১০২ বছর আগে মহামারির তোয়াক্কা করেনি বার্সা

করোনাভাইরাস সতর্কতায় সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে বার্সেলোনা। ছবি: বার্সেলোনা টুইটার পেজ
করোনাভাইরাস সতর্কতায় সব কার্যক্রম বন্ধ রেখেছে বার্সেলোনা। ছবি: বার্সেলোনা টুইটার পেজ
>করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে ক্লাবের সব কার্যক্রম স্থগিত রেখেছে বার্সেলোনা। ১০২ বছর আগে স্প্যানিশ ফ্লু-তে ঠিক উল্টো পথে হেঁটেছিল কাতালান ক্লাবটি

করোনাভাইরাস বিশ্বে মহামারি হয়ে ওঠায় থেমে যাচ্ছে ফুটবল। স্থগিত হচ্ছে একের পর এক টুর্নামেন্ট। সিরি আ, লা লিগা, ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ ইতিমধ্যেই থেমেছে। ক্লাবগুলোও ভীষণ সতর্ক। সংক্রমণ এড়াতে বিধিনিষেধ ও নানা নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে। বার্সেলোনা সভাপতি হোসে মারিয়া বার্তোমেউ যেমন কাল ক্লাবের সকল কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিত ঘোষণা করেছেন। এর আগেই লা লিগা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে রয়্যাল স্প্যানিশ ফেডারেশন (আরএফইএফ)।

এক শতাব্দীর কিছু সময় আগেও ঠিক উল্টো ঘটনা দেখেছে ফুটবল। ভয়ংকর স্প্যানিশ ‘ফ্লু’ মহামারি আকার ধারণ করলে খেলা স্থগিত রেখেছিল স্প্যানিশ ফুটবল ফেডারেশন। কিন্তু ফেডারেশনের নির্দেশকে কাঁচকলা দেখানোর স্পর্ধা দেখিয়েছিলেন বার্সা সভাপতি হুয়ান গ্যাম্পার।

সে এক ভয়াবহ সময়ের কথা। ইনফ্লুয়েঞ্জা মহামারিতে—স্প্যানিশ ফ্লু নামে যেটি পরিচিতি পেয়েছিল—বিশ্বজুড়ে মারা গিয়েছিল প্রায় ৫ কোটি মানুষ। সংক্রমিত হয়েছিল তখন গোটা বিশ্বের ২৭ শতাংশ মানুষের মধ্যে (৫০০ মিলিয়ন)। এই ফ্লু-র উৎপত্তি কোথায় হয়েছিল তা নিয়ে মতবিরোধ আছে। অনেকের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের কানসাস, ফ্রান্সে ব্রিটেনের একটি সামরিক ছাউনি, চীনের উত্তরাঞ্চল কিংবা স্পেন থেকে এ মহামারির উৎপত্তি। ১৯১৮-র জানুয়ারি থেকে ১৯২০-এর ডিসেম্বর পর্যন্ত মহামারির আকার ধারণ করেছে এই স্প্যানিশ ফ্লু। কিন্তু এর মধ্যেই চলছিল কাতালান চ্যাম্পিয়নশিপ। কাতালুনিয়া অঞ্চলের এ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপ গোটা স্পেনেই প্রথম ফুটবল লিগ।

স্প্যানিশ ফ্লু মারাত্মক আকার ধারণ করায় তার ছাপ পড়েছিল ক্রীড়াঙ্গনেও। জনসমাবেশ ঘটে এমন সব ধরনের খেলাধুলা ইউরোপে বাতিল কিংবা স্থগিত রাখা হয়েছিল। ইংল্যান্ডে ফুটবল লিগ ও এফএ কাপ এ সময় মাঠে গড়ায়নি। যুক্তরাষ্ট্রের পরিস্থিতি ছিল ভয়াবহ। ফিলাডেলফিয়ায় প্রায় সব ধরনের খেলা বাতিল করা হয়েছিল। নানা গুরুত্বপূর্ণ শহরে বাতিল করা হয় কলেজ ফুটবল। সংক্রমণে বেশ কিছু খেলোয়াড় মারা যান মেজর লিগ বাস্কেটবলে। কিংবদন্তি বেব রুথ ফ্লু-তে সংক্রমিত হলেও সে যাত্রায় বেঁচে যান। আইস হকিতে স্ট্যানলি কাপ ঠিকমতো না গড়ানোয় ঘোষণা করা হয়নি চ্যাম্পিয়ন দল। এ ছাড়া বাতিল করা হয়েছিল হেভিওয়েট বক্সিং লড়াইও।

স্প্যানিশ ফ্লু-তেও খেলা চলেছে স্পেনে। তখনকার সংবাদমাধ্যমে এর চিত্র। ছবি: মার্কা
স্প্যানিশ ফ্লু-তেও খেলা চলেছে স্পেনে। তখনকার সংবাদমাধ্যমে এর চিত্র। ছবি: মার্কা

স্পেনেও জনসমাবেশ নিষিদ্ধ করার পাশাপাশি বেশ কিছু খেলাধুলা স্থগিত কিংবা বাতিল করা হয়েছিল। ১৯১৮ সালে অক্টোবরে বার্সেলোনা শহরের পরিস্থিতি কত ভয়াবহ ছিল জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম ‘মার্কা’। ১৭ অক্টোবর বার্সেলোনায় মৃতের সংখ্যা ছিল ২০৭, পরের দিন তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮৯। এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হওয়ায় আঞ্চলিক স্বাস্থ্য বোর্ডের অনুরোধে কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন বার্সেলোনার তৎকালীন গভর্নর, ‘ফুটবল ম্যাচ স্থগিত; থিয়েটার, সিনেমা ও অন্যান্য জনসমাগমের জায়গা বন্ধ থাকবে। জনসাধারণের সুস্থতা নিশ্চিতেই এ সিদ্ধান্ত।’

কিন্তু কাতালান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নেওয়া বার্সেলোনা, এসপানিওল, বাদালোনার মতো দলগুলো বেঁকে বসে। তাদের কাছে এ সিদ্ধান্ত ছিল অবিচারসুলভ। যুক্তি ছিল, ফুটবল তো বাইরে খোলা মাঠে খেলা হয়। এ ভাবনা থেকে ফেডারেশনের বিপক্ষে একটি কমিশন গঠন করেন গ্যাম্পার। সুইস এই ফুটবলপ্রেমী ও অ্যাথলেট বার্সেলোনা ক্লাবের গোড়াপত্তনে অগ্রণী ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৯১৮ সালে সে সময়ে গ্যাম্পার তখন তৃতীয় মেয়াদে বার্সা সভাপতি। গ্যাম্পার যুক্তি দেখান, টেনিস, অ্যাথলেটিকস ও অন্যান্য খেলা স্থগিত না করে শুধু ফুটবল কেন?

স্পেনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গ্যাম্পারের কমিশনের যুক্তি শেষ পর্যন্ত মেনে নিয়েছিল। ফ্লু-র মধ্যেই পূর্বনির্ধারিত সূচি অনুযায়ী খেলতে নেমেছিল বার্সেলোনা।