ব্রিটিশ 'জাদুর কাঠি' পেয়েছে মোহামেডান

মোহামেডান কোচ শন লেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
মোহামেডান কোচ শন লেন। প্রথম আলো ফাইল ছবি
>

ব্রিটিশ কোচ শন লেনের হাত ধরে মোহামেডান যে ধীরে ধীরে বদলে যাচ্ছে, সেটা তাদের সাফল্যের পরিসংখ্যানেই বোঝা যায়

মোহামেডান ক্লাবে কান পাতলেই শোনা যায়, ‘এই কোচের হাতে জাদুর কাঠি আছে। এই কোচের ছোঁয়ায় বদলে গেছে মোহামেডান।’

সাদা-কালো শিবিরের ফুটবলার, কর্মকর্তা, সমর্থকদের সবাই যেন কোচ শন লেনের প্রশংসায় পঞ্চমুখ। কেনই বা প্রশংসা করবেন না ? যে মোহামেডান পেশাদার ফুটবল লিগ শুরুর পর গত এগারোটি আসরে একবারও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি, ধুঁকতে থাকা মোহামেডানের রুগ্‌ণ-কঙ্কাল চেহারা দেখে সমর্থকেরা শুধুই রাগে-ক্ষোভে ফুঁসেছে। সেই মোহামেডানই যেন ধীরে ধীরে বদলে যেতে শুরু করেছে শন লেনের হাত ধরে।

বারো পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের পয়েন্ট তালিকায় শেখ জামাল ধানমন্ডির সঙ্গে যৌথভাবে শীর্ষে আছে মোহামেডান। ছয় ম্যাচের চারটিতেই জয়, এর মধ্যে কুমিল্লায় শহীদ ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে আগের ম্যাচেরই হারিয়েছে প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকে। ব্রিটিশ কোচ শন লেনের হাত ধরে ধীরে ধীরে যে মোহামেডান বদলে যাচ্ছে, সেটা তাদের সাফল্যের পরিসংখ্যানেই বোঝা যায়।

গত মৌসুমে মোহামেডান প্রথম লেগে ১২ ম্যাচে পেয়েছিল মাত্র ৬ পয়েন্ট। এরপর দ্বিতীয় পর্বে দায়িত্ব নেন শন লেন। তিনি দায়িত্ব নেওয়ার পর দ্বিতীয় পর্বে ১২ ম্যাচে মোহামেডান ৫টিতে জেতে। ৪টিতে ড্র করে। আর ৩ ম্যাচে হার। শন লেনের অধীনে এ পর্যন্ত মোহামেডান প্রিমিয়ার লিগ ও ফেডারেশন কাপ মিলিয়ে খেলেছে ২৩ ম্যাচ। এর মধ্যে ১১টিতে জয় পেয়েছে মোহামেডান। ৬টি ম্যাচ ড্র করেছে। হেরেছে ৬ ম্যাচ। আর শন লেনের দায়িত্ব নেওয়ার আগে গত মৌসুমে প্রথম পর্বে মোহামেডান মাত্র ৮ গোল দেয় প্রতিপক্ষের জালে। কিন্তু দ্বিতীয় পর্বে ১২ ম্যাচে মোহামেডান করেছিল ২৩ গোল। এবার লিগের ৬ ম্যাচেই মোহামেডান করেছে ৮ গোল।

বদলে যাওয়া এই মোহামেডানের সাফল্যের পেছনের রহস্য কি? কাল বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সন্ধ্যায় উত্তর বারিধারার বিপক্ষে ৪-১ গোলে জয়ের পর ৫৫ বছর বয়সী কোচ হাসতে হাসতে বলছিলেন, ‘ আমি এই দলে বেশ কিছু ভালো ফুটবলার পেয়েছি, যাদের আছে প্রচুর আত্মবিশ্বাস। যারা নিজেদের ওপর আস্থা রাখে। ওরা অনুশীলনে প্রচণ্ড পরিশ্রম করে। আমরা দিনকে দিন আরও ভালো খেলতে চাই। এ জন্য ছেলেরা কঠোর পরিশ্রম করছে। তা ছাড়া একেকটা ম্যাচ জিতলে ওদের আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায় দ্বিগুণ। আর এটাই হলো সাফল্যের রহস্য।’

লিগে মোহামেডানকে জেতানোয় বড় অবদান আছে মালির ফরোয়ার্ড সোলেমান দিয়াবাতের। কখনো নিজে গোল করেন। কখনো গোল করাতে সাহায্য করেন। পাঁচ ম্যাচে এরই মধ্যে দুই গোল করেছেন। শনের মুখে তাই দিয়াবাতের প্রশংসা, ‘সোলেমান এই লিগের অন্যতম সেরা ফুটবলার। লিগে ও অসাধারণ খেলছে। আমার চোখে সোলেমান এই দেশে খেলা ফুটবলারদের মধ্যে সেরা স্ট্রাইকার।’

লিগের সবে শুরু। কোন দল চ্যাম্পিয়ন হবে সেটা এখনই বলার সময় আসেনি। কিন্তু মোহামেডানকে এরই মধ্যে লিগ চ্যাম্পিয়ন করার স্বপ্ন দেখানো শুরু করে দিয়েছেন, ‘সমর্থকেরা দেখছে একটার পর একটা ম্যাচ জিতছে মোহামেডান। এটা সম্ভব করেছি। এত আগে বলা কঠিন হবে যে মোহামেডানই চ্যাম্পিয়ন হবে। আমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। প্রতিটি দলেরই স্বপ্ন থাকে শিরোপা জেতার। আমিও বড় স্বপ্ন দেখি মোহামেডানকে শিরোপা উপহার দেব। ফুটবলে যে কোনো কিছু সম্ভব। ছেলেরা যদি চেষ্টা করে এবং কঠোর পরিশ্রম করে তাহলে কে জানে এই স্বপ্ন সত্যিও হতে পারে।’

মোহামেডানের ডাগআউট দারুণ উপভোগ করছেন শন লেন। স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন। এ জন্যই এমন সাফল্য আসছে। কালও যেমন বলছিলেন, ‘আমি এখানকার কাজটা দারুণ উপভোগ করছি। দারুণ উপভোগ করি বাংলাদেশের প্রতিটি দিন।’

উপভোগের মূল মন্ত্র জেনে গেছেন। এখন শন লেনের একটাই স্বপ্ন, মোহামেডানকে অধরা লিগ শিরোপা উপহার দেওয়া।