খরচ বাঁচাতে নির্বাচকদের মধ্যে 'বৈষম্য' করছে বিসিসিআই

সুনীল যোশি, যখন বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচ ছিলেন। এখন বিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাচক। প্রথম আলো ফাইল ছবি
সুনীল যোশি, যখন বাংলাদেশ দলের স্পিন কোচ ছিলেন। এখন বিসিসিআইয়ের প্রধান নির্বাচক। প্রথম আলো ফাইল ছবি

বিসিসিআই বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ক্রিকেট বোর্ড। কিন্তু তাদের সিদ্ধান্তটি চমকে দেওয়ার মতো।

এখন থেকে ঘরোয়া ফ্লাইটে শুধু সিনিয়র ও জুনিয়র দলের প্রধান নির্বাচকেরাই উড়োজাহাজের বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন। তাঁদের বাকি সহকর্মীদের ভ্রমণ করতে হবে তুলনামূলক নিচু স্তরের ইকোনমি ক্লাসে। অর্থাৎ সুনীল যোশি এখন থেকে ঘরোয়া ফ্লাইটে উড়োজাহাজের বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণ করবেন। এমএসকে প্রসাদের জায়গায় কিছুদিন আগে ভারতের জাতীয় নির্বাচক প্যানেলের প্রধান হয়েছেন সাবেক এ স্পিনার। তার আগে বাংলাদেশ দলের স্পিন বোলিং কোচের দায়িত্বও পালন করেছেন বাঁহাতি এ স্পিনার।

তবে ভারতের বাইরে উড়োজাহাজে সাত ঘণ্টার বেশি সময় লাগে এমন জায়গায় যাওয়ার ক্ষেত্রে এই বাধ্যবাধকতা নেই। সংক্ষিপ্ত সময়ের ভ্রমণে বিশেষ করে দেশের মধ্যে কোথাও বিমানে গেলে অন্যান্য নির্বাচকদের সঙ্গে বিসিসিআইয়ের জেনারেল ম্যানেজারেরাও ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণ করবেন, জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম। ২০১৩ সালে নিয়ম পাল্টে সব ধরনের ভ্রমণে সব জায়গায় এত দিন বিজনেস ক্লাসে উঠেছেন নির্বাচকেরা।

ভারতের সংবাদমাধ্যম ‘ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানিয়েছে, বিসিসিআই সভাপতি সৌরভ গাঙ্গুলী ও সচিব জয় সাহা মনে করেন বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণে বাধ্যবাধকতা জারি করে বেশ ভালো অঙ্কের অর্থ বাঁচানো সম্ভব। আর তাই বিসিসিআইয়ের জেনারেল ম্যানেজার ও ভারতের সাবেক উইকেটরক্ষক সাবা করিমকে এখন থেকে ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণ করতে হবে।

২০১৩ সালের আগে বিসিসিআইয়ের সব নির্বাচক ইকোনমি ক্লাসে ভ্রমণ করতেন। তখন নির্বাচকদের মধ্যে কয়েকজন অভিযোগ করেছিলেন, দেশের বাইরে জাতীয় দলের খেলোয়াড়দের সঙ্গে ভ্রমণে বিষয়টি তাঁদের কাছে অবিচার বলে মনে হয়। এ নিয়ে বিসিসিআইয়ের এক সাবেক নির্বাচক বলেন, ‘দেখতে ভালো লাগত না। তারা (খেলোয়াড়েরা) বিজনেস ক্লাসে বসতেন, আমরা তাদের আসনের পাশ দিয়ে ইকোনমি ক্লাসে গিয়ে বসতাম। বিসিসিআইকে অনুরোধ করার পর নির্বাচকদের বিজনেস ক্লাসে তুলে আনা হয়।’

বিসিসিআইয়ে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত প্রশাসক কমিটি (সিওএ) ২০১৭ সালে ঘরোয়া ফ্লাইটেও খেলোয়াড়দের বিজনেস ক্লাসে ভ্রমণের অনুমতি দেয়। তখন খেলোয়াড়েরা অভিযোগ করেছিলেন, ইকোনমি ক্লাসে ভক্ত-সমর্থক পরিবেষ্টিত থাকায় নিজের ‘প্রাইভেসি’ বলে কিছু থাকত না। সৌরভ গাঙ্গুলী গত বছরের অক্টোবরে বিসিসিআই সভাপতি হওয়ার পর আরও একটি নিয়ম জারি করেন। মুম্বাইয়ে বার্ষিক অধিবেশনে শুধু পরিচালক পর্যায়ের পরিষদ ব্যতীত আর কেউ ভ্রমণ-ভাতা (টিএ/ডিএ) পাবে না।

২০১৮ সালের আগস্টে বিসিসিআই অফিশিয়ালদের পেছনে খরচের অর্ধ-বার্ষিকী হিসেবের কাগজ দেখার সুযোগ হয়েছিল ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের। সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, সেই নথি-পত্রে দেখা গেছে বোর্ডের প্রধান তিন কর্মকর্তার পেছনে অফিশিয়াল নানা বিষয়ে ১ কোটি রুপি খরচ হয়েছে। এর মধ্যে অর্ধেকই খরচ হয়েছে টিএ/ডিএ খাতে। বিদেশে ভ্রমণে তখন দৈনিক ৭৫০ ডলার করে পেতেন তারা। আর দেশের মধ্যে ২০ হাজার রুপি। পাঁচ তারা হোটেলে থাকা, যাতায়াতের জন্য গাড়ি এবং প্রথম শ্রেণির বিমান টিকিটের হিসেব এর বাইরে। বোর্ডের অফিশিয়ালদের সঙ্গে নির্বাহী সহকারী বিদেশে ভ্রমণ করলে তিনি দৈনিক পেতেন ৩৫০ ডলার। ওই বছরই রাশিয়ায় ফুটবল বিশ্বকাপে কাউন্সিল সদস্যদের দৈনিক ১৫০ ডলার করে দিয়েছে ফুটবল সংস্থা ফিফা।