ দিতে অমন উদ্‌যাপন করেছেন। তারওপর আগের লেগে ডর্টমুন্ডের দুটি গোলই করেছেন হরলান্ড। খোঁচা যে নেইমাররা তাঁকেই মেরেছেন, আর ওই পোস্টের কারণেই মেরেছেন, তা পরিষ্কার হয়তো ইনস্টাগ্রামে নিজের উদ্‌যাপনের ছবিতে নেইমারের দেওয়া ক্যাপশনে। ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড সেখানে লিখেছেন, ‘আমাদের শহর, তোমার নয়।’ এমবাপ্পে আবার ম্যাচের পর ড্রেসিংরুমে খেলোয়াড়দের ‘ধ্যানে’র ভঙ্গির ভিডিও দিয়েছেন ইনস্টাগ্রামে।

খোঁচাখুঁচি নিয়েই সমালোচনা হয়েছে অনেক। সাবেক ইংলিশ স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার এমবাপ্পের ভিডিও দেখে টুইট করেছেন, ‘খুবই মানহীন একটা কাজ!’ কিন্তু শুধু অতটুকু পর্যন্তই ব্যাপারটা থাকলেও হয়তো এত কথা হতো না। হরলান্ডকে নেইমারদের এভাবে খোঁচা মারা কারও পছন্দ না হতেই পারে, আবার অনেকে খোঁচাটাকে খেলার অংশ হিসেবে নিয়ে বিনোদনও হয়তো পেয়েছেন। কিন্তু ঝামেলা বেঁধেছে অন্য একটা খবরে। ইউরোপের অনেক সংবাদমাধ্যমের ‘অনুসন্ধানী’ খবর, হরলান্ডের স্ন্যাপচ্যাট একাউন্টই নেই!

অর্থাৎ, হরলান্ডের যে পোস্টটা নেইমারদের খোঁচা মারার কারণ, সেটি হরলান্ড করেনইনি। হরলান্ডের ছবিটা নকল নয়, কিন্তু স্ন্যাপচ্যাটে যে পিএসজিকে নেইমারদের নয়, তাঁর শহর বলে দাবি জানিয়ে ক্যাপশানটি লিখেছেন, সেটি হরলান্ড লেখেনইনি! এই খবরের পর এখন উল্টো নেইমারদের নিয়েই হাসাহাসি হচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। ইএসপিএনের ফুটবল লেখক টম উইলিয়ামসের টুইট, ‘যে ছবিটা দেখে পরিষ্কার বোঝা যায় এটি আর্লিং হরলান্ডের নকল স্ন্যাপচ্যাট একাউন্ট থেকে নেওয়া ছবি, সেটিকে পিএসজি সমর্থকেরা—আর নেইমারও—নিজেদের খোঁচা মারার কারণ হিসেবে ব্যবহার করছে।’ জুলিয়া নামে একজন টুইটারে লিখেছেন, ‘নেইমার-এমবাপ্পের মতো খেলোয়াড়েরা হরলান্ডকে নিয়ে যা করেছে, সেটা খুবই ছোট মনের পরিচয়। তারওপর হরলান্ডের পোস্টটাও নকল!’