বসুন্ধরা কিংসের 'কোটি' টাকার রক্ষণের এমন হাল

তপু বর্মণ(বাঁয়ে), ইয়াসিন খান, সুশান্ত ত্রিপুরাদের(ডানে নিচে) নিয়ে গড়া রক্ষণের হাল ভালো না এবার। ফাইল ছবি
তপু বর্মণ(বাঁয়ে), ইয়াসিন খান, সুশান্ত ত্রিপুরাদের(ডানে নিচে) নিয়ে গড়া রক্ষণের হাল ভালো না এবার। ফাইল ছবি

বসুন্ধরা কিংসের রক্ষণ যেন লখিন্দরের বাসরঘর! যতই আঁটসাঁট করে রাখা হোক না কেন, কোনো একটা ফাঁক গলে বল জালে ঢুকবেই। অথচ এই বসুন্ধরা কিংস গত মৌসুমের চেয়ে এবার রক্ষণভাগে জোর দিয়েছে সবচেয়ে বেশি। দেশসেরা দুই সেন্টারব্যাক তপু বর্মণ, ইয়াসিন খানের সঙ্গে আছেন জাতীয় দলের ডিফেন্ডার বিশ্বনাথ ঘোষ, সুশান্ত ত্রিপুরা। আছেন তাজিকিস্তান জাতীয় দলের ডিফেন্ডার আখতাম নাজারভ, ফিনল্যান্ডপ্রবাসী বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ডিফেন্ডার কাজী তারিক রায়হান।

এমনিতেই প্রিমিয়ার লিগে দল গড়তে কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা খরচ করেছে বসুন্ধরা কিংস। শুধু রক্ষণভাগের ফুটবলারদের পারিশ্রমিক শুনলেই চোখ কপালে ওঠার জোগাড়। দেশের ঘরোয়া ফুটবলের প্রেক্ষাপটে বেশি পারিশ্রমিক নিয়ে বসুন্ধরা কিংসে যাওয়া ফুটবলাররা কতটা নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিতে পারছেন, সেটা নিয়ে তাই প্রশ্ন ওঠা শুরু হয়েছে এরই মধ্যে। বিশেষ করে গত পরশু নীলফামারীতে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ৩-০ গোলে এগিয়ে গিয়ে যেভাবে ৪ গোল হজম করেছে, সেটা নিয়ে হতাশ কোচ অস্কার ব্রুজোন। ডিফেন্ডারদের ওপর আস্থা পুরোপুরিই হারিয়ে ফেলেছেন।

বসুন্ধরা কিংসের ডিফেন্ডার তপু, ইয়াসিন, বিশ্বনাথ ও সুশান্ত মিলে গড়ে ৫০ লাখ টাকা করে পারিশ্রমিক পাচ্ছেন। এর মানে শুধু স্থানীয় ডিফেন্ডারদের পেছনে দুই কোটি টাকা খরচ করছে বসুন্ধরা কিংস। আর নাজারভের মাসিক চুক্তি আট হাজার ইউএস ডলার, কাজী তারিক পাচ্ছেন প্রায় চার হাজার ডলার করে। কিন্তু কোটি কোটি টাকার রক্ষণে বসুন্ধরা কিংসের প্রাপ্তি একেবারেই হতাশার।

একটা পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট হয়ে যাবে, এই মৌসুমে বসুন্ধরার রক্ষণ কতটা বালির বাঁধের মতো ভেঙে পড়েছে। এই মৌসুমে এই পর্যন্ত ফেডারেশন কাপ, প্রিমিয়ার লিগ ও এএফসি কাপে সব মিলিয়ে বসুন্ধরা কিংস খেলেছে ১২টি ম্যাচ। এর মধ্যে শুধু দুই ম্যাচে বসুন্ধরার জালে কোনো গোল ঢোকেনি। ফেডারেশন কাপে ‘ক্লিন শিট’ রাখতে পেরেছে পুলিশের বিপক্ষে। ওই ম্যাচে বসুন্ধরা জেতে ৩-০ গোলে। আর প্রিমিয়ার লিগের প্রথম ম্যাচে উত্তর বারিধারাকে হারিয়েছিল ১-০ ব্যবধানে।

এ ছাড়া লিগের ম্যাচে পুলিশের সঙ্গে করে ১-১ গোলে ড্র। ব্রাদার্সের বিপক্ষে ৩ গোল দিয়ে হজম করেছে ২ গোল। রহমতগঞ্জের বিপক্ষে ২ গোল দিয়ে বসুন্ধরা কিংস খেয়েছে ১ গোল। আর মোহামেডানের বিপক্ষে তো কোনো গোল করতে পারেইনি, উল্টো হেরেছে ১-০ গোলে। এরপর কাল চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে ৩ গোলে এগিয়ে অবিশ্বাস্যভাবে হেরেছে ৪ গোল খেয়ে।


এএফসি কাপে একচেটিয়া খেলেছে মালদ্বীপের টিসি স্পোর্টসের বিপক্ষে। হার্নান বার্কোস হ্যাটট্রিকসহ ৪ গোল করেন। দানিয়েল কলিনদ্রেস করেন ১ গোল। কিন্তু তারপরও এক গোল হজম করে বসুন্ধরা কিংস। কোচ অস্কার ব্রুজোনের কণ্ঠে তাই হতাশা, ‘আমাদের সবচেয়ে বড় সমস্যা রক্ষণ। বেশির ভাগ ম্যাচেই স্কোর ক্লিন শিট রাখা যাচ্ছে না।’

পরশুর হারেও ডিফেন্ডারদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ কোচ। বসুন্ধরা কিংসের টেকনিক্যাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিকাল ডিরেক্টর বায়েজীদ আলম যোবায়ের বলছিলেন, ‘আমরা তো ভেবেই নিয়েছিলাম ম্যাচটি জিতে গেছি। কিন্তু ডিফেন্ডাররা এমন ভুল করবে ভাবিনি। কোথায় ছিল তপু, কোথায় ইয়াসিন কিছুই বুঝলাম না। আসলে ওরা হয়তো অতি আত্মবিশ্বাসী হয়ে পড়েছিল। এ জন্যই এমন হার আমাদের।’

লিগের সবে শুরু। এ নিয়ে অবশ্য নড়েচড়ে বসেছে বসুন্ধরা কিংস কর্মকর্তারা। আজ চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচের ভিডিও পর্যালোচনা করে কার কোথায় ভুল সেটা দেখা হবে। প্রিমিয়ার লিগ চ্যাম্পিয়নদের রক্ষণের এমন হাল হলে, লিগ শিরোপা ধরে রাখাটা যে বেশ কষ্টসাধ্যই হবে তা কাউকে না বললেই চলবে।